স্টাফ রিপোর্টার ::
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সুনামগঞ্জের ৮টি উপজেলার ১৫টি এলাকাকে রেডজোন করা হয়েছে। সোমবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন সিভিল সার্জন ডা. মো. শামস উদ্দিন। আজ মঙ্গলবার থেকে আগামী তিন সপ্তাহর জন্য এসকল এলাকাগুলোতে কঠোরভাবে রেডজোনিং কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানান তিনি। এছাড়া আজ থেকে মানুষকে ঘরমুখী করতে কঠোরভাবে মাঠে অবস্থান করবে পুলিশ। এ সময় বিনাকারণে কেউ ঘর থেকে বের হলে তাকে আটক করা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান।
এদিকে জেলায় সোমবার নতুন করে আরো ৮৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৬৪৬ জন। সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানাযায়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পিসিআর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষায় সুনামগঞ্জের আরও ৭৯ জনের শনাক্ত হয়েছেন। শাবির ল্যাবে মোট ৩৭৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৭৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়। এছাড়া সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ ল্যাবে নমুনা পরীক্ষায় সুনামগঞ্জের আরো চার জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। সবমিলিয়ে জেলায় নতুন করে ৮৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় ১৬, ছাতক ১৭, জামালগঞ্জ ৭, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ ২৪, শাল্লা ৭, দিরাই ৩, বিশ্বম্ভরপুর ৪, দোয়ারাবাজারের ৫ জন রয়েছেন।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী প্রতি এলাকায় এক লক্ষে ৬০ জন করোনা আক্রান্ত রোগী থাকলে সেই সকল এলাকাকে রেডজোনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য বলা হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সুনামগঞ্জের ১১ টি উপজেলার মধ্যে ৮টি উপজেলার ১৫টি এলাকাকে রেডজোনে আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। যার মধ্যে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় পুরো সুনামগঞ্জ পৌর এলাকা, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায় পূর্ব পাগলা, পশ্চিম পাগলা ও জয়কলস ইউনিয়ন, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার পলাশ ইউনিয়ন, তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়ন, জামালগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়ন, দোয়ারাবাজার উপজেলার বাংলাবাজার, দোয়ারাবাজার সদর ও মান্নারগাঁও ইউনিয়ন, ছাতক উপজেলার ছাতক পৌরসভা, জাউয়া বাজার ও কালারুকা ইউনিয়ন এবং জগন্নাথপুর উপজেলার জগন্নাথপুর পৌরসভা ও সৈয়দপুর ইউনিয়নকে রেডজোন করা হয়েছে।
অন্যদিকে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়ন, জামালগঞ্জ উপজেলার সাচনাবাজার ইউনিয়ন, দোয়ারাবাজার উপজেলার পান্ডারগাঁও ও নরসিংপুর ইউনিয়ন, ছাতক উপজেলার নোয়ারাই ইউনিয়ন এবং জগন্নাথপুর উপজেলার কলকলিয়া ইউনিয়নকে হলুদ জোন করা হয়েছে।
অপরদিকে, রেড জোন করা এলাকাগুলোতে বিকেল ৪টা পর্যন্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান ছাড়া সকল প্রকার দোকান ও গণপরিবহন বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়েছে। শুধুমাত্র ওষুধের দোকানগুলো সার্বক্ষণিক খোলা রাখা যাবে। এছাড়া রেডজোন করা এলাকাগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে জরুরি প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়া যাবে তা না হলে বিনাকারণে কেউ ঘর থেকে বের হলে তাকে আটক করা হবে বলে জানানো হয়।
ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. গোলাম কবির বলেন, ছাতকে করোনা আক্রান্ত রোগী সংখ্যা অনেকাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী ছাতক পৌরসভা, নোয়ারাই, কালারুকা, গোবিন্দগঞ্জ এবং জাউয়াবাজার ইউনিয়নকে রেডজোন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ রেড জোন মঙ্গলবার থেকে কার্যকর হবে।
সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত বলেন, আমরা ইতিমধ্যে প্রচুর পরিমাণে ত্রাণ বিতরণ করেছি। এই সংকটকালে পৌরসভা খোলা আছে এবং যথাসাধ্যভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকল প্রকার নাগরিক সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হবে। এছাড়া আমি সকল পৌরবাসীকে অনুরোধ করবো সবাই রেডজোনের নিয়মকানুন মানবেন।
পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, রেড জোনের মধ্যে যদি কেউ পাড়ায় আড্ডায় দেয় পুলিশ দেখতে পায় তাহলে সাথে সাথে আটক করা হবে। একই সাথে নীরবতার ফাঁকে যাতে চুরি না বাড়ে সেদিকে খেয়াল রাখবে পুলিশ। জরুরি প্রয়োজনে যে কেউ স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাইরে যেতে পারবেন সে বিষয়ে আমাদের আপত্তি নেই।
সিভিল সার্জন ডা. শামস উদ্দিন বলেন, সবাই সচেতন হওয়ার কোনও বিকল্প নেই। রেডজোন চিহ্নিত এলাকায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।