1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০১:০৮ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

দ্রোহের আওয়াজ তুলো সুরের ঝংকারে : দেবাশীষ তালুকদার শুভ্র

  • আপডেট সময় শনিবার, ২৩ মে, ২০২০

মাটির ঘরের মেঝে ফেটে গেলেই মহিলারা গোবর আর মাটির কাঁদা দিয়ে লেপে দেয় যেনো ফাটলটা ঢেকে যায়। দেখেছেন নিশ্চই! আমাদের সমাজ ব্যবস্থাটা ঠিক এই হালতেই চলছে। কিছু অঘটন ঘটলেই উপরে উপরে লেপে দেয়ার চেষ্টা চলে প্রাণপণে। এই লেপালেপির কার্যক্রম ফেসবুকে আর অনলাইন পত্রিকায় ছেপে দিয়ে মহানুভবতা প্রচার করতে করতে অনেকেই হাঁপিয়ে উঠেছেন। নিজের প্রচারণায় হাঁপিয়ে ওঠা ব্যক্তিরা আবার মাঝে মাঝে প্রচারণা থামিয়ে দিয়ে অন্যের প্রচারণার সমালোচনায়ও মেতে ওঠেন জনপ্রিয়তার নতুন স্বাদ নেবার আশায়।
এইযে বাউলশিল্পী রণেশ ঠাকুরের গানের ঘরে আগুন দিলো বা লাগলো। গায়েনের এই দুঃখে সহমর্মি হয়ে কেউ করতাল, কেউ ডুগডুগি আবার কেউবা দোতারার তার কিনে দিবেন গায়েনকে। ফলাও প্রচার হবে ফেসবুকে। দাতার অনুসারীরা হাজারে হাজারে শেয়ার দিবেন সেই দানকার্যের ছবি বা খবর। অন্যদিকে পৃথিবীর নানান প্রান্ত থেকে গানেরঘর পুনঃনির্মাণের জন্য ঢেউটিন পাঠানো শুরু হয়েছে। দেখা যাবে এত টিন জড়ো হয়েছে যে গায়েনের নিজের একটা টিনের দোকান হয়ে গেছে। এবারে তিনি পারলে গান বাদ দিয়ে টিনের দোকান নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিবেন। অবশ্য এই ব্যবস্থা যদি উনার হয়ে যায় খারাপ হয় না। ৪০ বছরের গানের খাতা হারানোর ব্যথা, সন্তান হারানোর ব্যথার থেকে কোন মাত্রায় কম হওয়ার কথা নয়। এই ব্যথা নিয়ে গান গাওয়া ছেড়ে দিয়ে টিনের ব্যবসা করাই মনে হয় বাকি জীবনের জন্য মঙ্গলজনক।
দেশের বা লোকের দুর্ভাগ্যকে কাজে লাগিয়ে পকেট ভরাট করা, নিজের মহানুভবতার পরিচয় দৃঢ় করার মানসিকতা যে শুধুই দেশীয় সংস্কৃতি একথাও ঠিক না। এই ধারণা পুরো মানব জাতির ডিএনএ’র সাথে মিশে আছে। কোথাও কম কোথাও বেশি। এবার এসব ছেড়ে মূল কথায় আসি।
বাউলের গানের ঘরে আগুন। এই আগুন কি শুধুই রণেশ ঠাকুরের মনের ক্ষত তৈরি করলো? এই ক্ষত তো তাঁর একার না। এই ক্ষত তো এই ঘুনে ধরা সমাজের বহু পুরাতন ক্ষত। প্রায় শত বছরের পুরাতন এই ক্ষত। রণেশ ঠাকুরের গানের ঘরের আগুন সেই পুরাতন ক্ষতে খুঁচা দিয়ে যন্ত্রণাটাকে চাগিয়ে দিলো মাত্র।
আমরা ভাবছি ফেইসবুকে স্ট্যাটাস আর রকমারি পোস্ট দিয়ে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তুলেছি। নানা প্রান্ত থেকে রণেশ ঠাকুরের জন্য সাহায্য আসছে। প্রশাসন দাঁড়িয়েছে পাশে। তদন্ত হবে, দোষীকে চিরুনিতল্লাশী দিয়ে খুঁজে বের করা হবে। যে আগুন দিলো তার শাস্তি হবে। ন্যায়বিচার পাবেন রণেশ ঠাকুর।
কিন্তু যে আগুন দিলো তার কি সত্যিই শাস্তি হবে? অথবা যে আগুন দিলো সে কি শুধু একাই এই আগুন লাগানোর মানসিকতা রাখে?
যে এই মাটির দেশের মানুষ তার হৃদয়ে গানের ঘরে আগুন দেয়ার মানসিকতার জন্ম হলো কিভাবে?
এসব প্রশ্ন কি হৃদয়ের গভীরে হা ডু ডু খেলেনা?
এই একজনের শাস্তি হলেও কি ক্ষত শুকিয়ে যাবে? মসৃণ হয়ে যাবে ফেটে যাওয়া মাটির মেঝে?
এই দেশে গানের ঘরে আগুন লাগার খুশিতে হাততালি দেয়া মানুষের সংখ্যা জানেন? তার সংখ্যা কম হবে না অবশ্যই।
এই যে এই ঘটনায় খুশিতে হাততালি দেয়ার মানসিকতা এই মানসিকতাকে কয় বান টিন দিয়ে চাপা দিতে পারবো আমরা?
যতদিন এই শত বছরের পুরাতন ক্ষত স্থায়ীভাবে সারানো যাবে না, যতদিন শতভাগ মানুষের হাতে দোতারা – একতারা তুলে দেয়া যাবে না ততদিন রণেশ ঠাকুর, আব্দুল করিমদের গানের ঘরে আগুন জ্বলতেই থাকবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com