1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৫২ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

নাইকোর বিরুদ্ধে জয় : বাংলাদেশ পেতে পারে ৮০০০ কোটি টাকা

  • আপডেট সময় রবিবার, ৩ মে, ২০২০

সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
কানাডার কোম্পানি নাইকোর অদক্ষতার কারণে ২০০৫ সালে দুবার দোয়ারাবাজারের টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্রে বিস্ফোরণ ঘটে। টেংরাটিলা বিস্ফোরণের জন্য নাইকো দায়ী এ জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এতে ক্ষতিপূরণ হিসেবে আট হাজার কোটি টাকা পেতে পারে বাংলাদেশ।
ব্রিটেনের লন্ডনে বিনিয়োগ বিরোধ নিষ্পত্তিসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সালিসি আদালত (ইকসিড) এমন রায় দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। রোববার এক ভিডিও সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তিনি এ কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে নসরুল হামিদ অভিযোগ করেন, নাইকোর সঙ্গে রাষ্ট্রীয় তেল গ্যাস কোম্পানি বাপেক্সের সঙ্গে চুক্তি করতে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব ঘুষ নিয়েছিলেন। এ ঘুষ প্রক্রিয়ার সঙ্গে তারেক রহমান, তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ গিয়াস আল মামুন যুক্ত ছিলেন। বাপেক্সের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদনে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদায় জিয়ার সম্পর্ক রয়েছে। তবে এটি ফৌজদারি অপরাধ হওয়ায় ইকসিডের এখতিয়ার নেই এ বিষয়ে কোনো আদেশ দেওয়া। দেশের আদালতে নাইকো দুর্নীতি মামলা চলবে। দেশের আদালতে নাইকো দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের বিচার হবে বলেও তিনি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে নসরুল হামিদ বলেন, ২০০৩ সালে নাইকো-বাপেক্স যৌথ উদ্যোগে একটি চুক্তির মাধ্যমে ছাতকের টেংরাটিলায় গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কূপ খনন শুরু হলে গ্যাসক্ষেত্রটিতে মারাত্মক বিস্ফোরণ হয়। বিস্ফোরণের ফলে গ্যাসক্ষেত্র এবং তার আশপাশের এলাকায় পরিবেশ ও জনজীবনের ব্যাপক ক্ষতি করে। প্রথম বিস্ফোরণ ঘটে ২০০৫ সালের ৭ জানুয়ারি। দ্বিতীয় বিস্ফোরণটি ঘটে ওই বছরের ২৪ জুন। তিনি বলেন, নাইকো ২০১০ সালে টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্র বিস্ফোরণের ঘটনায় তারা দায়ী নয় মর্মে ঘোষণা চেয়ে ইকসিডে একটি সালিসি মোকদ্দমা দায়ের করে। ২০১৬ সালে বাপেক্স আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের দিয়ে গঠিত একটি কমিটির মাধ্যমে একটি সমীক্ষা পরিচালনা করেন। এতে নাইকোর কাছে বাপেক্স ১১৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং বাংলাদেশ সরকার ৮৯৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে ইকসিডে নালিশ করা হয়। ইকসিড ট্রাইব্যুনাল ২০০৫ সনের বিস্ফোরণের জন্য যৌথ উদ্যোগ চুক্তির অধীন শর্তসমূহ ভঙ্গের জন্য নাইকোকে দায়ী করে তাদের অভিযুক্ত করে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি এক যুগান্তকারী রায় প্রদান করেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, নাইকো দক্ষতার সঙ্গে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে এবং পেট্রোলিয়াম শিল্পের আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যতা বজায় রাখতে ব্যর্থ হওয়ার কারণেই এই বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটে বলে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল রায় দিয়েছেন। নাইকোকে অভিযুক্ত করে ওই ঘটনা থেকে সরাসরি উদ্ভূত যাবতীয় ক্ষয়ক্ষতির জন্য বাপেক্সকে ক্ষতিপূরণ দিতে ট্রাইব্যুনাল আদেশ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে এ ঘটনায় ছাতক গ্যাসক্ষেত্র থেকে নির্গত গ্যাসের জন্যও বাপেক্সকে ক্ষতিপূরণ দিতে নাইকোর প্রতি ট্রাইব্যুনাল নির্দেশ প্রদান করেছেন। পরিবেশসহ অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আদালতে উত্থাপনের র্নিদেশ দিয়েছেন ইকসিড।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত ২৮ ফ্রেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ বিরোধ নিষ্পত্তি আদালত ইকসিড রায় ঘোষণা করেন। এটি বাংলাদেশকে জানানো হয়েছে গত মার্চের প্রথম দিকে। করোনা শুরু হওয়ার কারণে তখন এটি বলা হয়নি।
ভিডিও সংবাদ সম্মেলনে যোগ দিয়ে বক্তব্য রাখেন জ্বালানি বিভাগের জৌষ্ট সচিব আনিসুর রহমান, মামলার আইনজীবি মইন গনি। এ ছাড়া পেট্রোবাংলা, বাপেক্স ও জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তারা ভিডিও সংবাদ সম্মেলনে যোগ দেন।
হারতে হারতে বাংলাদেশের জয় যেভাবে
নাইকো ইকসিডে ২০১০ সালের ১২ এপ্রিল একটি ও ১৬ জুন দুটি মামলা দায়ের করে। মামলা দুটিতে নাইকো ইকসিডের কাছে দুটি বিষয়ে আদেশ চায়। এক. ছাতকের টেংরাটিলায় বিস্ফোরণের দায় তাদের ওপর বর্তায় কি না এবং বাংলাদেশ ও পেট্রোবাংলা এই ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারে কি না। দুই. ফেনী ক্ষেত্র থেকে সরবরাহ করা গ্যাসের দাম পরিশোধ পেট্রোবাংলা বন্ধ রাখতে পারে কি না।
এই মামলার শুনানির এক পর্যায়ে, ২০১৪ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নাইকোর গ্যাসের দাম পরিশোধসংক্রান্ত মামলাটির রায় ঘোষণা করেন ইকসিড। সেখানে পেট্রোবাংলাকে ২৭ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেওযা হয়।
বাংলাদেশের পক্ষে মামলা পরিচালনায় ত্রুটির কারণে নাইকোর কাছ থেকে বিস্ফোরণের কারণে যে পরিমাণ গ্যাস পুড়ে গেছে তার দাম পাওয়ার বিষয়টি ফিকে হয়ে আসছিল। এর মধ্যে নাইকো টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্রে কূপ খননের জন্য নিরাপত্তা জামানত হিসেবে রাখা টাকা ব্যাংক থেকে তুলে নেয়। কুমিল্লা অঞ্চল নিয়ে গঠিত স্থলভাগের ৯ নম্বর তেল-গ্যাস ব্লকে তাদের নাইকোর যে শেয়ার ছিল তাও বিক্রি করার চেষ্টা করে।
এই অবস্থায় সরকার নাইকোর সঙ্গে চুক্তিটিকে অবৈধ আখ্যায়িত করে সেটি বাতিলের জন্য নতুন মামলা করার উদ্যোগ নেয় ইকসিডে। এ জন্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদসহ উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল চারবার লন্ডন সফর করে। এর আগে এই মামলার আইনজীবী ছিলেন আইনজীবী তৌফিক নেওয়াজ, তিনি শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির স্বামী। তাঁকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে তরুণ আইনজীবী মইন গনিকে মামলার আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এ ছাড়া মামলায় নিয়োগ করা হয় যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ফলি হক ‘ল’ ফার্মকে। প্রসঙ্গত, বাপেক্সের আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার কামাল হোসেন। এ সরকার ক্ষমতায় আসার পর কামাল হোসেনকে বাপেক্সর আইনজীবী থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। নাইকোর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন রোকনউদ্দিন মাহমুদ। ২০১৫ সালের পর থেকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নতুন করে তথ্য–উপাত্ত উপস্থাপন শুরু হয়।
ইকসিডের মামলাপ্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত এমন একজন ব্যক্তি গণমাধ্যমকে বলেছেন, ইকসিডে মামলা পরিচালনায় ত্রুটির জন্য সরকার প্রায় হারতে বসেছিল। মামলার কাগজপত্র পর্যালোচনা করলে এটি পরিষ্কার যে বাংলাদেশ পক্ষ থেকে সঠিকভাবে মামলাটি আদালতে উপস্থাপন ও পরিচালনা করা হয়নি। পরোক্ষভাবে বাংলাদেশের স্বার্থের বিপক্ষেও অনেক কথা বলা হয়েছে, সেসবের সবকিছুর রেকর্ডও ইকসিডে আছে। এর সঙ্গে সরকারেরই কিছু লোক জড়িত। অন্যদিকে ফেনী গ্যাসক্ষেত্রের গ্যাসের দাম পরিশোধে দেওয়া ইকসিডের রায় বাস্তবায়নের জন্য সরকারকে তিন মাস সময় বেঁধে দেয়।
এ রকম পরিস্থিতিতে ২০১৬ সালে সরকারি তৎপরতার বাইরে উচ্চ আদালতে নাইকোর বিরুদ্ধে মামলা করেন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম। আদালতের কাছে তিনি দুটি প্রতিকার চান। একটি হলো, নাইকোর সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা ও বিস্ফোরণের কারণে ক্ষতিপূরণ আদায়। আদালত নাইকোর সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার র্নিদেশ দেন এবং বাংলাদেশের কাছে নাইকোর বিক্রির অর্থ ২৭ মিলিয়ন ডলার না দিতে সরকারকে নির্দেশ দেন। থেমে যায় নাইকোর গ্যাস বিল দেওয়ার প্রক্রিয়া।
নাইকো কেলেঙ্ককারিতে কারা জড়িত :
সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্বালানি বিভাগ টেংরাটিলা, ফেনী ও কামতা গ্যাসক্ষেত্রকে ‘প্রান্তিক’ (যে ক্ষেত্র থেকে বাণিজ্যিকভাবে গ্যাস উত্তোলনের সম্ভাবনা শেষ হয়ে গেছে) দেখিয়ে সেখান থেকে গ্যাস তোলার জন্য ১৯৯৮ সালে নাইকো-বাপেক্স যৌথ উদ্যোগের জন্য প্রস্তাব দেয়। বিনা দরপত্রে করা নাইকোর এ প্রস্তাব তখনকার আওয়ামী লীগ সরকার মেনে নেয়নি। ওই প্রস্তাবের ভিত্তিতে নাইকো বিএনপির আমলে ২০০৩ সালে চুক্তি করে। এরপর ২০০৫ সালে দুবার টেংরাটিলা কূপ খনন করতে গিয়ে গ্যাসক্ষেত্রে বিস্ফোরণ ঘটায়। এর ফলে ওই গ্যাসক্ষেত্র ও সন্নিহিত এলাকায় পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
এ নিয়ে বাংলাদেশের আদালতে, কানাডার আদালতে ও ইকসিডে মামলা হয়। কানাডার আদালতে প্রমাণিত হয়েছে যে বাপেক্স- নাইকো চুক্তি সম্পাদনে দুর্নীতি হয়েছিল। কানাডার আদালতে সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেনকে ২০০৫ সালে একটি দামি গাড়ি ও ভ্রমণব্যয়ের পাঁচ হাজার ডলার ঘুষ দেওয়ায় দণ্ডিত হয়েছে নাইকো।
বাণিজ্যিক স্বার্থে বিদেশে ঘুষ দেওয়া প্রতিরোধসংক্রান্ত কানাডার আইনে সে দেশের একটি আদালতে ২০০৯ সাল থেকে এই মামলা চলছিল। নাইকো দোষ স্বীকার করায় ২০১১ সালে ওই আদালত দণ্ড হিসেবে ৯৪ লাখ ৯৯ হাজার কানাডীয় ডলার জরিমানা করে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে খালেদা জিয়া গ্রেপ্তার হওয়ার পর ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তেজগাঁও থানায় এ নাইকো দুর্নীতি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০০৮ সালের ৫ মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগপত্র দেয় দুদক।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনটি গ্যাসক্ষেত্র পরিত্যক্ত দেখিয়ে কানাডীয় কোম্পানি নাইকোর হাতে ‘তুলে দেওয়ার’ মাধ্যমে আসামিরা রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার ক্ষতি করেছেন।
বিগত আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন দুটি সরকারের আমলেই এ কাজ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলে। আর ওই সময় জ্বালানিসচিব ছিলেন বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। চুক্তি সম্পাদনে শেখ হাসিনার ভূমিকা না থাকায় আদালত এ মামলায় থেকে তাঁকে অব্যাহতি দিয়েছে।
খালেদা জিয়া ছাড়া এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, বাপেক্সের সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, বাগেরহাটের সাবেক সাংসদ এম এ এইচ সেলিম এবং নাইকোর দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ।
যেভাবে ঘুষ গেছে তাঁদের পকেটে
নাইকো ইকসিডের আদালতে স্বীকার করেছে যে, টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্র পেতে তারা গিয়াস আল মামুন, কাশেম শরীফ ও সেলিম ভূইয়াকে অর্থ দিয়েছে। ছাতক গ্যাসক্ষেত্রটিকে একটি পুরানো গ্যাসক্ষেত্র বা প্রান্তিক গ্যাসক্ষেত্র হিসাবে দেখানোর দাবি করে নাইকো। অথচ এ গ্যাসক্ষেত্রটিতে কখনো গ্যাস উত্তোলনই করা হয়নি। এদেশের প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ, আমলা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নাইকো যোগাযোগ করে। এ পরিপেক্ষিতে নাইকোর সঙ্গে স্থানীয় এজেন্ট হিসেবে তারা কাশেম শরীফ ও ঢাকা ক্লাবের তৎকালিন চেয়ারম্যান সেলিম ভূইয়ার নেতৃত্বাধীন ‘স্টার্টাম’ নামের একটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি সই করে। এ কোম্পানিটি সুইজারল্যান্ডে নিবন্ধীত। চুক্তি হয় ৪ মিলিয়ন ডলার দেওয়া হবে যদি তারা ছাতককে প্রান্তিক গ্যাসক্ষেত্র হিসেবে দেখিয়ে বাপেক্সের সঙ্গে যৌথ অংশিদারিত্ব চুক্তি সই করিয়ে দিতে পারে।
ইকসিডের আদালতে দেওয়া স্বীকারুক্তি অনুযায়ী, নাইকোর সঙ্গে স্টার্টামের এ চুক্তিটি সই হয় ১৯৯৮ সালে অক্টোবরে। ২০০৩ সালের অক্টোবরে চুক্তিটি ফের মেয়াদ বাড়ানো হয় ঠিক বাপেক্সের সঙ্গে যৌথ অংশিদারিত্ব চুক্তির ১৫ দিন আগে। বাপেক্সের সঙ্গে চুক্তির পর প্রথম দফায় নাইকো ২০ হাজার ডলার দেয় স্টার্টটামের অ্যাকাউন্টে। এভাবে ক্রমন্বয়ে চুক্তিকৃত অর্থ তারা পরিশোধ করে। চুক্তির একটি অর্থ নাইকো অস্ট্রিয়ান প্রবাসী জাহাঙ্গীর ইলাহী চৌধুরীকে দিয়েছেন। তিনি সম্পর্কে তৌফিক ইলাহীর আপন ভাই।
নাইকোর দেওয়া অর্থে গিয়াস আল মামুন ঢাকায় একটি বিদেশি ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলেন। সেই অ্যাকাউন্ট থেকে দুটি কার্ড (ডুয়েল কার্ড) নেন। একটি নিজের ব্যবহার করেন। অন্যটি ব্যবহার করতেন তারেক রহমান। এ কার্ডের মাধ্যমে তারেক রহমান সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড সহ বহু দেশে কেনাকাটা ও বিভিন্ন ব্যয়ে খরচ করেছেন বলে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই ও কানাডার পুলিশের তদন্তে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ঢাকার একটি আদালতে দুদকের করা নাইকো দুর্নীতির মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
নাইকোর অর্থ স্থগিত, ক্ষতিপূরণ দাবি ও সম্পদ বাজেয়াপ্তের মামলার বাদী অধ্যাপক এম শামসুল আলম রায়ের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বলেন, ‘এটি একটি বড় বিজয় হিসেবে দেখছি। বহুজাতিক কোম্পানি অপরাধ করে পার পাবে না—এ রায়ের মধ্যে তা নিশ্চিত হয়েছে। এ সরকারের আমলে নাইকো দুর্নীতির মতো ঘটনা ঘটেছে গাজপ্রম ও সান্তোষ চুক্তির ক্ষেত্রে। সেখানেও বাপেক্সকে অংশিদার করা হয়েছে। এর জন্য যেসব আমলা ও প্রভাবশালীরা দায়ী, সরকারের উচিত তাঁদের বিচার করা।’ -প্রথম আলো

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com