মাসুম হেলাল ::
গত ৬ এপ্রিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেওয়া তথ্যমতে, বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে অন্তত ৮০ জন প্রবাসী বা বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রেই মৃত বাংলাদেশির সংখ্যা ৬৩জন ছাড়িয়েছে। প্রতিদিন বাড়ছে এই সংখ্যা।
করোনাভাইরাসে ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা এমন উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে প্রবাসীদের জন্য দেশে থাকা স্বজনদের উৎকণ্ঠা বাড়ছে দিন দিন।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, জার্মানি, গ্রিস, পর্তুগালসহ উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রয়েছেন সুনামগঞ্জের বিপুলসংখ্যক মানুষ। সেই দেশগুলো এখন করোনাভাইরাসের কারণে এখন পরিণত হয়েছে মৃত্যুপুরীতে।
উল্লেখ্য, জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির তথ্যমতে, দুনিয়াজুড়ে ১৫ লাখ ২১ হাজার ৮০৯ জন মানুষ করোনভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে ৮৮ হাজার ৬৫৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ৩ লাখ ৩২ হাজার ১৭৯ জন।
করোনাভাইরাসে যুক্তরাষ্ট্রে ৪ লাখ ৩৫ হাজার, ১৬০ আক্রান্ত ১৪ হাজার ৭৯৭ জনের মৃত্যু, স্পেনে ১ লাখ ৩৫ হাজার ১৬০ আক্রান্ত ১৪ হাজার ৭৯২ জনের মৃত্যু, ইতালিতে ১ লাখ ১৩ হাজার ২৯৬ জন আক্রান্ত ১৭ হাজার ৬৬৯ জানের মৃত্যু, জার্মানিতে ১ লাখ ১৩ হাজার ২৯৬ জন আক্রান্ত ২ হাজার ৩৪৯ জনের মৃত্যু, ফ্রান্সে ১ লাখ ১২ হাজার ৯৫০ জন আক্রান্ত ১০ হাজার ৮৬৯ জনের মৃত্যু এবং যুক্তরাজ্যে ৬০ হাজার ৭৩৩ জন আক্রান্ত ৭ হাজার ৯৭ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে ওয়ার্ল্ডোমিটার।
প্রসঙ্গত, মধ্যপ্রাচ্য, আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সুনামগঞ্জের বহু মানুষ স্থায়ী ও অস্থায়ীভাবে বসবাস করে আসছেন। প্রবাসে কষ্টার্জিত অর্থের একটি বড় অংশ দেশের স্বজনদের পাঠান তারা। তাদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রা দেশের অর্থনীতিতে প্রাণ সঞ্চার করে থাকে।
জানা যায়, চীনের উহানে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর ক্রমেই সেটা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। চীনের পর যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের যেসব দেশে বিভিন্ন দেশে ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়ে প্রাণঘাতি এই ভাইরাস সেইসব দেশে রয়েছেন বিপুলসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি। তাদের একটি বড় অংশ সুনামগঞ্জের।
প্রবাস থেকে একের পর এক আক্রান্ত হওয়া ও মৃত্যুর খবর আসতে থাকায় দেশে থাকা স্বজনদের মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। প্রবাসীদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করে তাদের সাবধান ও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।
জনৈক ইতালি প্রবাসীর চাচতো ভাই মো. নূর জানান, ইতালিতে অবস্থানরত তার চাচতো ভাই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর স্বজনরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। কয়েদিন পর সেই ব্যক্তি সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরে আসলে স্বস্তি কিছুটা ফিরে পান তারা।
এমএম উদ্দিন নামের এক যুক্তরাজ্য প্রবাসীর স্বজন বলেন, আমার বোন স্বামী-সন্তান নিয়ে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। সেখানে প্রতিদিনই বাড়তে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। এমন পরিস্থিতিতে তাদের জন্য আমরা প্রচণ্ডভাবে উদ্বিগ্ন।
তিনি আরো বলেন, বোন ও তার পরিবারের স্বজনদের মঙ্গল কামনা করে খতমে কোরআন ও মোনাজাত পড়িয়েছি। সব সময় মহান আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করছি, তারা যেন সুস্থ থাকে।