ব্রিটেনের রাজ পরিবারে অক্রমণ করেছে করোনা। প্রিন্স চার্লস করোনা আক্রান্ত। ৭১ বছর বয়সী চার্লসের শরীরে করোনার লক্ষণ দেখা দিয়েছে। করোনা নিয়ে কোন ভাল সংবাদ পাচ্ছিনা। মনখারাপ করা সংবাদ আসছে মিডিয়ায়। এতো নিরাপত্তায় থাকা ব্রিটিশ রাজপরিবারে করোনার আক্রমণ প্রমাণ করেছে মানুষ কত অসহায়। মানবজাতি জীবন সংকটে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী আজ (২৫ মার্চ) জাতির উদ্দেশ্যে বক্তব্য দিয়েছেন। জাতিকে সাহস দিয়েছেন। করোনার সাথে যুদ্বে বিজয়ী হতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বলেছেন।ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে। জাতিকে নির্দেশনা এবং সাহস দেয়ার জন্য।
এদিকে বিশ্বস্বাস্থ্য সেবায় প্রথমে থাকা ফ্রান্স, ইতালীতে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। অসহায় সেখানকার মানুষ এবং চিকিৎসকরা। চীনকে পেছনে ফেলে মৃত্যুর সংখ্যায় এগিয়ে স্পেন। উন্নত রাষ্ট্রগুলো সামাল দিতে পারছেনা এই বিশ্ব মহামারীকে। মানুষের মৃত্যুর মিছিলে বিশ্বজুড়ে বাতাস ভারী। ইতালীতে কবর দেয়ার স্থান সংকট দেখা দিচ্ছে। এতো মৃত্যু সইতে পারছেনা পৃথিবী। বিশ্বের দিকে তাকালে বাংলাদেশ এই মুহূর্তে বিপজ্জনক সময় অতিক্রম করছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতিকে নির্দেশনা দিয়েছেন তার ভাষণে। সঙ্গনিরোধ এবং গুজব না ছড়াতে বলেছেন। বলেছেন অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা। সাহস দিয়েছেন। সংবেদনশীল হতে বলেছেন। দ্রব্যমূল্য না বাড়াতে বলেছেন। নি¤œ আয়ের মানুষের সহায়তার নির্দেশনা দিয়েছেন। আহ্বান জানিয়েছেন বিত্তবানরা এগিয়ে আসার জন্য। আশাকরি মানুষ নির্দেশনা মেনে চলবে।
সংকটকাল পার করছি কেন? কারণ চীন, ইতালী, স্পেন, যুক্তরাজ্যের মত আক্রান্ত দেশগুলোর প্রতি একটু খেয়াল করেন। এসমস্ত দেশে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী পাওয়া থেকে পরবর্তী সময়গুলো বিবেচনায় নেন। প্রথমদিকে ৪জন, ১০জন এমন করে আক্রান্ত হচ্ছিলেন। দেশের মানুষেরাও তেমন গুরুত্ব দিচ্ছিলেন না। কিন্তু একমাস পর সেসব দেশে পরিস্থিতি হয় ভয়াবহ। সব নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। মৃত্যুর মিছিল আর আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে। যা অব্যাহত আছে। মৃত্যু সামাল দেয়া যাচ্ছে না। মৃত্যু কান্নায় পৃথিবীর বাতাস ভারী। অর্থাৎ আক্রান্ত সনাক্তের পর এসব দেশ রোগ ছড়ানো থামাতে পারেনি। মানুষে মানুষে যোগাযোগ হয়েছে। সব কিছুতেই স্বাভাবিক জীবন যাপন করেছে। ফলে একমাস পরে তার ভয়াবহ সংক্রমণ তারা প্রত্যক্ষ করেছে। পুরো বিশ্ব দেখছে মৃত্যুর ভয়াল রূপ। কান্না থামছে না। যুক্তরাষ্ট্রও আজ নাজুক পরিস্থিতিতে। অথচ যদি প্রথম সনাক্তের পর মানুষে মানুষে সামাজিক যোগাযোগ বন্ধ রাখা যেত পরিস্থিতি এমন হত না। চীন সেটা প্রমাণ করেছে। উহানে আক্রমণের পর তারা উহানকে বিচ্ছিন্ন করেছে দেশ থেকে। সেখানে কাউকে যেতে দেয়নি। বের হতে দেয়নি। হাসপাতাল বানিয়েছে। সেখানেই আক্রান্তদের চিকিৎসা দিয়েছে। সুফল পেয়েছে। সারাদেশে ছড়ায়নি। ইউরোপ, আমেরিকা শুরুতে সেটা করেনি। তার মাশুল দিচ্ছে জীবন দিয়ে। আমাদের দেশে আক্রমণ এসেছে বেশ দেরীতে। আমাদের সামনে তাদের থেকে অভিজ্ঞতা আসছে। ভারত সেই অভিজ্ঞতা থেকে প্রথমে জনকারফিউ পরে ২১ দিনের লকডাউন দিয়েছে। উদ্দেশ্য একটাই সামাজিক যোগাযোগ বন্ধ।
বাংলাদেশ। বিপদ কালীন সময় অতিক্রম করছে। বলার কারণ আমাদের দেশে ৮ই মার্চ প্রথম রোগী সনাক্ত হয়েছে। তারপর সব স্বাভাবিক চলেছে। গত ২৪ মার্চ থেকে সামাজিক যোগযোগ বন্ধের ব্যাবস্থা নেয়া হয়েছে। সেনাবাহিনী নামাতে হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ বন্ধে। কিন্তু ৮ মার্চ থেকে গণনা করলে বেশ সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে। আমাদের মানুষদের নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। সাধারণ মানুষ তো বটেই দায়িত্বশীলরাও মানেননি স্বাস্থ্য নির্দেশনা। এমনকি ইউনিয়নের উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে গ্রামে গ্রামে গিয়ে জনসভা করেছেন। নিজেদের প্রকাশ করতে।
ইতালীর ছোট শহর বারগামো ৯মার্চ চ্যাম্পিয়ান্সলীগের এক খেলা শেষে উৎসবে মেতেছিল। গ্যালারিভর্তি লোকের মাধ্যমে ছড়িয়েছে সংক্রমণ। ছোট শহরটিতে এখন কবরের জায়গা পেতে সমস্যা হচ্ছে। সেনাবাহিনী দাফনের কাজ করছে।
সরকার থেকে বলা হচ্ছে দেশে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৯ আর মৃতের সংখ্যা ৫ জন। আমরা জানিনা এর ভেতর সামাজিক যোগাযোগ আর জনসমাগম কতজনের ক্ষতি করেছে। বিদেশ থেকে এসে কোয়ারেন্টাইন অমান্য করা ব্যক্তিরা কি ক্ষতি করেছেন। ইউরোপের মত একমাস পরে আমরা ও সেই ভয়াবহ অবস্থার মুখোমুখি হব কি না জানিনা। যদিও আমরা কায়মন বাক্যে কামনা করি আমার দেশের মানুষ নিরাপদ থাকুক। ব্যাপক আক্রমণের শক্তি হারিয়ে করোনা বিদায় নিক বিশ্ব থেকে।
নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী মাইকেল লেভিটের কথা বিশ্বাস করতে চাই। আশা করতে চাই আমাদের ভয়াবহ আক্রমণের আগেই লেভিটের কথামত প্রাণঘাতী করোনা দুর্বল হোক। মহামারী সমাপ্তি ঘটুক। তবে সবাইকে বলি আল্লাহর দোহাই লাগে জনসমাগম করবেন না। দয়া করে স্বাস্থ্যবিধি মানুন। কিছুদিন অন্তত ঘরে থাকুন। দোহাই লাগে, নিজে ভাল থাকুন। সবাইকে বাঁচতে দিন। মঙ্গলবারতা পৌঁছে দিন প্রত্যেকে প্রত্যেককে।
[অ্যাড. পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ, সংসদ সদস্য, সুনামগঞ্জ-৪]