শহীদনূর আহমেদ ::
বিদেশফেরত নাগরিকদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। জনসুরক্ষায় এটি নিশ্চিতের জন্য প্রয়োজনে বল প্রয়োগও করা হচ্ছে। এরপরও সরকারের পরামর্শ উপেক্ষা করে হোম কোয়ারেন্টাইনে না থেকে সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছেন বিদেশফেরত ব্যক্তিরা। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে কভিড-১৯-এ সংক্রমণের ঝুঁকিও বেড়েছে বলে জানিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। প্রবাসীদের হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত না করা গেলে দেশের প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকাগুলোয় রোগটির বড় মাত্রায় প্রাদুর্ভাবের ঝুঁকি তৈরি হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাস মহামারি ঘোষণার মার্চ মাসের প্রথম ১৫ দিনে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ২২৮৮ জন সুনামগঞ্জে এসেছেন। তাদের মধ্যে ৯১ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রেখেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের নিয়মিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, এ পর্যন্ত ৯১জন প্রবাসীকে হোম কোয়ারেন্টিনের আওতায় আনা হয়েছে। সিভিল সার্জন ডা. শামস উদ্দিন জানান, বাকি প্রবাসীদের দ্রুতই হোম কোয়ারেন্টাইনে আনার চেষ্টা চলছে। প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকাসহ জেলার প্রতি ওয়ার্ড ইউনিয়নে কমিটি গঠন করে সন্ধান চালানো হচ্ছে। প্রবাসীদের পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এদিকে, জেলার প্রবাসী এলাকা করোনা ভাইরাস সংক্রমণে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। জেলার সদর উপজেলা, জগন্নাথপুর, ছাতক, দিরাই ও দোয়ারাবাজার উপজেলায় প্রবাসীর আগমন হয়েছে বেশি। করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় এসব প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকাকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। প্রবাসীদের হোম কোয়ারেন্টাইনে আওতায় আনতে বাধ্য করা হচ্ছে। যারা নির্দেশনা মানবে না তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানাযায়, ১ মার্চ থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত সুনামগঞ্জে এসেছেন ২২৮৮ জন প্রবাসী। যার মধ্যে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় ৪৩৯ জন, ছাতক উপজেলায় ৫৮৭ জন, জগন্নাথপুর উপজেলায় ৫১২ জন, দোয়ারাবাজার উপজেলায় ২১৬ জন, দিরাই উপজেলায় ১৭৯ জন সুনামগঞ্জে এসেছেন। এছাড়াও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় ৫৩ জন, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায় ২৫জন, শাল্লা উপজেলায় ২১ জন, তাহিরপুর উপজেলায় ৪৪ জন, জামালগঞ্জ উপজেলায় ৭৯ জন, ধর্মপাশায় উপজেলায় ৫৫ জন এবং মধ্যনগর থানায় ১৩জন প্রবাসী তাদের নিজ নিজ বাড়িতে এসেছেন। ১১ উপজেলায় প্রবাসীদের হোম কোয়ারেন্টিনের আওতায় আনতে উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে কমিটির মাধ্যমে সন্ধানসহ মাইকিং করে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। যারা কোয়ারেন্টিনের নিয়ম মানছেন না তাদের ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে জরিমানা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগ। প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের জন্য জেলা পুষ্টি গবেষণা কেন্দ্রকে সিলেকশন করা হয়েছে। প্রয়োজন হলে প্রবাসীদের সেখানে কোয়ারেন্টিনে রাখা হবে বলে জানানো হয়।
সিভিল সার্জন ডা. শামস উদ্দিন জানান, শুক্রবার সন্ধ্যায় সাড়ে ৭টা পর্যন্ত ৯১ জন প্রবাসীকে হোম কোয়ারেন্টিনের আওতায় আনা হয়েছে। প্রবাসীরা বিমানবন্দরে যে মোবাইল নাম্বার বা ঠিকানা দিয়ে এসেছেন তা অনুযায়ী তাদের খোঁজ করা হচ্ছে। উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ডে কমিটি করে সন্ধান চালানো হচ্ছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, দলীয় নেতৃবৃন্দ ও সচেতন মহলের সহযোগিতা নেয়া হচ্ছে। তথ্য চাওয়া হচ্ছে। যারা কোয়ারেন্টিনের নিয়ম মানবে না তাদের শাস্তি আওতায় আনা হবে। মাইকিং ও লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে জনসাধারণের মাধ্যমে করোনা মোকাবেলায় সচেতনতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। সংক্রমিত ব্যক্তিদের চিকিৎসা দিতে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের ১০০ শয্যা প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান তিনি।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, দেশে আসা প্রবাসীদের অনেকেই হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকছেন না। তাই আমরা তাদের খোঁজে সকল প্রবাসীদের নিবন্ধনের আওতায় নিয়ে আসছি। যারা হোম কোয়ারেন্টাইনের নিয়ম মানবেন না তাদেরকে সংক্রামক রোগ আইনের মাধ্যমে শাস্তি প্রদান করা হবে। এদিকে, করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে সুনামগঞ্জে বিয়েসহ সামাজিক ও ধর্মীয় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে প্রশাসন।