1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:১৯ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

এক অমীমাংসিত ‘মুলুকযাত্রার’ কাহিনী : পাভেল পার্থ

  • আপডেট সময় বুধবার, ৪ মার্চ, ২০২০

১৯২১ সনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে খুব গুরুত্বপূর্ণ। চলতি কায়দার ইতিহাস গ্রন্থনে বলা হয়, এই সনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১ জুলাই শিক্ষাকার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু চলতি কায়দার অধিপতি ইতিহাস রচনার বাইরে গিয়ে যদি আমরা একটু উঁকি দিই, দেখবো শুধু একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা মাত্র নয়। ওই সনে দেশের এক দীর্ঘ নদী মেঘনার বুকে রচিত হয়েছিল অগণিত চা-শ্রমিকের রক্তলাল আখ্যান। চা-শ্রমিক গণহত্যার ভেতর দিয়ে আরো পোক্ত হয়েছিল ব্রিটিশ উপনিবেশিক বাহাদুরি। বাংলাদেশের ইতিহাস, দলিল কি বয়ানে আমরা কখনোই সেই বিচারহীন গণহত্যার সূত্র দেখতে পাই না। অধিপতি ইতিহাসের সকল গলিঘুপচি কি অন্দর-বাহির থেকে নির্দয়ভাবে চা-শ্রমিকদের সেই রক্তের দাগ মুছে ফেলা হয়েছে। চলতি আলাপখানি ৯৪ বছর আগে সংঘটিত চা-শ্রমিক গণহত্যার সেই করুণ আখ্যানের ভেতর দিয়ে চা বাগানে চলমান জুলুমকে প্রশ্ন করতে চায়। ক্লান্তিনাশী পানীয়ের ভেতর রাষ্ট্র এবং এজেন্সির জিইয়ে রাখা রক্তলাল বিনাশকে প্রশ্ন করতে চায়।
১৯২১ সনে বর্তমান বাংলাদেশের সুরমা উপত্যকা বিশেষত সিলেট অঞ্চল এবং ভারতের বরাক-কাছাড় উপত্যকা মূলত: আসাম অঞ্চলের নিপীড়িত চা-শ্রমিকেরা ব্রিটিশ কোম্পানির উপনিবেশিক জুলুমের বিরুদ্ধে সংগঠিত করেছিল এক রক্তক্ষয়ী ‘মুলুকযাত্রা’। মুলুকযাত্রা মানে নিজের জন্মমাটি, নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার সংগ্রাম।
নীল, চা, তামাক আর হাইব্রিড ভুট্টা। বাংলাদেশে এই ফসলগুলির সাথে করপোরেট কো¤পানির সরাসরি নিয়ন্ত্রণ আর বাহাদুরি জড়িয়ে আছে। কারণ এ ফসলগুলিই কোম্পানির বাণিজ্যিক স্বার্থে চুক্তিবদ্ধ চাষের আওতাধীন। বিস্ময়করভাবে এ ফসলগুলি চাষ না করলেও বাংলাদেশের কোনোকিছুই যায় আসে না, কারণ বেঁচেবর্তে থাকবার জন্য এগুলির একটিও আবশ্যকীয় শস্যফসল নয়। কারণ এগুলি সরাসরি খাদ্য কি জীবনের অপরাপর চলমান উপযোগিতা তৈরি করে না। এসব ফসল জনগণ নয়, কোম্পানির। নীল চাষের সাথে জড়িত ছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। ফিনলে, ডানকান, ইস্পাহানি কি ইউনিলিভার চা-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করে। ব্রিটিশ-আমেরিকান টোবাকো কোম্পানির একতরফা নিয়ন্ত্রণে তামাক। মনস্যান্টো কি সিনজেনটা নিয়ন্ত্রণ করছে হাইব্রিড ভুট্টার বাজার। কোম্পানির অন্যায় জুলুমের বিরুদ্ধে নিম্নবর্গের নীলবিদ্রোহের ভেতর দিয়ে নীলচাষ বন্ধ হলেও চা-তামাক আর হাইব্রিড ভুট্টার করপোরেট বাণিজ্য বাহাদুরি থেকে বাংলাদেশের মুক্তি ঘটেনি। এখানে শ্রমশোষণ থেকে মজুরি বিতর্ক কি বৈশ্বিক বাজারের দেনদরবার এক চলমান তর্ক।
বলা হয় পঞ্চদশ কি ষোড়শ শতক পর্যন্ত চীন ছাড়া দুনিয়ার আর কোথাও চায়ের বাণিজ্যিক চল ছিল না। ১৬১০ থেকে ওলন্দাজ বণিকেরা চীন থেকে চা বাণিজ্য শুরু করে। ১৮৯৪-১৮৯৫ সনের চীন-জাপান যুদ্ধের ফলে ইউরোপের সাথে চীনের বাণিজ্যিক সম্পর্কের রূপ পাল্টালে ইউরোপ নিজেই চা চাষে উন্মত্ত হয়ে ওঠে। ১৮৩৫ সনে বিজ্ঞানীদের নিয়ে গঠিত রয়েল কমিশনের কাজ বর্তায় ভারতীয় অঞ্চলে চা চাষের উপযোগিতা যাচাই। কিন্তু এর আগেই এ অঞ্চলে চা গাছের সন্ধান পাওয়া যায়। সুরমা কি বরাক উপত্যকায় এ অঞ্চলের নিম্নবর্গের আবিষ্কারকে ব্রিটিশ উপনিবেশ নির্দয়ভাবে ধামাচাপা দিয়েই তাদের বাণিজ্য কারবার শুরু করে। ১৮৩৭ সনে চা চাষের চেষ্টা শুরু হলেও ১৮৪০ সনে ব্রিটিশ বণিকরা চীন দেশ থেকে চীনা চা-শ্রমিকদের নিয়ে আসে কারিগরি কলাকৌশল জানার জন্য। পাশাপাশি চা বাগানের জন্য দরকার হয়ে পড়ে বিপুল শ্রমিক। যার জন্য গ্রামীণ জনগণের ওপর তখন ব্রিটিশ সরকার সমানে অন্যায়ভাবে কর বসায় আর চা বাগানে কাজ করাতে বাধ্য করে। কিন্তু ব্রিটিশ বণিকদের এই বাহাদুরির বিনেিদ্ধ গ্রামীণ নিম্নবর্গ রুখে দাঁড়ায়। ব্রিটিশ বণিকেরা তখন উত্তর ভারতের দিকে নিশানা করে। চা বাগানের আদিবাসী প্রবীণদের কাছ থেকে জানা যায়, ব্রিটিশরা মিথ্যা ও বানোয়াট মজুরি আর সুবিধার চাতুরি করে পাহাড় অরণ্য থেকে নানা আদিবাসী জাতির নারী-পুরুষদের গ্রামসুদ্ধু ধরে এনে চা বাগানের দাস-মজুর বানিয়েছে। চা বাগানের প্রবীণেরা নানাসময়ে জানিয়েছেন, ‘গাছ ছিলালে রূপিয়া মিলে’, ‘গাছ নাড়ালে পয়সা পড়ে’, ‘চা গাছ ঝাঁকালে সোনা পাওয়া যায়’ এরকমভাবেই ব্রিটিশ বণিকরা গরিব আদিবাসীদের গ্রামে গ্রামে বুঝিয়েছিল। অরণ্য পাহাড় থেকে মানুষ ধরে এনে চা বাগানের বন্দি শ্রমিক বানানোর এ কাজটি মূলত সংগঠিত হয়েছে ‘আড়কাঠিদের’ দ্বারা। তারা ব্রিটিশ শাসকের দাস-দালাল হিসেবে কাজ করতো। তারাই নানা গ্রামে গ্রামে যেতো আর পরিশ্রমী নারী-পুরুষদের বাধ্য করতো। আড়কাঠিদের মাধ্যমেই ব্রিটিশ বণিকেরা চা বাণিজ্যের ভেতর দিয়ে এক নির্মম ‘দাস-বাণিজ্যকে’ বৈধ করে। এভাবেই ১৮৫৪ সনে সিলেটের মালনীছড়ায় প্রথম বাণিজ্যিক চা বাগান প্রতিষ্ঠিত হয়। এটিই চীনের বাইরে দুনিয়ার প্রথম বাণিজ্যিক চা বাগান। শুরু হয় সুরমা ও বরাক-কাছাড় উপত্যকায় ব্রিটিশ কোম্পানি শাসিত চা-বাণিজ্য। একেবারে চোখের সামনে দিনেদুপুরে আদিবাসী অধ্যুষিত অরণ্য টিলাগুলিকে বানিয়ে ফেলা হয় ব্রিটিশ কোম্পানির চা বাগান। অরণ্য, টিলা, ঝর্ণা আর পাহাড়গুলি নিজেদের নাম হারিয়ে হয়ে যায় ব্রিটিশ কো¤পানির ‘ভ্যালী’ ও ‘এস্টেট’। সাঁওতাল, মুন্ডা, কোল, ভীল, মাহালী, ওঁরাও, খাড়িয়া, কন্দ, মুসহর, রবিদাস, ভূমিজ, উড়িয়া, শীল, নায়েক, রাজপুত, অসমীয়া, ভর, লোহার, ডুকলা, পাইনকা, গঞ্জু, পাল, তাঁতী, বড়াইক, সিং, বাগদী, মাহাতো, তুরী, নিষাদ, দোসাদ, রাজোয়াড়, পাহাড়িয়া, মালো, মালী এরকম নানা ঐতিহাসিক জাতিসমূহের অনেকেই নিজ জন্মমাটি ও আত্মপরিচয় থেকে সম্পূর্ণত উচ্ছেদ হয়ে একটা সময় অনিবার্যভাবে বহুজাতিক কোম্পানি নিয়ন্ত্রিত বাগানের চা-শ্রমিক হয়ে যায়। জাতি, গোত্র, বংশ, নাম, পরিচয় সব মুছে চা বাগানে এদের এক নতুন নাম হয় ‘কুলি’।
চা বাণিজ্য শুরুর সময় থেকে এখনও অবধি চা বাগানের শ্রমিক ও বাগানি জনগণের আত্মপরিচয় ও স্থানীয় বাস্তুসংস্থানের ঐতিহাসিক স¤পর্ক ও বিরাজমানতা অস্বীকার করে চলেছে। চাপিয়ে রেখেছে এক অন্যায় বলপ্রয়োগ। তবে শুরু থেকেই চা বাগান শ্রমিক ও চা বাগানি জনগণ কোম্পানি ও বাগান মালিকের অন্যায় জুলুমের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন। সংগঠিত হয়ে চলেছে নানা ছোটবড় আন্দোলন, সংগ্রাম। ১৯২১ সনের চা-শ্রমিকদের এক করুণ মুলুকযাত্রা এবং নিশ্চুপ চা-শ্রমিক গণহত্যার দ্রোহকে স্মরণ করিয়ে দিতেই চলতি আলাপখানি বিস্তৃত হচ্ছে। চায়ের ঝকঝকে ক্লান্তিনিবারণী অধিপতি ইতিহাসে যা একেবারেই গায়েব ও অস্বীকৃত। ভারতের আসাম ও বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে চাশিল্প প্রতিষ্ঠিত হবার পর প্রায় ৫০ বছর ধরে এখানেই উৎপাদিত হয়েছে দুনিয়ার প্রায় অর্ধেক চা। বর্তমানে পঞ্চগড়ে নতুন প্রতিষ্ঠিত ৭টি বাগানসহ বাংলাদেশে মোট চা বাগান ১৬৩টি। চা বাগানের ১,১৫,০০০ হেক্টর জমির পুরোটাই সরকারি খাস জমি। আর বিস্তীর্ণ এই চা বাগানে বসবাস করছেন দুই লাখ শ্রমিকসহ প্রায় ১০ লাখ মানুষ।
চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রচলন বাংলার কৃষিপ্রধান সমাজের কাঠামো ও সংগঠনে যে বিশেষ পরিবর্তন আনে তা হল, বৃহৎ যৌথ পরিবারগুলির বিভাজন ও নতুন ছোট ছোট পরিবারের অভ্যুদয়। তখন থেকেই জনপদব্যাপী নিম্নবর্গের সার্বভৌম সীমানায় চেপে বসে এক অন্যায় রাষ্ট্রীয় জুলুম ও উপনিবেশ। ব্রিটিশ উপনিবেশের ভেতর দিয়ে যন্ত্রণা ও ক্ষত অনেক বেশি দগদগে হয়ে আছে। নিম্নবর্গ বারবার শিরদাঁড়া খাড়া করে দাঁড়িয়েছে। জুলুমের বিরুদ্ধে জাগ্রত করেছে গণশক্তি। ১৮৫৫ সনে ব্রিটিশ উপনিবেশের বিরুদ্ধে সংগঠিত হুল বা সাঁওতাল বিদ্রোহ এবং ১৯০০ সনের উলগুলান বা মুন্ডা বিদ্রোহ নিম্নবর্গের এ সাহসকে আরো বেশি বিকশিত করেছে রাজনৈতিক কায়দায়। শরীর থেকে মনস্তত্ত্ব, যাপিতজীবন থেকে উৎপাদনের সকল সীমানায় যে দ্রোহী বুদবুদ বারবার দানা বেঁধে ওঠবার তাগিদ করেছে। গ্রাম থেকে দাস হিসেবে চা-শ্রমিকদের ধরে আনা ও চা বাগানে এনে লাগাতার জুলুম চাপিয়ে দেয়ার মাত্রা এমন বেড়েছিল যে চা-শ্রমিকদের ভেতরে বিদ্রোহ দানা বাঁধতে থাকে। কারণ তখন নানাভাবে নানা কায়দায় ব্রিটিশ জুলুমের বিরুদ্ধে সংগঠিত হচ্ছে নিম্নবর্গ। চা-শ্রমিকেরাও তার বাইরে নন। তারাও বহন করে চলেছেন পূর্বজনদের সংগ্রামী স্মৃতিগাঁথা ও সাহসের ব্যাকরণ। আসামে কাছাড়ি আদিবাসী চা-শ্রমিকরা ১৮৪৮ সনে বকেয়া মজুরির দাবিতে ধর্মঘট শুরু করেন। ১৮৫৯ সনে শ্রমিক ধর্মঘটের কারণে চা-শ্রমিক নেতা মধুরাম কোচকে কারারুদ্ধ করে বাগান কর্তৃপক্ষ। ১৯২০ সনে এক নারী চা-শ্রমিককে আটক করে ৬ মাসের সশ্রম কারাদ- দেয়া হয়। ১৯২০ সনে আব্দুল করিমের সমন্বয়ে সুরমা উপত্যকায় রাজনৈতিক আন্দোলনে বিদেশি মালিকদের সবরকম ব্যবসা ও চা-বাগান থেকে বের হয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়। চা বাগানের ভেতর জমে থাকা ক্ষোভ ও দ্রোহ ক্রমে ব্রিটিশ উপনিবেশবিরোধী এক গণরাজনৈতিক আন্দোলনধারার প্রবাহে মিশে যায়। চা-শ্রমিকেরা সংঘবদ্ধ হয়ে ব্রিটিশ বেনিয়াদের জুলুমের ঘের ভেঙে নিজেদের জন্মমাটিতে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। আর চা বাগানের ইতিহাসে চাশ্রমিকদের এই অবিস্মরণীয় সংগ্রামী কর্মসূচিটিই ‘মুলুকযাত্রা’ বা দেশে ফেরা হিসেবে পরিচিত। যা ঠেকাতে ব্রিটিশ সরকার বিচারহীন নৃশংস এক গণহত্যা সংঘটিত করেছিল।
কুশিয়ারা, সুরমা ও মেঘনা এটিই বাংলাদেশের দীর্ঘ নদীপ্রণালী। মেঘনার পানির রঙ দেশের নানা বাঁকে নানা ঋতুতে নানা রকম। কিন্তু মেঘনার জল একবারই লাল হয়েছিল। ১৯২১ সনে। বাগানের পর বাগান থেকে চা-শ্রমিকেরা লাইনবস্তির ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসে এবং শিশু-প্রবীণ-নারী-পুরুষেরা রেললাইন ধরে হাঁটতে থাকে। ক্ষুধা, আশ্রয়হীনতা, অসুখ আর ব্রিটিশ সরকারের জুলুমে পথেই অনেকে মারা যায়। তারপর চাঁদপুরের মেঘনা ঘাটে পৌঁছলে অনেকে আটক হয়, পাশাপাশি বেসামরিক চা বাগানিদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায় ব্রিটিশ শাসক ও গুর্খা বাহিনী। হাজারে হাজার চা-শ্রমিকের রক্তে লাল হয়ে যায় মেঘনা নদী। জীবিত ও আহত শ্রমিকদের আর মুলুকে ফেরা হয়নি, আবারো চা বাগানে ফিরে এসে বহুজাতিক বন্দিজীবন মেনে নিতে হয়েছে।
চা-শ্রমিকদের আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাস পর্যালোচনা করে অনেকেই বলেছেন, ১৯২১ সনের মুলুকযাত্রা ও নির্মম চা-শ্রমিক গণহত্যার ভেতর দিয়ে চা বাগানে প্রচলিত অন্যায় ‘গিরমিট চুক্তি’ বা আজীবন দাসত্ব চুক্তিটি বাতিল হয়। কিন্তু তারপরও চা-শ্রমিকদের ওপর রাষ্ট্র কি বহুজাতিক এজেন্সির জুলুম থামেনি, জবরদস্তির রূপ ও আঘাতের কায়দা পাল্টায় কেবলমাত্র। চা বাণিজ্য এতোই মারদাঙ্গা আর অনিবার্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরিবার পর্যন্ত বাগানের মালিক হয়েছিলেন এবং রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং চায়ের বিজ্ঞাপন লিখেছেন। কিন্তু কাল থেকে কালে রাষ্ট্র কি এজেন্সিসমূহ চা-শ্রমিকদের সংগঠিত হতে বাঁধা দিয়ে চলেছে। শ্রমিকদের রক্ত ও ঘামের স্বীকৃতি ও মর্যাদা দিতে পারেনি। তারপরও চা-শ্রমিকরাই নিজেদের রক্ত ঝেঁকে ছেনে ছেনে বাংলাদেশের প্রতিজন মানুষের হাতে তুলে দেন ক্লান্তি নিবারণী গরম পেয়ালাভর্তি চা। চা-শ্রমিকদের প্রশ্নহীন ক্লান্তিময়তাকে আগলে আমাদের সবাইকে চাঙ্গা হয়ে ওঠা জরুরি। চা বাগানের বহমান জুলুম আর বাহাদুরিকে প্রশ্ন করা জরুরি। চলতি আলাপ ১৯২১ সনের চা-শ্রমিক গণহত্যাকে রাষ্ট্রীয় ইতিহাসে দলিলায়নের ভেতর দিয়ে স্বীকৃতির আহ্বান জানায় এবং চা-শ্রমিকদের ওপর ঐতিহাসিকভাবে চাপিয়ে রাখা সকল বঞ্চনা ও নিপীড়নের অবসান চায়। ন্যায়বিচার দাবি করে।
লেখক : গবেষক, প্রতিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণ

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com