মোসাইদ রাহাত ::
সুনামগঞ্জ শহরের বিভিন্ন সড়কে বেপরোয়াভাবে চলছে ট্রাক্টর। ট্রাক্টর কৃষিকাজে ব্যবহারের জন্য ক্ষেত-খামারে থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে এটির ব্যবহার হচ্ছে মাটিভরাট ও নির্মাণকাজের বাহন হিসেবে। মালবাহী এসব ট্রাক্টর চলায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিটুমিন ঢালা কার্পেটিং সড়ক। ভাঙাচুরা সড়ক দিয়ে চলাচলে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন যানবাহনের চালক, যাত্রী ও পথচারীরা।
খোঁজ নিয়ে জানাযায়, দেশের কৃষিকাজের ব্যবহার করার জন্য টাক্টরগুলো বিদেশ থেকে আমদানির সুযোগ দেয় সরকার। সরকারের দেওয়া সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী কৃষিকাজে ব্যবহৃত যানবাহনকে নামিয়ে দিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে। ফলে সড়কের ক্ষতির পাশাপাশি ঘটছে দুর্ঘটনা। গত মঙ্গলবার সকালে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের পশ্চিম হাজীপাড়া এলাকার সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে বিপরীত দিক থেকে আসা ট্রাক্টরের কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিআরটিসি বাস খাদে পড়ে আহত হন ২০ জন যাত্রী। যার মধ্যে তিনজনকে বরণ করতে হয়েছে পঙ্গুত্ব।
বুধবার সরেজমিনে সুনামগঞ্জ শহরের পুরাতন বাসস্টেশন, পশ্চিম হাজীপাড়া, আব্দুর জহুর সেতু, ময়নার পয়েন্ট, বিহারী পয়েন্ট, মোহাম্মদপুর, ধোপাখালি, ষোলঘর, নবীনগরসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় সেখানে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে যন্ত্রদানব ট্রাক্টর। কর্তৃপক্ষ রাত ১২টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত চলাচলের নির্দেশনা প্রদান করলেও বাস্তবে ঠিক তার উল্টোই হচ্ছে।
শহরের ষোলঘর এলাকার বাসিন্দা মিঠুন দাস বলেন, অতিরিক্ত ওজনের মাটি ও নির্মাণসামগ্রী নিয়ে প্রতিদিন ট্রাক্টরগুলো পৌর শহরের বিভিন্ন সড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এ কারণে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পাকা সড়কগুলোর কার্পেটিং উঠে গিয়ে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়। এছাড়া চলার সময় ট্রাক্টরের মাটি গিয়ে পড়ছে পাকা সড়কের ওপর। ফলে যানবাহন চললে সড়কে উড়ছে ধুলা।
রিকসা চালক নূর উদ্দিন বলেন, পাকা সড়কজুড়ে খানাখন্দের সৃষ্টির অন্যতম কারণ ট্রাক্টরের মতো ভারী যানবাহন। মাটি বহনকারী ট্রাক্টর চলার কারণে সড়ক বেহাল হয়ে পড়ছে। এতে আমাদের বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান বলেন, ট্রাক্টরের কারণে কোটি কোটি টাকার সড়ক নষ্ট হচ্ছে। এছাড়া মারাত্মক শব্দদূষণ ও ধুলাবালির কারণে সড়কসংলগ্ন বাড়িতেও বাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
লেখক ইকবাল কাগজী বলেন, ট্রাক্টর চলাচল করার কথা গ্রামীণ সড়কে এটা শহরে চলবে কেন? এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।
সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের ছাত্র সুমন দাশ বলেন, ট্রাক্টর একটি মরণযান। এটি যেমন শব্দ দূষণ করে ঠিক তেমনি রাস্তাঘাট এবং মানুষের জীবনেরও ক্ষতি করছে। বেপরোয়া ট্রাক্টর প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত বলেন, ট্রাক্টর সুনামগঞ্জ পৌর এলাকায় দিনের বেলায় প্রবেশের কোন নিয়ম নেই। আমরা চাই এগুলো পৌর শহরে চলাচল বন্ধ করে দিতে। কিন্তু এটি আমাদের একার পক্ষে সম্ভব নয়। জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ সুনামগঞ্জ পৌরবাসীকে এ জন্য কাজ করতে হবে।
পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, দিনের বেলায় লোক সমাগম এলাকায় ট্রাক্টর প্রবেশ করতে পারবে না। এরকম হলে আমরা এই সকল ট্রাক্টরদের আটক করছি। আমাদের পুলিশকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে- দিনের বেলায় জনসমাগম এলাকায় ট্রাক্টরগুলো দেখলেই আটক করার। এছাড়া সাধারণ মানুষও চাইলে আমাদের জানাতে পারেন, আমরা ব্যবস্থা নিবো।