বিশেষ প্রতিনিধি ::
হাওরের জীবনমান উন্নয়নে ১১৮ কোটি ১৩ লাখ টাকা খরচে ‘হাওর অঞ্চলে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন’ প্রকল্প অনুমোদন করেছে সরকার। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এই প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। ‘হাওর অঞ্চলে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন’ প্রকল্প ছাড়াও আরো ৯টি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে একনেক। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান সাংবাদিকদের সামনে এসব প্রকল্প বিষয়ে তথ্য তুলে ধরেন। একনেকের সভায় ১৩৬৩৯ কোটি খরচে ৯ প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সরকার দেবে ৮ হাজার ৮৮৬ কোটি ৪৪ লাখ, সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ২৯৩ কোটি ১৬ লাখ এবং বৈদেশিক ঋণ ৪ হাজার ৪৫৯ কোটি ৪১ লাখ টাকা। এদিকে ‘হাওর অঞ্চলে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন’ প্রকল্প অনুমোদনের ফলে হাওরবাসী এর সুবিধা ভোগ করতে পারবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা যায়, দেশে বর্তমানে মোট ৩৭৩টি হাওর রয়েছে, যার আয়তন প্রায় ৮৫৯ হাজার হেক্টর। ভৌগোলিক কারণে এসব অঞ্চল খুবই দুর্গম। হাওর অঞ্চলে হাঁস-মুরগি কিংবা ছাগল-ভেড়া পালনের মাধ্যমে আয়ের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এখনও উন্নত প্রযুক্তি না থাকায় প্রাণিসম্পদের উৎপাদনশীলতা ও দক্ষতা সন্তোষজনক নয়। রোগের প্রাদুর্ভাব, অনুন্নত প্রযুক্তি, সঠিক খামার ব্যবস্থাপনার অভাব, নিম্নমানের স্বাস্থ্য পরিচর্যা ও কারিগরি সেবা, অপর্যাপ্ত কারিগরি জ্ঞান এবং খামারি ও সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতা হাওর অঞ্চলে প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন ও উৎপাদনের বাধা হয়েছে আছে। তাছাড়া প্রতি বছরই ডার্ক প্লেগে হাওরের অনেক হাস মারা যায়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন খামারিরা। এই প্রকল্প অনুমোদনের ফলে চাষীরা উৎসাহিত হবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
এ অবস্থায় সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়নের মাধ্যমে হাওরাঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্য বিমোচন ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মাধ্যমে সুনামগঞ্জসহ সাত জেলার ৩৯ উপজেলায় এর কার্যক্রম বিস্তৃত করা হবে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, মাথাপিছু আমিষ গ্রহণ বৃদ্ধি এবং পুষ্টি নিরাপত্তায় চার বছর মেয়াদি একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এতে ব্যয় করা হবে ১১৮ কোটি ১৩ লাখ টাকা।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ‘হাওর অঞ্চলে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন’ প্রকল্প প্রস্তাবের ওপর যাচাই-বাছাই শেষে প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) উত্থাপন করা হয়। সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন করে অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি। প্রকল্পটি চলতি অর্থবছরে শুরু করে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এর বাস্তবায়ন কাজ শেষ করবে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।
প্রাণিস¤পদ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি জেলা সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও মৌলভীবাজার জেলার অংশ বিশেষসহ বৃহত্তর সিলেট অঞ্চল এবং কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার বড় অংশ হাওর বেষ্টিত। হাওর অঞ্চলের জনগোষ্ঠী জীবিকার জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষি, মৎস্য ও হাঁস-মুরগি লালন-পালনের ওপর নির্ভরশীল। হাঁস-মুরগি, ছাগল ও ভেড়া এ অঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও পরিবর্তনশীল জলবায়ুর সঙ্গে সহজে অভিযোজিত হতে সক্ষম বলে মনে করছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। এ জন্য প্রাণিসম্পদ উন্নয়নের মাধ্যমে এই অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক অবস্থা পরিবর্তনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এই প্রকল্পের মাধ্যমে।
পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, প্রধানমন্ত্রী হাওরের সার্বিক উন্নয়ন ও হাওরবাসীর জীবন মান উন্নয়নে সবসময়ই আন্তরিক। হাওরের উন্নয়নে কোন প্রকল্প নেওয়া হলে তিনি সাথে সাথেই অনুমোদন দেন। হাওরের স্থায়ী উন্নয়নে আরো কি কি উদ্যোগ নেওয়া যায় সেটার কথাও বলেছেন তিনি। এই প্রকল্পের মাধ্যমে হাওরের নানা শ্রেণির মানুষ উপকৃত হবেন বলে জানান তিনি।