বিশেষ প্রতিনিধি ::
সুনামগঞ্জ শহরতলির মাইজবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চার ছাত্রীকে যৌন নিপীড়ন ও মোবাইল ফোনে অশ্লীল ভিডিও দেখতে বাধ্য করার অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় গ্রেফতার এবং জেলহাজতে যাওয়া প্রধান শিক্ষক গিয়াস উদ্দিনকে পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ।
মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ করা চার ছাত্রী মধ্যে এক ছাত্রীর অভিভাবক প্রধান শিক্ষক গিয়াস উদ্দিনকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। পুলিশ হেফাজতে থাকা শিক্ষককে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে বুধবার জেলহাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ।
এদিকে, ছাত্রীদের যৌন নিপীড়ন করার অভিযোগে শিক্ষক গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ও গ্রেফতার হওয়ার পর বুধবার তাকে প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ। সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এনামুর রহিম বাবার সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার বিকেলে স্কুল ছুটির পর মাইজবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চার ছাত্রীর স্কুলের প্রধান শিক্ষক গিয়াস উদ্দিন তাদেরকে যৌন নিপীড়ন করেছেন বলে অভিভাবকদের নিকট অভিযোগ করে। অভিযোগ শোনার পরপরই ক্ষুব্ধ অভিভাবক ও গ্রামবাসী স্কুলে গিয়ে প্রধান শিক্ষককে উত্তম-মধ্যম দেন। এক পর্যায়ে কয়েক হাজার মানুষ স্কুল ঘেরাও করে শিক্ষকের বিচার দাবি করে বিক্ষোভ শুরু করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে উত্তেজিত জনতাকে হটিয়ে শিক্ষক গিয়াস উদ্দিনকে থানায় নিয়ে আসে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ উপ-পরিদর্শক অজয় চন্দ্র রায় জানান, অভিভাবক কর্তৃক থানায় মামলা দায়েরের পর নিপীড়নের শিকার চার ছাত্রী সুনামগঞ্জ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক ইসরাত জাহানের আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে।
এদিকে, শিক্ষক গিয়াসের পরিবারের দাবি, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি সংক্রান্ত স্থানীয় রাজনীতির জেরে একটি মহল ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তাকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসিয়েছে।
সুনামগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সহিদুর রহমান বলেন, ছাত্রীদের যৌন নিপীড়ন করার অভিযোগ আটক প্রধান শিক্ষক গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন এক অভিভাবক। তাকে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে জেল-হাজতে পাঠানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার বিকেলে স্কুল ছুটির পর মাইজবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চার ছাত্রী বাড়িতে গিয়ে অভিভাবকদের জানায় যে, প্রধান শিক্ষক গিয়াস উদ্দিন তাদের সাথে যৌন হয়রানিমূলক আচরণ করেছেন। ইতোপূর্বে তাদের ছাদে ডেকে নিয়ে মোবাইল ফোনে অশ্লীল ভিডিও দেখতে বাধ্য করেছিলেন তিনি। বিষয়টি জানার পর মঙ্গলবার বিকেল ৩টার দিকে ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা প্রতিবেশীদের সঙ্গে নিয়ে স্কুলে গিয়ে প্রধান শিক্ষক গিয়াস উদ্দিনকে উত্তম-মধ্যম দেন। অবস্থা বেগতিক দেখে স্কুলের প্রধান ফটক বন্ধ করে দেন স্কুলের অপরাপর শিক্ষকরা। এদিকে, ছাত্রীকে যৌন হয়রানি করার খবর ছড়িয়ে পড়লে কয়েক হাজার গ্রামবাসী স্কুলের চারপাশে অবস্থান নেন। একপর্যায়ে তারা গেট ভেঙে ভিতরে প্রবেশের চেষ্টা করেন। খবর পেয়ে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহিদুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে অভিযুক্ত শিক্ষককে উদ্ধার করতে গেলে আরো বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে জনতা। এক পর্যায়ে উত্তেজিত জনতাকে হটিয়ে অবরুদ্ধ শিক্ষককে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ।