স্টাফ রিপোর্টার ::
১৯৭১ সনে ৬ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জ মুক্তদিবসের পরেই সুনামগঞ্জ শহীদ মিনারের নকশা করে বীর মুক্তিযোদ্ধারা অনন্য শহীদ মিনার নির্মাণ করে ১৯৭১ সনের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেছিলেন। এরপর থেকেই এটি সুনামগঞ্জের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার হিসেবে পরিচিতি পেয়ে স্থানীয় ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অংশ হয়ে ওঠে। সম্প্রতি শহীদ মিনার লাগোয়া বাণিজ্যিক স্থাপনা গড়ে ওঠলে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন মুক্তিযোদ্ধারা। তারা অবিলম্বে এই স্থাপনা অপসারণের আহ্বান জানান। এ নিয়ে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জরুরি দুটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হলে বৈঠকে মুক্তিযোদ্ধারা অবিলম্বে এই বাণিজ্যিক স্থাপনা অপসারণ করে নিতে সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানান। অপসারণ না হলে মুক্তিযোদ্ধারা আগামী ১ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জ শহীদ মিনারে ফুল না দিয়ে প্রতীকী শহীদ মিনার করে প্রতিবাদ স্বরূপ অন্যত্র শহীদদের শ্রদ্ধাঞ্জলি দিবেন বলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের এই ক্ষোভ ও প্রতিবাদের মুখে বুধবার রাতে শহীদ মিনারের সৌন্দর্য্য নষ্ট করে গড়ে ওঠা স্থাপনা গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
বীর মুক্তিযোদ্ধারা জানান, ঐতিহ্যের অনন্য শহীদ মিনারের সৌন্দর্য্য আড়াল করে সম্প্রতি পূর্বদিকে হঠাৎ করে মার্কেট নির্মাণ করা হচ্ছিল। এটি দেখার পর তাৎক্ষণিক মুক্তিযোদ্ধারা জেলা প্রশাসন ও পৌরসভায় খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন কোনো অনুমতি ছাড়াই স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন জেলার মুক্তিযোদ্ধারা। মুক্তিযোদ্ধা-জনতার আবেগ ও শ্রদ্ধার প্রতি সম্মান দেখিয়ে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন ‘সুনামগঞ্জ শহীদ মিনারের জায়গা সংক্রান্ত মামলার সর্বশেষ অবস্থা এবং জায়গার মালিকানা সংক্রান্ত তথ্যভিত্তিক বাস্তব প্রতিবেদন দাখিলের জন্য উপকমিটি’ গঠন করা হয়। ওই কমিটি ইতোমধ্যে দুটি সভা করে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে প্রতিবেদন তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। গত মঙ্গলবার স্থানীয় সরকারের উপপরিচালকের কক্ষে অনুষ্ঠিত জরুরি সভায় বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. আলী আমজাদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. বজলুল মজিদ চৌধুরী খসরু, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান, বীর মুক্তিযোদ্ধা মালেক হুসেন পীর, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মজিদসহ সুধীজন অবিলম্বে নির্মাণাধীন বাণিজ্যিক স্থাপনা অপসারণের দাবি জানান।
কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা আগামী ২১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে দাবি পূরণ না হলে প্রতিবাদ স্বরূপ এবার ২১ ফেব্রুয়ারিতে শহীদ মিনারে ফুল না দিয়ে ‘প্রতীকী শহীদ মিনার’ বানিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণের কথা জানিয়ে বক্তব্য দেন।
মুক্তিযোদ্ধাদের এই প্রতিবাদ ও আবেগকে শ্রদ্ধা জানিয়ে অবশেষে বুধবার রাত সাড়ে ৯টায় সংশ্লিষ্টরা গড়ে ওঠা স্থাপনা গুড়িয়ে দেন। এসময় সদর থানা পুলিশও উপস্থিত ছিল।