চয়ন কান্তি দাস ::
ধর্মপাশা উপজেলার বংশীকুণ্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নে আমানীপুর বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। আমানীপুর গ্রামে নেই কোনো বিদ্যালয়ের ভবন ও ছাত্রছাত্রী। কাগজে-কলমে প্রতিষ্ঠানটির ভবন, শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী ও প্রয়োজনীয় উপকরণ দেখিয়ে এটি সরকারিকরণের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত দুই বছর ধরে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে প্রতিষ্ঠানটির নামে সরকারি পাঠ্যবই উত্তোলন করা হচ্ছে। এ নিয়ে বংশীকুণ্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল হেলিম গতকাল রোববার বিকেলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
এলাকাবাসী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বংশীকুণ্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের আমানীপুর গ্রামে তিন চার বছর আগে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন এলাকাবাসী। ভবন নির্মাণ করার জন্য গ্রামবাসী মিলে সভাও করেছিলেন। পরে গ্রামবাসীরা স্কুল প্রতিষ্ঠা নিয়ে দুই দলে বিভক্ত হওয়ায় সেখানে আর প্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণ করা হয়নি। ভেস্তে যায় স্কুল প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম। ওই গ্রামে বিদ্যালয়ের নামে ভবন নেই। কাগজে-কলমে ওই বিদ্যালয়টিতে একজন প্রধান শিক্ষক, তিনজন সহকারী শিক্ষক, চার কক্ষের একতলার পাকাভবন, আটটি চেয়ার, পাঁচটি টেবিল, হাইবেঞ্চ ৩০টি, লো বেঞ্চ ৩০টি, আলমিরা, চক, বোর্ড তিনটিসহ নানা ভুয়া তথ্য উপস্থাপন করে স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি বিদ্যালয়টি দীর্ঘদিন ধরে সরকারিকরণের পাঁয়তারা করে আসছেন।
বংশীকুণ্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল হেলিম বলেন, আম দের গ্রামে ওই নামে সরকারি বা বেসরকারি কোনো স্কুল নেই। নেই স্কুলের কোনো ভবন ও ছাত্রছাত্রী। অথচ গত দুই বছর ধরে আমাদের ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মো. আবদুল গণি নিজেকে আমানীপুর বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দাবি করে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে সরকারি বই উত্তোলন করে আসছেন। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কর্যালয়ে ভুয়া তথ্যাদি উপস্থাপন করে ওই বিদ্যালয়টি সরকারিকরণের জন্য তিনি নানাভাবে ফন্দি চালিয়ে আসছেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে এসব বিষয় তদন্ত করে প্রতারণার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।
মো. আবদুল গণি বলেন, আমি কোনো প্রতারণা করছি না। আমাদের বিদ্যালয়টির ইমেসকোড রয়েছে। ১৯৯৮ সালে এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমাদের বিদ্যালয়ের ভবন ও অন্যান্য উপকরণ ছিল কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ে বিদ্যালয়টির ভবনসহ সবকিছু লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। বেশ কয়েক মাস ধরে আমাদের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নাসির উদ্দিনের বাড়িতে ওই বিদ্যালয়ের নামে নির্মাণ করা একটি টিনের ঘরে বিদ্যালয়টির সার্বিক কার্যক্রম চালিয়ে আসছি। দুই বছর ধরে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে বই তুলে আসছি। এখন ৫০জন ছাত্রছাত্রী আছে। তবে ছাত্রছাত্রীদের তুলনায় কিছু বই অতিরিক্ত তোলা হয়েছে।
বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি দাবিকারী নাসির উদ্দিন বলেন, আমার স্ত্রী ওই বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক। সে নিয়মিত স্কুল করছে। ছাত্রছাত্রীও রয়েছে। এই গ্রামে স্কুল প্রতিষ্ঠা করা নিয়ে স্থানীয় এলাকাবাসী দুইভাগে বিভক্ত রয়েছেন। তাই একটি পক্ষ নানা গুজব রটাচ্ছে।
বংশীকুণ্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবদুস সালাম বলেন, আমানীপুর গ্রামে আমানীপুর বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামে কোনো ভবন নেই, সেখানে কোনো ছাত্রছাত্রীও নেই। তদন্ত করলে এর সত্যতা পাওয়া যাবে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আবদুল আউয়াল মিয়া বলেন, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে কাউকে অনৈতিকভাবে কোনো সহায়তা করা হয়নি। আমানীপুর বেসরকারি বিদ্যালয়ের নামে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ছাত্রছাত্রী ওই গ্রামে না থাকলে সরকারি এসব বইগুলো নিয়ে কী করা হচ্ছে তা খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আবু তালেব বলেন, এ সংক্রান্ত একটি লিখিত অভিযোগ আমি পেয়েছি। তদন্ত করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।