স্টাফ রিপোর্টার ::
সিভিল সার্জন ডা. তউহীদ আহমেদ কল্লোলকে বদলির প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জ শহরে পৃথক দুটি মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। মানববন্ধনে বদলির এই আদেশ দ্রুত প্রত্যাহার দাবি জানিয়েছেন বিশিষ্টজনরা। অন্যথায় এর বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচির ঘোষণার হুঁশিয়ারি দেন তারা।
বৃহস্পতিবার সকালে শহরের আলফাত স্কয়ারে সুনামকণ্ঠ পাঠক ফোরাম এবং সিভিল সার্জন কার্যালয় প্রাঙ্গণে সচেতন সুনামগঞ্জবাসী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে।
সুনামকণ্ঠ পাঠক ফোরাম আয়োজিত মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন সুনামকণ্ঠ সম্পাদক বিজন সেন রায়। সুনামকণ্ঠ পাঠক ফোরামের আহ্বায়ক শহীদনূর আহমেদ-এর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শামসুল হক, সুনামগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি মাসুম হেলাল, সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের পাঠাগার সম্পাদক হিমাদ্রী শেখর ভদ্র, জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক সালেহিন চৌধুরী শুভ, হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সাংগঠনিক স¤পাদক একে কুদরত পাশা, সদস্য আফরোজ রায়হান, জেলা সহকারী শিক্ষক -কর্মচারী সমিতির সভাপতি মো. রুহুল আমিন, জেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. হারুনুর রশীদ, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক স¤পাদক ফারুক আহমদ সুজন, জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ স¤পাদক আসাদ মনি প্রমুখ।
মানববন্ধনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিকাশ রঞ্জন চৌধুরী ভানু, দৈনিক সুনামকণ্ঠের উপ-সম্পাদক কবি ইকবাল কাগজী, শিক্ষক (অব.) চন্দন কুমার রায়, অধ্যক্ষ মানিক মোহন চন্দ, সাংবাদিক জসীম উদ্দিন, মো. আনোয়ারুল হক, আব্দুল কাইয়ুম, রুজেল আহমদ, লেখক হাসান আফরোজ, মোহম্মদ শওকত, ফেনিবিল সমাজকল্যাণ যুব সংঘের সভাপতি মো. শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক মো. মোশারফ হোসেন, সদস্য মামুন মিয়া, হাম্মাদ মিয়া প্রমুখ।
এদিকে, সাংবাদিক শামস শামীমের সঞ্চালনায় সচেতন সুনামগঞ্জবাসী আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান, জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক এনামুজ্জামান চৌধুরী, দৈনিক সুনামকণ্ঠের সম্পাদক বিজন সেন রায়, জেলা আসকের সভাপতি ফজলুল হক, সুনামগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি লতিফুর রহমান রাজু, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি শোয়েব চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক জুবের আহমদ অপু, জেলা সেবকের সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম মজনু, জেলা কৃষকলীগের সদস্য সচিব বিন্দু তালুকদার, রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক এমরানুল হক চৌধুরী, শিক্ষক নেতা হারুনুর রশিদ, সাংবাদিক মাহমুদুর রহমান তারেক, আহমেদ মুজতাবা রাজি, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমেদ সুজন, বিএমএ-এর সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সৈকত দাশ, জেলা বঙ্গবন্ধু আইন ছাত্র পরিষদের সভাপতি নূর মোহাম্মদ স্বজন প্রমুখ।
মানববন্ধনের বক্তারা বলেন, স্বাস্থ্যবিভাগের দুর্নীতিবাজ অসৎ লোকদের বদলি করা হয় না। কিন্তু একজন সৎ সিভিল সার্জনকে বদলি করা হয়েছে। এই বদলির উদ্দেশ্য স্পষ্ট। অনিয়ম-দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিতেই এই বদলির আদেশ দেয়া হয়েছে। আমরা জানতে চাই কার ইশারায় বা কোন দুর্নীতিবাজদের নির্দেশে এটা হয়েছে। আমরা ডা. তাউহীদ আহমেদকে সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন হিসেবে বহাল দেখতে চাই।
বক্তারা পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নানকে উদ্দেশ্য করে বলেন, পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান সুনামগঞ্জের গর্ব। কিন্তু আমরা বুঝতে পারছি না তিনি থাকতে কেমন করে মাত্র ২০ দিনের মাথায় সিভিল সার্জনকে বদলি করা হল। আমরা আশা করি পরিকল্পনামন্ত্রী সুনামগঞ্জবাসীর কথা বুঝবেন। জনদাবির কথা বুঝবেন।
বক্তারা আরো বলেন, সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি হচ্ছে শুধুমাত্র কয়েকজনের মাধ্যমে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। এই সব দুর্নীতি-অনিয়ম রুখতে যখন সিভিল সার্জন ডা. কল্লোল পদক্ষেপ নিচ্ছিলেন ঠিক তখনই তাকে বদলি করা হয়েছে। অবিলম্বে এই বদলির আদেশ প্রত্যাহার করতে হবে। তা না হলে সুনামগঞ্জবাসী কঠোর আন্দোলনে নামবে।
উল্লেখ্য, দুর্নীতি বন্ধের ঘোষণা দিয়ে সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন হিসেবে যোগদানের ২০ দিনের মাথায় ডা. তউহীদ আহমেদ কল্লোলকে কোন কারণ ছাড়াই আকস্মিক বদলি করে নেওয়ায় জেলাজুড়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। মঙ্গলবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে তাঁর বদলির আদেশ আসার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন নানা শ্রেণিপেশার মানুষ। জয়পুরহাটের সিভিল সার্জন ডা. শামছ উদ্দিনকে সুনামগঞ্জের নতুন সিভিল সার্জন হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আর ডা. তউহীদ আহমেদ কল্লোলকে বদলি করা হয়েছে মৌলভীবাজারের সিভিল সার্জন হিসেবে। বাবার টিউশনির টাকায় ডাক্তার হওয়া ডা. কল্লোল যোগদানের পর ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, তিনি নিজে দুর্নীতি করবেন না এবং কাউকে দুর্নীতি করতে দেবেন না। যোগদানের পর পর স্বাস্থ্যবিভাগকে জনবান্ধব ও সেবামুখী করারও উদ্যোগ নেন তিনি।