শিক্ষকতা মহান পেশা যদি তা শিক্ষকের ভালো লাগে। এটা বলার কারণ হলো আমরা যারা শিক্ষকতায় নিয়োজিত হই বা হয়েছি কেউ নিতান্তই অন্য চাকরি হয়নি বলে হয়তো সহজভাবে এই পেশায় এসেছেন। আবার অনেকের স্বপ্ন শিক্ষক হবেন বলেই এই পেশায় এসেছেন। কিন্তু আমি এই পেশায় যোগদানের পর থেকে এখন পর্যন্ত চেষ্টা করছি আমার দক্ষতা, আন্তরিকতা দিয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের স্বপ্নের দুয়ার খোলে দিতে। কতটুকু পারছি তা কেবল সময়ই বলে দেবে। স্বভাবসুলভ ভাবে বাংলায় পড়াশোনা তাই এই বাংলার পাশাপাশি ইংরেজিকেও আমি আমার সেবার মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছি। দীর্ঘদিন আমি শিক্ষার্থীদের বাংলা ও ইংরেজিতে পড়াচ্ছি। সে হিসেবে এই কাজটা দক্ষতার সাথে পরিচালনা করার চেষ্টা করি। কিন্তু ধারাবাহিক মূল্যায়নের ফলে দেখা যাচ্ছে, আমাদের শিক্ষার্থীদের গণিতের প্রতি ভীষণ একটা ভীতি কাজ করে। তাই বাংলা ও ইংরেজির পাশাপাশি আমার বিদ্যালয়ে একটা কক্ষে গণিত ব্যবহারিক ক্লাস শুরু করি। ইতোমধ্যে আমি গণিত বিষয়ে তাদেরকে নিয়ে কয়েকটি ক্লাস করি এবং এই কাজে আমার সাথে সহযোগিতা করেছেন আমার সহকর্মী সোমা দাস।
আমরা অনেক সময় ‘মনেকরি’, ‘ধর’ বা ‘ধরি’ এরকম শব্দ দিয়ে অংক কষতে শুরু করি যা শিক্ষার্থী অনুধাবন করতে পারে না। অনেক সময় বলি ১০০ টাকার ৫টি নোট এবং ৫০টাকার ৪টি নোট সমান কত হয়? একবার ভাবুন তো, ছোট্ট শিক্ষার্থী তার চিন্তার ক্ষেত্র কতটুকু বিস্তৃত করতে পারে? আবার অনেক সময় বলি এক হালি ডিমের মূল্য ১০ টাকা হলে চার হালি ডিমের মূল্য কত? অথচ এটা বাস্তবতা বিবর্জিত একটা ধারণা। কারণ এক হালি ডিমের বর্তমান বাজার মূল্য ৫০/৬০ টাকা। আমার শিক্ষার্থীরা জ্যামিতি বিষয়ে পিছিয়ে থাকে, আমার বলতে অনেক শিক্ষার্থীর কথা এখানে বলছি। আমরা ছোটবেলা দাড়িয়াবান্দা খেলা করতাম। সেই খেলার ছক তৈরি করতে আমাদের খেলার ঘর বা কোঠা কাটতে হতো। আবার দেখুন, গ্রামীণ খেলা ‘কুতকুত’ সকল স্থানেই কম বেশি চলে। এখান থেকে শিক্ষার্থীদের পরিষ্কার জ্যামিতিক ধারণা দেয়া যায়।
তাই আমি মনেকরি প্রতিটা বিদ্যালয়ে একটা করে ‘গণিত ব্যবহারিক ক্লাসরুম’ থাকা আবশ্যক। এতে খুব সহজে ভীতিহীনভাবে শিক্ষার্থীরা শিখনকে স্থায়ী করতে পারবে এবং তার শিখন জগৎ আপন মনে গড়ে তোলবে।
[রোকসানা ইয়াসমিন, সহকারী শিক্ষক, মল্লিকপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সদর, সুনামগঞ্জ]