1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৩৬ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

ফসলরক্ষা বাঁধের টাকায় রাস্তা! : অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পে প্রায় ৩ কোটি টাকা অপচয়

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০২০

শহীদনূর আহমেদ ::
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নে ফসলরক্ষা বাঁধের টাকায় গ্রামীণ রাস্তা নির্মাণ, হাওরের বোরো ফসলের সংশ্লিষ্টতা নেই এমন স্থানে একাধিক প্রকল্প গ্রহণ করে সরকারের বড় অংকের টাকা অপচয় করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাছাড়া আমন ও রবি ফসলের জমি রক্ষার নামে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ করে সরকারের টাকা আত্মসাৎ করার পাঁয়তারার অভিযোগও উঠেছে। সুরমা ইউনিয়নে চলতি নদীর তীরবর্তী গ্রামীণ এলাকায় ১৩টি অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পে প্রায় ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সচেতন মহলসহ হাওর সংশ্লিষ্ট সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এসব প্রকল্পে হাওরের বোরো ফসলের সম্পৃক্ততা নেই জানিয়ে প্রকল্পগুলোতে বরাদ্দ দেয়া বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের আশঙ্কা করেছেন তারা। এদিকে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ করে বাঁধের টাকায় রাস্তা নির্মাণ করায় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বরাবরে কাজ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন সুরমা ইউনিয়নের অক্ষয়নগর গ্রামের বাসিন্দারা।
সুরমা ইউনিয়নের চলতি নদীর তীরে অক্ষয়নগর, উড়ারকান্দা, সাহেবনগর, সৈয়দপুর, মুসলিমপুর গ্রাম অবস্থিত। চলতি নদী তীরবর্তী এলাকা দিয়ে এই গ্রামগুলোর মানুষ ডলুরা-বাঁশতলায় যাতায়াত করে থাকেন। রাস্তার বাম পাশেই আমন জমি ও রবি ফসলের জমি রয়েছে। যেখানে বর্ষায় আমন ধান ও শুষ্ক মৌসুমে রবি ফসল চাষ করে থাকেন স্থানীয় চাষীরা। চলতি অর্থ বছরে ২০১৭-এর কাবিটা নীতিমালা অনুযায়ী ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণে চলতি নদীর বামতীরে অক্ষয়নগর থেকে বাঁশতলা পর্যন্ত ১৩টি পিআইসি’র মাধ্যমে প্রায় তিন কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ইতোমধ্যে এস্কেভেটরের সাহায্যে নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে কয়েকটি প্রকল্পে। বাঁধ নির্মাণে পার্শ্ববর্তী এলাকায় মাটি না পাওয়াসহ মাটি কাটার মেশিন না পাওয়ায় বেশির ভাগ প্রকল্পে এখনও কাজই শুরু হয়নি। স্থানীয়রা জানিয়েছেন অতীতের কোনো সময় এই স্থানে বেড়িবাঁধের কাজ হয়নি। তাছাড়া এই সকল প্রকল্পের সাথে বোরো ফসলের সংশ্লিষ্টতা নেই। বরং বাঁধ দেয়ার কারণে বর্ষায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে আমন ধান ও রবি ফসল চাষ ব্যাহত হবে। তাছাড়া জলাবদ্ধতা দেখা দিতে পারে কয়েকটি গ্রামেও। বোরো ফসল রক্ষার নামে এসব পিআইসি’র মাধ্যমে গ্রামের রাস্তা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। একাধিক অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ করে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারের বিপুল পরিমাণ টাকা অপচয় হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা। মাঠপর্যায়ে যাচাইয়ের মাধ্যমে এসব প্রকল্প বাতিল করার দাবি উঠেছে।
এদিকে বিগত বছরের চেয়ে অধিক প্রকল্প গ্রহণ ও বরাদ্দ বেশি দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাওর বাঁচাও আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। সদর উপজেলায় গত বছর ৯টি পিআইসি’র অনুমোদন দেয়া হলেও চলতি বছরে এর তিনগুন ২৭টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়ার যৌক্তিকতা পাননি তারা। বরং এর মাধ্যমে সরকারের কোটি কোটি টাকা অপচয় করা হবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তারা।
অক্ষয়নগর গ্রামের বাসিন্দা আকমল হোসেন বলেন, কি কারণে বেড়িবাঁধ করা হচ্ছে আমাদের জানা নেই। এখানে বোরো ধান কই। আমরা সারা জীবন আমন ধান ও শাক-সবজি রোপণ করেছি। কোনো কারণ ছাড়াই প্রকল্প গ্রহণ করে বাঁধের টাকায় রাস্তা তৈরি হচ্ছে। এইভাবে সরকারের লাখ লাখ টাকা অপচয় করা হচ্ছে।
হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় বলেন, এবার হাওরের বাঁধ নির্মাণকাজে প্রতিযোগিতা করে প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। গত বছর সদর উপজেলার ৯টি পিআইসির মাধ্যমের হাওর রক্ষা হলেও এবার কোনো কারণ ছাড়াই ২৭টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। একটি ইউনিয়নে ১৩টি প্রকল্পে প্রায় ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। স্থানীয়রা বেড়িবাঁধের কাজে বাধা দিলেও কর্ণপাত করছে না কর্তৃপক্ষ। তিনি বলেন, সরকার বোরো ফসল রক্ষার জন্য টাকা বরাদ্দ দেয়। আর এই টাকায় গ্রামের রাস্তা হচ্ছে। অতীতে যেখানে কোনো দিনও বেড়িবাঁধের কাজ হয়নি সেখানে অহেতুক প্রকল্প গ্রহণ করে সরকারের কোটি কোটি টাকা অপচয় করছে কর্তৃপক্ষ। এসব অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প বাতিলের দাবি জানান তিনি।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সুপারিশে উপজেলা কমিটি এই প্রকল্পগুলো অনুমোদন করে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য জেলা কমিটির কাছে পাঠায়। যাচাই-বাছাই করে জেলা কমিটি চলতি নদীর বাম তীরে ১৪টি প্রকল্পের অনুমোদন দেন। সম্প্রতি এই প্রকল্পগুলোর কাজ নিয়ে দুইটি পক্ষ হয়ে বিরোধ দেখা দেয়। সরেজমিনে গিয়ে কাজগুলো সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। জেলা কমিটির নেতৃত্বে একটি কারিগরি টিম সরেজমিনে দেখে যদি প্রকল্পগুলোর যথার্থতা মনে করে রিপোর্ট দিলে কাজ শুরুর অনুমতি দেয়া হবে, নতুবা বাতিল করা হবে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com