বিশেষ প্রতিনিধি ::
তাহিরপুরে নিখোঁজের তিনদিন পর প্রথম শ্রেণি পড়ুয়া মাদ্রাসাছাত্রের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার ভোর সোয়া ৫টার দিকে উপজেলার চারাগাঁও সীমান্তের বাঁশতলা গ্রামে তোফাজ্জল নামের ওই শিশুর লাশ এক প্রতিবেশীর বাড়ির পেছন থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। ঘাতকরা শিশুটির একটি চোখ উপড়ে ফেলে এবং একটি পা ভেঙে দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক আঘাত করে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে বলে জানায় পুলিশ। নিহত তোফাজ্জল উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের বাঁশতলা গ্রামের জুবায়েল হোসেনের ছেলে। সে বাঁশতলা দারুল হেদায়েত মাদ্রাসার প্রথম শ্রেণির ছাত্র।
পুলিশ ও নিহত শিশুর পারিবার জানায়, উপজেলার সীমান্তবর্তী বাঁশতলা গ্রামের জুবায়েল হোসেনের প্রথম শ্রেণি পড়ুয়া সাত বছর বয়সী শিশু তোফাজ্জল হোসেন গত বুধবার বিকেল থেকে নিখোঁজ হয়। খোঁজাখুঁজির পর না পেয়ে তাকে অপহরণ করা হয়েছে সন্দেহে পরদিন পরিবারের পক্ষ হতে থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়। পরবর্তীতে তাকে উদ্ধারে অভিযানে নামে পুলিশ।
এদিকে, শিশু তোফাজ্জল হত্যাকাণ্ড জড়িত সন্দেহে দাদা, চাচা, ফুফুসহ ৯ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ। এই ঘটনাটি পারিবারিক দ্বন্দ্বের বলি কি-না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনাটিও দিরাইয়ে সাড়ে ৫ বছরের শিশু তুহিন হত্যার মতো তোলপাড় শুরু করেছে।
শনিবার সন্ধ্যায় পুলিশ উপজেলার বাঁশতলার তোফাজ্জলের দাদা জয়নাল, চাচা ইকবাল হোসেন, ফুফু শেফালী বেগম, শিউলী বেগম, প্রতিবেশী হবি রহমান, তার স্ত্রী খইরুন নেছা ও তাদের ছেলে রাসেলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে। এর আগে নিহত তোফাজ্জলের পরিবারের সাথে পূর্ব বিরোধ মামলা-মোকদ্দমার জের থাকায় এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে প্রথম দফায় গ্রামের কালা মিয়া ও তার ছেলে সেজাউল কবিরকে আটক করা হয়। তাদেরকে আলাদা আলাদাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
জানা গেছে, আটককৃত কালা মিয়ার ছেলে সেজাউল কবিরের সঙ্গে নিহত শিশু তোফাজ্জলের ফুফু শিউলী বেগমের বিয়ে হয়। নিহতের পরিবারের লোকজনের অভিযোগ- বিয়ের পরে শিউলীকে নির্যাতন করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়। এ নিয়ে উভয় পরিবারের মধ্যে বিরোধ ও মামলা মোকদ্দমা চলাকালীন অবস্থায় গত বুধবার নিখোঁজ হয় শিশু তোফাজ্জল। নিখোঁজের তিনদিন পর শনিবার ভোর সোয়া ৫টার দিকে বস্তাবন্দি তোফাজ্জলের লাশ পাওয়া যায়।
তোফাজ্জলের পরিবারের অভিযোগ- বৃহস্পতিবার রাতের কোন এক সময়ে অজ্ঞাত পরিচয়ে ৮০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করে পিতার বসতঘরের বারান্দায় শিশুটির পায়ের এক জোড়া জুতাসহ একটি চিঠি ফেলে রেখে যায় কে বা কারা। চিঠিতে লিখা ছিল, শুক্রবার রাতে শিশুরটির পিতার গোয়াল ঘরে ৮০ হাজার টাকা রাখলে রাতের মধ্যে শিশুটিকে তারা অক্ষত অবস্থায় ফেরত দিবে। বিষয়টি থানা পুলিশ বা অন্য কাউকে অবগত করলে শিশুটিকে মেরে ফেলবে তারা। তবে হত্যার অভিযোগ নিহত তোফাজ্জলের ফুফু শিউলীর শ্বশুর কালা মিয়া ও জামাই সেজাউলের দিকে। শনিবার ভোরে ঘটনাস্থলে থাকা থানার টেকেরঘাট পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ এএসআই মো. আবু মুসা শিশুর বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধারের তথ্য নিশ্চিত করে জানান, এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গ্রামের কালা মিয়া ও তার ছেলে সেজাউল কবিরকে আটক করেছে।
পুলিশ ও নিহত শিশুর পারিবারিক সূত্র জানায়, বাঁশতলার জুবায়েল হোসেনের পুত্র তোফাজ্জল হোসেন গত বুধবার বিকেলে নিজ গ্রাম থেকেই নিখোঁজ হয়। নিখোঁজের পর অপহরণ সন্দেহে পরদিন বৃহস্পতিবার পরিবারের পক্ষ হতে দাদা জয়নাল আবেদীন থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। পরবর্তীতে পুলিশ ওই শিশুর সন্ধান পেতে দেশের সব থানায় তার বার্তা ও ই-মেইল প্রেরণ করে।
অপরদিকে মামলা-মোকদ্দমা ও পারিবারিক বিরোধের জের ধরে শিশু তোফাজ্জলকে অপহরণ পরবর্তী হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে এমন সন্দেহ তৈরি হয়েছে। পুলিশও এই সন্দেহে উপজেলার বাঁশতলা গ্রামের কালা মিয়া ও তার ছেলে সেজাউল কবিরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শনিবার ভোরে আটক করে।
শনিবার সন্ধ্যায় তাহিরপুর থানার ওসি মো. আতিকুর রহমান বলেন, দু’দফায় ৯ জনকে এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। তাদেরকে নানা বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
পুলিশ সুপার (পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মো. মিজানুর রহমান জানান, পুলিশের দায়িত্বশীলরা আটককৃতদের নিবিড় পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রেখেছেন। জিজ্ঞাসাবাদে পারিবারিক দ্বন্দ্বসহ অন্যান্য বিষয়ও বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, অধিকতর তদন্ত ছাড়া কিংবা নিশ্চিত না হওয়া অবধি ওই শিশু অপহরণ ও হত্যাকাণ্ডে কে বা কারা জড়িত রয়েছে সে ব্যাপারে আপাতত কিছুই বলা সম্ভব হচ্ছে না। তবে শীঘ্রই এটা জানা যাবে।