1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৫৩ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

যে বেদনার আমিও একজন ভাগীদার : বিজন সেন রায়

  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারী, ২০২০

মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ, জেলা প্রশাসক, সুনামগঞ্জ। তিনি মহান বিজয় দিবসের প্রাক্কালে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্বজনদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছিলেন। এই কার্যক্রম পরিচলনার সময় রফিনগরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের শতবর্ষী জননী ফুলজান বিবি’র সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর। তিনি তখন এই শহীদজননীকে কথা দিয়ে এসেছিলেন, তাঁর শহীদ সন্তান নূরুল ইসলামের কবরের পাশে তাঁকে নিয়ে যাবেন। ডলুরার শহীদসমাধিতে যে-সব শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা সমাহিত হয়ে আছেন তাঁদের মধ্যে একজন এই শহীদ নূরুল ইসলাম।
কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিণতি এই যে, পুত্রের কবরের পাশে যাওয়ার সুযোগ শহীদজননীর হয়নি। গত ৫ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে শহীদজননী ফুলজান বিবি মৃত্যুবরণ করেছেন। এই সংবাদ প্রাপ্তিতে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন যে, তাঁর অন্তরের ইচ্ছা অপূর্ণ থেকে গেছে। ডলুরা শহীদ সমাধির নির্মাণকাজ শেষ হলে শহীদ মাতাকে তাঁর গর্বিত সন্তান বীর শহীদ নূরুল ইসলামের সমাধির পাশে নিয়ে যাবেন বলে কথা দিয়ে এসেছিলেন। নিয়তির অমোঘ বিধানে তাঁর সে-প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা সম্ভব হলো না। নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই শহীদজননী চিরবিদায় নিয়েছেন। কী আর করা। তিনি বেদনার্তচিত্তে লিখেছেন, ‘শহীদ মাতাকে […] ডলুরা শহীদ সমাধি সৌধ-এর কাজ শেষে […] সন্তানের কবরের পাশে নিতে পারলাম না। মা তুমি আমাকে ক্ষমা করো।’
কতজনের কতো ইচ্ছে থাকে। কারও কারও নয়, বলতে গেলে, বেশিরভাগ মানুষের ইচ্ছে ভীষণ অদ্ভুত হয়ে থাকে এবং সেগুলোতে অন্তর্নিহিত থাকে ব্যক্তিগত সুখসমৃদ্ধি চরিতার্থকরণের উত্তেজক দুরন্তপনা। বলা বাহুল্য, দেশমাতৃকার প্রতি প্রগাঢ় টানের সুতোয় বাঁধা শহীদ মুক্তিযোদ্ধার শতবর্ষী জননীকে তাঁর সন্তানের কবরের পাশে নিয়ে যাবার ইচ্ছের মধ্যে সে-আত্মপরায়ণতা নেই। এমন ব্যতিক্রমী প্রয়াসের প্রযতœ সর্বত্র এবং সর্বজনের মধ্যে পরিলক্ষিত হয় না এবং এইরূপ ইচ্ছে প্রসূত প্রচেষ্টার অপূর্ণতার বেদনা সকল হৃদয়বান মানুষকে গভীরভাবে স্পর্শ করে যায়। শহীদজননীকে তাঁর শহীদ পুত্রের কবরের পাশে হাজির করাতে না পারার কষ্ট ব্যক্তিগতভাবে আমারও। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদের ব্যর্থতার বেদনার আমিও একজন ভাগীদার।
মুক্তিযুদ্ধে শহীদের কবরের পাশে শহীদজননীকে নিয়ে যাবার ইচ্ছার অপূর্ণতা এমন একটি বেদনাবোধ, যে-বেদনাবোধের উৎস দেশমাতৃকার প্রতি গভীর মমতা। ৩০ লাখ মানুষের প্রাণের দামে কেনা এই দেশের একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে আমি নিজেও এই মমত্ববোধ থেকে বিচ্যুত নই। যিনি বিচ্যুত তিনিই হতভাগ্য।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com