শামস শামীম ::
শাল্লার মারকুলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কেউ সমাপনী পরীক্ষায় পাস না করায় শিক্ষকদের শোকজ পাঠাচ্ছে উপজেলা শিক্ষা অফিস। গত বছর প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় প্রত্যন্ত এলাকার এই বিদ্যালয়ের ৪৪জন শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন করলেও অংশ নিয়েছিল ৩১ জন। গত ৩১ ডিসেম্বর প্রকাশিত ফলাফলে সবাই অকৃতকার্য হয়েছে। এই ফলাফল লজ্জায় ডুবিয়েছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগকে। তাই কারণ অনুসন্ধান করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এলাকাবাসী ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রধান শিক্ষক বেণু দাসের সঙ্গে স্কুলের অন্য চার সহকারী শিক্ষকের চরম দ্বন্দ্ব চলছে। এই দ্বন্দ্বের কারণে বিদ্যালয়ের চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে পাঠদানে। যার ফলে সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী সকল শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে। অভিভাবকদের অসচেতনতার সুযোগে শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে কোন্দলে যুক্ত থাকায় শিক্ষার মান ক্রমশ নিম্নমুখী হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অবিলম্বে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। এই স্কুলে বর্তমানে ৫ জন শিক্ষক রয়েছেন। ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ২৯৮জন।
উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়ে সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষকদের দ্বন্দ্বের কারণে গত ৫ বছর ধরে স্কুল পরিচালনা কমিটি করা যাচ্ছে না। উপজেলা শিক্ষা অফিসার আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তবে উপজেলা শিক্ষা অফিসারসহ অফিসের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে দহরম-মহরম রয়েছে প্রধান শিক্ষক বিরোধী অন্য চার শিক্ষকের। যে কারণে সংকটের সমাধান হচ্ছেনা বলে অভিযোগ অভিভাবকদের।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, সহকারী শিক্ষকরা ইচ্ছেমতো স্কুলে যাতায়াত করেন। হাজিরা খাতায় জোর করে স্বাক্ষর দিয়েই তারা চলে আসেন। প্রধান শিক্ষকের কথা কোন সহকারী শিক্ষক শুনেননা বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন। শিক্ষা অফিসের লোকজন সহকারী শিক্ষকদের পক্ষে থাকার কারণে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা বলে এলাকাবাসী জানান।
জানা গেছে, ৫ পদের এই স্কুলে সকল শিক্ষকই কর্মরত আছেন। স্কুলটিতে ২০১৮ সালের জুলাই মাসে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন বেণু দাস। তবে এর আগে থেকেই সহকারী শিক্ষক সঞ্জয় দাস নামের একজন ১৩ বছর ধরে শিক্ষকতা করছেন। এর আগে সঞ্জয় দাস জগন্নাথপুরে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে সহকারী শিক্ষক হিসেবে সঞ্জয় দাস ওই এলাকায় চাকরি করায় প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছেন। তার নেতৃত্বে অন্য সহকারী শিক্ষকরাও একজোট। তার নেতৃত্বে সহকারী শিক্ষকরা মাঝে-মধ্যে স্কুলে এসে আবার জোরপূর্বক স্বাক্ষর দিয়েই চলে যান এমন অভিযোগ রয়েছে।
অভিভাবকরা জানান, গত সমাপনী পরীক্ষার আগে প্রধান শিক্ষক বেণু দাস হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। ওই সময় চার সহকারী শিক্ষকদের কেউ স্কুলে যাননি। যার ফলে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা কেউ ভালো করে প্রস্তুতি নিতে পারেনি। এ কারণেই সবাই অকৃতকার্য হয়েছে বলে মনে করেন এলাকাবাসী। জানা গেছে, এই বিদ্যালয়ে বর্তমানে সঞ্জয় দাসের নেতৃত্বে প্রধান শিক্ষকের বিপরীতে গিয়ে সহকারী শিক্ষক সুচিত্রা বৈষ্ণব, সুপ্তমা রানী দাস ও জ্যোতিবালা দাস গ্রুপিং করে স্কুলে অনুপস্থিত থাকেন। এলাকাবাসীর অভিযোগ স্কুলের এই সমস্যার কথা উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে অবগত করলেও তিনি কোন ব্যবস্থা নেন না।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, স্কুল পরিচালনা কমিটি থাকলে সহকারী শিক্ষকরা ইচ্ছেমতো যাতায়াত করতে পারবেন না এ জন্য সঞ্জয় দাসের নেতৃত্বে তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কমিটি করতে দেন না। গত বছর কমিটি গঠনের লক্ষ্যে ৭টি সভা ডাকা হলেও কোনটিতেই উপস্থিত হননি সঞ্জয় দাস। যার ফলে ৫ বছর ধরে কমিটি ছাড়াই কার্যক্রম চলছে। এদিকে সমাপনী পরীক্ষায় সবাই অকৃতকার্য হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেছেন গ্রামবাসী। তারা অবিলম্বে সঞ্জয় দাসসহ অন্যান্য শিক্ষকদের বদলির দাবি জানিয়েছেন।
গ্রামের অভিভাবক ওয়াজিদুর রহমান কওমি বলেন, আমাদের বিদ্যালয়টিকে ধ্বংস করে দিচ্ছেন শিক্ষকরা। প্রধান শিক্ষকের কথা কেউ শুনেনা। সঞ্জয় দাসের নেতৃত্বে অন্য তিন শিক্ষক একজোট হয়ে ইচ্ছেমতো বিদ্যালয়ে যাতায়াত করেন। সমাপনী পরীক্ষার ১৫-২০ দিন আগে বলতে গেলে স্কুল বন্ধই ছিল। কোন শিক্ষার্থী পরীক্ষার পরামর্শ পায়নি, প্রস্তুতি নিতে পারেনি। তিনি বলেন, আমরা একাধিকবার শিক্ষা অফিসারকে এ বিষয়ে অভিযোগ করলেও তারা সঞ্জয় দাসের পক্ষেই অবস্থান করে স্কুল ধ্বংসে ভূমিকা রাখছে। এদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে।
প্রধান শিক্ষক বেণু দাস বলেন, আমি মাত্র দেড় বছর আগে স্কুলে আসি। এসে দেখি স্কুলে কোন সিস্টেম নেই। সরকারি নিয়মে স্কুল চালাতে চাইলে সঞ্জয় দাসের নেতৃত্বে অন্য শিক্ষকরা একজোট হয়ে আমার বিরোধিতা করেন। তবে সমাপনী পরীক্ষার আগে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ায় অন্য চার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতিতে সহযোগিতা করেনি বলে জানান। তিনি বলেন, স্কুলটিকে বাঁচাতে হলে শিক্ষা অফিসকে কঠোর হতে হবে। আমি দোষী থাকলে আমার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) দীন মোহাম্মদ বলেন, ফলাফল খারাপের জন্য সকল শিক্ষকের নামে শোকজ পাঠানো হচ্ছে। সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে শিক্ষা অফিসের লোকজন সহকারী শিক্ষকদের পক্ষে নন বলে তিনি জানান।