সুনামগঞ্জের যে কয়টি স্থানীয় পত্রিকা রয়েছে তার মধ্যে দৈনিক সুনামকণ্ঠ অন্যতম জনপ্রিয়। ২০০১ সালে সাপ্তাহিক সুনামকণ্ঠের যাত্রা শুরু হলেও দৈনিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে ২০১৫ সালে। সুনামকণ্ঠের সাথে আমার যাত্রা শুরু হয় ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে। সুনামকণ্ঠের মাধ্যমে আমার সাংবাদিকতার শুরু। যমুনা টেলিভিশনের সাংবাদিক মাহমুদুর রহমান তারেক ভাইয়ের হাত ধরে সুনামকণ্ঠে আমার আসা। ২০১৬ সালে একটি বাস্কেটবল প্রতিযোগিতার খবর প্রকাশের মাধ্যমে আমার লেখার শুরু। পরবর্তীতে বিপিএলে জুয়া, সীমান্তে মাদক, হাওরের ধান, বাঁধের কাজে দুর্নীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে সংবাদ লেখার সক্ষমতা ও শিক্ষা পেয়েছি সুনামকণ্ঠ থেকেই।
২০১৭ সালের দৈনিক সুনামকণ্ঠের সম্পাদক বিজন সেন মামা’র কাছ থেকে সংবাদ সংগ্রহের জন্য পেয়েছিলাম পুরোনো ক্যাটাগরির ৮০ সিসি একটি মোটরসাইকেল। সংবাদ সংগ্রহের ক্ষেত্রে এই মোটরসাইকেলই ছিল আমার সারথী। প্রতিদিন এই মোটরসাইকেল চালিয়ে গেছি অনেক জায়গায়। মজার ব্যাপার হলো আমি মোটর সাইকেল চালানোর পাশাপাশি টেনে নিয়েছি অনেকবার। কারণ পকেট ফাঁকা থাকলে মোটরসাইকেলে তেল ক্রয়ের ক্ষমতা বেশি একটা থাকতো না। তখন বিজন মামার কাছে গিয়ে বলতে হতো- মামা একশ টাকা দেন তেল কিনবো। অনেক সময় বিজন মামা নিজেই পাম্পে নিয়ে যেতেন ২০০-১০০ টাকার তেল কিনে দিতেন। কিন্তু মোটরসাইকেলকে নিয়ে আমার দুঃখ আমি কখনো ওই মোটরসাইকেলের ফুল ট্যাংকি তেল ভরতে পারিনি।
এখন আসি আমার সাংবাদিকতার শুরুতে। যমুনা টেলিভিশনের সাংবাদিক ও দৈনিক সুনামকণ্ঠের প্ল্যানিং এডিটর মাহমুদুর রহমান তারেক ভাইয়ের মাধ্যমে আমার আসা। তারেক ভাইকে খোঁজতে আমার বেশ একটা বেগ পেতে হয়েছে। উনার ফোন নাম্বার খোঁজতে গিয়ে অনেকের কাছে কথাও শুনতে হয়েছে। কিন্তু ইচ্ছা ছিল উনাকে খোঁজে বের করবোই, তাই ফেসবুকে তাঁকে খোঁজে পেয়ে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠানোর পর তিনি সাথে সাথে তা গ্রহণ করেন। তখন ফোন নাম্বার চাইতেই পেয়ে যাই। কথা হয় উনার সাথে। বললেন হোসেন বখত চত্বরে সন্ধ্যায় এসো। আমিও সন্ধ্যায় চলে গেলাম উনার কথায়। উনার কাছে ‘পরীক্ষা’ দেওয়ার পর ২-৩ দিন পরেই এক সন্ধ্যায় সুনামকণ্ঠে অফিসে নিয়ে যান আমাকে। সেখানে গিয়ে পরিচয় হয় সুনামকণ্ঠের সম্পাদক বিজন সেন রায় মামার সাথে। তিনি আমাকে আমার পড়াশুনা, কাজের আগ্রহ ও পরিবারের সদস্যদের খোঁজ-খবর নেন। দীর্ঘক্ষণ আলোচনার পর তিনি বললেন আজ থেকেই শুরু করো। আমি তখনো জানিনা কিভাবে সংবাদ লেখতে হয়। তখন সুনামকণ্ঠের সিনিয়র সাব-এডিটর বিশ্বজিৎ সেন পাপন ভাইয়ের সাথে পরিচয় হয়। তাছাড়া তখন ছিলেন সুনামকণ্ঠের ক্রাইম রিপোর্টার আমিনুল ইসলাম ভাই, সিনিয়র সাংবাদিক ও লেখক শামস শামীম ভাই, মিল্লাত ভাই, করিম আঙ্কেল ও সংবাদপত্রের গ্রাফিক্স ডিজাইনার নুরু ভাইয়ের সাথে। পরিচয় হয় সুনামকণ্ঠের অফিস স্টাফ স্নেহভাজন হাম্মাদ মিয়ার সাথে।
বিশ্বজিৎ সেন পাপন ভাই আমাকে নিজের ভাইয়ের মতোই সংবাদ লেখার ধরণ, বানান, সময়ের সাথে সময়ের সংবাদ বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা দিয়েছেন। কোন বিষয়ে কিভাবে যেতে হবে ধারণা তিনি দিয়েছে। যদিও আমি কম্পিউটার চালানো শিখেছি ২০১৪ সালে কিন্তু অভ্যাস না থাকায় ভুলে যাওয়ায় পাপন ভাই আবার সেটা শিখিয়ে দিয়ে আমাকে কম্পিউটারে বাংলা লেখার সম্পূর্ণ পারদর্শী করেছেন। বানান ভুলের জন্য খেয়েছি বকাও, আমার বেশিরভাগ মানুষের নামে ভুল হয়ে যেতো এর জন্য বকা খেতে হত। বকা খাওয়াটা জরুরিই ছিল, তা না হলে পত্রিকার কাজগুলো হয়তো শেখা হতো না। এছাড়া কি-বোর্ডের দিকে তাকিয়ে লেখার জন্য বকা খেয়েছি, উত্তম-মধ্যমও খেয়েছি কয়েকবার। আমার সাংবাদিকতার শিক্ষক মাহমুদুর রহমান তারেক ভাইয়ের বকা খেয়ে এখন আর তেমন কি-বোর্ডের দিকে আমার তাকাতে হয় না। তিনিও আমাকে সব সময় নিজের আপন ভাইয়ের মতো স্নেহ করেছেন এবং এখনো আমাকে আদর আর বকা দুটোই দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি যদি সেদিন আমাকে সাংবাদিকতায় নিয়ে যেতে না চাইতেন তাহলে হয়তো এমন ‘স্বপ্ন সুন্দর’ জগতে আমার আসা হতো না। কাজের প্রতি সাহস পেয়েছি তাঁর কাছ থেকেই, বিভিন্ন সংবাদের আইডিয়া থেকে শুরু করে ছবি তোলার নিয়মটাও তিনি শিখিয়ে দিয়েছিলেন।
সুনামকণ্ঠের সাবেক ক্রাইম রিপোর্টার আমিনুল ইসলাম ভাই আমাকে দিয়েছেন অপরাধ বিষয়ে সংবাদ লেখার ধারণা। দৈনিক সুনামকণ্ঠের আমার দ্বিতীয় সংবাদটি ছিল “বিপিএল ঘিরে জুয়া বাণিজ্য জমজমাট”। এই নিউজটির ক্ষেত্রে শ্রদ্ধেয় আমিনুল ভাইয়ের সহযোগিতা পেয়েছি আমি। তিনি যদি সেদিন একান্তে না বাসে আমাকে সংবাদ লেখার ধারণা না দিতেন তাহলে আমি হয়তো এই সংবাদটি করতে পারতাম না। তাছাড়া আমরা একসাথে কাজ করেছি একসাথে। যার মধ্যে সুনামগঞ্জ সরকারি সতীশ চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭৫ বছর পূর্তি উৎসব অন্যতম। দুইজন ভাগাভাগি করে কাজ করেছি। সংবাদের স্বার্থে আমাদের রাত জেগে থাকতে হয়েছে অনেক দিন।
সুনামকণ্ঠের প্রধান বার্তা সম্পাদক শামস শামীম ভাইয়ের কাছ থেকে আমি আইডিয়া পেয়েছি হাওর ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে সংবাদ লেখার। অবহেলিত মুক্তিযোদ্ধাদের কথা লিখতে সহায়তা করেছেন সবসময়। আমার লেখাগুলো তিনি বিভিন্ন সময় ঠিকঠাক করে দিতেন।
আর রেজাউল করিম আঙ্কেল আমাকে সবসময় ছেলের মতোই আদর করেছেন। তিনি আমাকে প্রথম সংবাদ কাভারের জন্য নিয়ে গিয়েছিলেন সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে। তাঁর সাথে বসে উদ্বোধন দেখলাম বাস্কেটবল খেলার। সাথে শিখালেন কিভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হয় প্রতিটা জিনিস। তাছাড়া মিল্লাত ভাই, নুরু ভাই তাদের সাথে অনেক আড্ডা হতো। মিল্লাত ভাই বিভিন্ন সময় আমাকে বিভিন্ন ডিজাইন বা আমার ব্যক্তিগত কাজে সহায়তা করেছেন যার জন্য আমি তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ। তাছাড়া কবি ও সাংবাদিক শামছুল কাদির মিছবাহ মামা ও সাংবাদিক আকরাম উদ্দিন ভাই আমাকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন।
সবমিলিয়ে সুনামকণ্ঠের প্রতিটা মানুষ আমাকে নিজের মতো করে গড়ে তুলেছেন। তাঁদের দেওয়া শিক্ষা হয়তো আমি আর কারো কাছে পাবো না। সুনামকণ্ঠের প্রতি আমার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা সবকিছুর ঊর্ধ্বে থাকবে। সাংবাদিকতায় সৎ থাকার সম্পূর্ণ শিক্ষা আমি দৈনিক সুনামকণ্ঠ থেকেই পেয়েছি।
গেল রমজান মাসে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে খুব সকাল বেলা সড়ক দুঘর্টনার পড়ি আমি ও আমার এক সহকর্মী বড়ভাই আশিকুর রহমান পীর। তখন সবার আগে আমি যাকে ফোন করি তিনি আমাদের সুনামকণ্ঠের সিনিয়র সাব-এডিটর পাপন ভাইকে। সবার আগে তিনি হাসপাতালে গিয়ে অপেক্ষা করেন আমার আসার। নিজের আপন ভাইয়ের মতো মাথায় হাত বুলিয়ে সান্ত¦না দিয়েছেন। চিকিৎসা দিতে দেরি করায় এক ডাক্তারকে ধমক দিতেও শুনেছিলাম। তাঁর প্রতি আমি বিশেষ কৃতজ্ঞ। কারণ তিনি যদি হাসপাতালে না আসতেন তাহলে সরকারি হাসপাতালের যে অবস্থা আমার চিকিৎসা হয়তো দুপুরে শুরু হতো।
দৈনিক সুনামকণ্ঠ ৬ বছরে পদার্পণ করেছে। আমি বিশ্বাস করি- দৈনিক সুনামকণ্ঠ লেখনির মাধ্যমে মন জয় করেছে সুনামগঞ্জের প্রতিটা মানুষের হৃদয়। সুনামকণ্ঠ প্রগতির পথে আরো এগিয়ে যাবে ‘সত্য প্রকাশে দ্বিধাহীন’ হয়ে – এ প্রত্যাশা।