1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৫৮ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

এমএ মান্নান হাওরবাসীর স্বপ্নদ্রষ্টা : ইকবাল কাগজী

  • আপডেট সময় বুধবার, ১ জানুয়ারী, ২০২০

‘কিন্তু এ কথা বলতে দ্বিধা নেই ব্যক্তি সাইফুর রহমান সিলেট শহরের টিলাগড় সংলগ্ন এলাকায় এক কিলোমিটারে যে উন্নয়ন করেছিলেন তা আর কোনও আমলে হয়নি। অর্থমন্ত্রী এমএ মুহিতের মতো সৎ, নিষ্ঠাবান, পণ্ডিত একজন অর্থমন্ত্রী পাওয়ার পরও আওয়ামী লীগের উন্নয়ন দশকেও সিলেট বেশ বঞ্চিত। রুটিন উন্নয়নের বাইরে দৃশ্যমান বড় কোনো উন্নয়ন অগ্রগতি নেই। সরকারের অগ্রাধিকার প্রাপ্ত দশ মেগা প্রজেক্টের মতো একটি বড় প্রকল্প সিলেট অঞ্চলে নাই।’ এই ধার করা বক্তব্যটি দিয়ে শুরু করতে চাই। বক্তব্যটি জনৈক আলমগীর শাহরিয়ারের। আমি তাঁকে চিনি না। ব্যক্তি তাঁর সঙ্গে অপরিচয়ের দূরত্ব যতোই থাক, তাঁর বক্তব্যটির মর্মার্থের সঙ্গে আন্তরিকতা স্বীকার করে নিচ্ছি। এমনি ভাবনা কালেভদ্রে যে-কোনও সচেতন মানুষের মনেই উদ্রেক হতে পারে। হওয়াটাই স্বাভাবিক।
ক্ষমতাধর রাজনীতিক ব্যক্তিগণ অনেক কীছু পারেন। যেমন জিয়া পারেন রাজনীতিবিদদের জন্য রাজনীতিকে ‘প্রব্লেম্যাটিক’ করে দিতে, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যান পারেন জাপানের হিরোসিমা ও নাগাসাকিতে দু’টি অ্যাটম বোমা ফাটিয়ে দিতে, ট্রাম্প পারেন অন্তরীক্ষ যুদ্ধের আগাম প্রস্তুতি নেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করতে। অপরদিকে বঙ্গবন্ধু পারেন দেশের মানুষের মুখে হাসি ফুটাবার জন্যে সমাজতন্ত্রের কার্যক্রম শুরু করতে, কিংবা মাহাথির মোহাম্মদ পারেন নিয়ন্ত্রিত পুঁজিবাদকে কাজে লাগিয়ে দেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে। পৃথিবীর সব দেশে, সব কালে দু’ধরনের রাজনীতিবিদ এসেছেন। দেশের মঙ্গলের প্রশ্নে কিংবা জনহিতৈষণার প্রশ্নে ইতিবাচক অথবা নেতিবাচক ভূমিকা পালন করেছেন তাঁরা এবং তাঁদের নিজস্ব কার্যক্রমের ভিত্তিতে তাঁরা নিন্দিত বা নন্দিত হয়েছেন জনগণের কাছে।
প্রকৃতপ্রস্তাবে সত্য এটাই যে, ক্ষেত্র বিশেষে রাজনীতিবিদরা যেমন ক্ষমতার অপব্যবহার করেন, বিপরীতে তেমনি তাঁদের ক্ষমতার জনকল্যাণমূলক ব্যবহারের দৃষ্টান্তও বিশ্ব পরিসরে একেবারে কম নয়। চট্টগ্রামের ফকা চৌধুরী (ফজলুল কাদের চৌধুরী) পাকিস্তান আমলে একদিনের ক্ষমতা পেয়ে সিলেটের অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামে নিয়ে গিয়েছিলেন বলে একটি গল্প প্রচলিত আছে। ফলে চট্টগ্রাম সিলেটের থেকে শত বছর এগিয়ে গেছে। ইতিহাস বলছে : সম্রাট শাহজাহানের মেয়ের ইংরেজ চিকিৎসক নিজের জন্য কীছু না চেয়ে তাঁর স্বদেশ ইংল্যান্ডের জন্য ভারতবর্ষে বাণিজ্য সুবিধার অনুমতি চেয়ে নিয়ে গিয়ে প্রকৃতপ্রস্তাবে ভারতে ব্রিটিশ উপনিবেশ স্থাপনের দ্বারোদঘাটন করেছিলেন। এইসব ঐতিহাসিক গল্পের নিহিতার্থ একটাই : যাঁরা দেশের জন্য মানুষের জন্য কাজ করেন তাঁরা প্রকৃত মানুষ, তাঁরাই ইতিহাসের নিয়ামক শক্তি।
সুনামগঞ্জ নিয়ে লিখতে বসলেই সুনামগঞ্জকে প্রথমেই পশ্চাৎপদ বলে দাগিয়ে দিতে হয়। কেউ কেউ অপেক্ষাকৃত পশ্চাৎপদ বলে সুনামগঞ্জকে চিহ্নিত করেন। বিশেষ কোনও এলাকাকে পশ্চাৎপদতার অপবাদ থেকে মুক্ত করতে গেলে আজকের যুগের রাজনীতিবিদদেরকে কাজ করতে হয় অভিভাবকের মতো, সেই বিশেষ এলাকাটির জন্যে। আমাদের সুনামগঞ্জ এমন একটি এলাকা যেখান থেকে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে প্রতিথযশা রাজনীতিবিদেরা ব্রিটিশ আমল থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় অংশীদার ছিলেন। তাঁরা ইচ্ছে করলেই জলজঙ্গলের দেশ সুনামগঞ্জের উন্নয়নের জন্য অল্পবিস্তর হলেও কীছু একটা করতে পারতেন। কিন্তু ইতিহাস বলছে তাঁরা সরকার নির্ধারিত ‘রুটিন উন্নয়নের বাইরে দৃশ্যমান বড় কোনো উন্নয়ন’ বাগিয়ে নিয়ে আসতে পারেননি সুনামগঞ্জের জন্য। নামধাম উল্লেখের কোনও প্রয়োজন নেই। ইতিহাসের সত্য এটাই। ইতিহাস বলছে জাতীয় বাজেটে আজ পর্যন্ত সুনামগঞ্জ যে-পরিমাণ রাজস্ব জমা করেছে তার অনুপাতে কোনও উন্নয়নই এখানে হয়নি। পাকিস্তান আমলে পূর্ব পাকিস্তানের আয় দিয়ে যে-ভাবে পশ্চিম পাকিস্তানে উন্নয়ন কাজ হয়েছে তেমনি সুনামগঞ্জের আয় দিয়ে দেশের অন্য অঞ্চলের উন্নয়ন হয়েছে। ভুলে গেলে চলবে না সুনামগঞ্জের বালু, পাথর, ধান, মাছ ছাড়া দেশের চলে না অথচ এ অঞ্চলের উন্নয়নে কারও খেয়াল নেই। তা সুনামগঞ্জের যাঁরা জনপ্রতিনিধি তাঁরা যদি উদাসীন থাকেন অন্য অঞ্চলের জনপ্রতিনিধিরা কোন দুঃখে সুনামগঞ্জের হয়ে সুনামগঞ্জের জন্য কাজ বাগিয়ে দেবেন? তা কী করে হয়? যাঁরা সুনামগঞ্জের তাঁদেরকেই সুনামগঞ্জের হতে হবে। সুনামগঞ্জের হয়ে কথা বলতে হবে, সরকারের কাছ থেকে কাজ বাগিয়ে আনতে হবে। একজন সাইফুর রহমান যদি মৌলভীবাজারের হয়ে মৌলভীবাজারে উন্নয়নের বন্যা বইয়ে দিতে পারেন তো সুনামগঞ্জের একজন সুনামগঞ্জের জন্য কেন তা পারবেন না? সুনামগঞ্জের যাঁরা জনপ্রতিনিধি হয়ে রাষ্ট্রক্ষমতার স্বাদ নিয়েছেন তাঁরা সুনামগঞ্জের জন্য জাতীয় বাজেটে সুনামগঞ্জ হতে আহরিত রাজস্বের অনুপাতে উন্নয়নের ভাগ আদায় করে নিয়ে আসার বিষয়ে উদাসীন অথবা অপারগ ছিলেন। ব্রিটিশ আমল গেল, পাকিস্তান আমল গেল, বাংলাদেশ আমলের প্রায় অর্ধশতাব্দী অতিবাহিত হতে চললো সুনামগঞ্জের জনপ্রতিনিধিরা রাষ্ট্রক্ষমতায় গিয়ে সুনামগঞ্জের অভিভাবকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে না পারার কারণে সুনামগঞ্জের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়েনি এতোদিন। এরকম ভাবনা যে-কেউ ভাবতেই পারেন। আর এমন ভাবনা কারও হলে সেটা একেবারে অকারণ ও অসঙ্গত কোনও ভাবনা হবে না, বরং তাতে ঐতিহাসিক সত্যেরই প্রকাশ ঘটবে।
গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠের একটি সংবাদশিরোনাম ছিল, “বিশ্ববিদ্যালয় পেল সুনামগঞ্জ ॥ আনন্দে ভাসছে জেলাবাসী, বিভিন্ন স্থানে মিষ্টি বিতরণ, আনন্দ মিছিল”। এই আনন্দের জোয়ারে ভাসতে পারতো সুনামগঞ্জ অনেক আগেই। কিন্তু ভাসেনি। আমাদের জনপ্রতিনিধিরা সরকারের দরবার থেকে এতোদিন বিশ্ববিদ্যালয়টি বাগিয়ে আনতে পারেননি। এই কাজটি পেরেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এমপি। তাঁকে ধন্যবাদ কিংবা অভিনন্দন জানানোর কোনও প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। তবে এইটুকু বলার বিশেষ প্রয়োজন বোধ করছি যে, সুনামগঞ্জের ইতিহাসে তাঁর এই কৃতিত্বের কোনও তুলনা নেই। এক সংবাদপ্রতিবেদনে পড়লাম, মন্ত্রিপরিষদের সভা শুরুর আগে প্রত্যেক সদস্যকে তিনি সুনামগঞ্জ তথা হাওরবাসীর আকাক্সক্ষার প্রতি সহানুভূতিশীল থাকার জন্যে বিনয়াবনতচিত্তে অনুরোধ করেছেন। পড়েই আমার মনে প্রশ্ন জেগেছে ইতোপূর্বে কেউ কি এমনটি করেছেন? না কি তাঁরা রুটিন উন্নয়নের বাইরে কোনও কাজের প্রতি অনুরাগী ছিলেন না? যদি অনুরাগী না হয়ে থাকেন, রুটিন উন্নয়নের বাইরে কোনও কাজ সুনামগঞ্জের স্বার্থে না করে থাকেন তবে তাঁরা প্রকৃত জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেননি, এতে কারও কারও কাছে প্রতিপন্ন হতে পারে যে, তাঁরা (অতীতের জনপ্রতিনিধিরা) জনগণের ভোট প্রার্থনা করেছিলেন জনপ্রতিনিধির মর্যাদা পেতে, জনগণের পক্ষে দায়িত্ব পালন করতে নয়।
সে যা-ই হোক। আমি বলবো, অতীতে যা সম্ভব করতে পারেননি সুনামগঞ্জের জনপ্রতিনিধিরা কেউ, এবার এমএ মান্নান সেটা সর্বোত্তমরূপে পেরেছেন। জনআকাক্সক্ষা বাস্তবায়নে তাঁর এই দক্ষতা আগামী প্রজন্মের জন্য পাথেয় হয়ে থাকবে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “সুনামগঞ্জ জেলা বাংলাদেশের একটি পশ্চাৎপদ এলাকা। শিক্ষায় তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে পড়া এই অঞ্চলে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নেই। পিছিয়ে থাকা সুনামগঞ্জ জেলার শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ ও শিক্ষার মানোন্নয়নে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন জরুরি।” এই জরুরি কথাটার উপর একটু জোর দিতে চাই। ফকা চৌধুরী চট্টগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে গিয়েছিলেন, এতে করে চট্টগ্রামের মানুষেরা শিক্ষা লাভের সুযোগ পেয়েছে। শিক্ষা মানুষের কাজের দক্ষতাকে বৃদ্ধি করে। দক্ষতা হলো প্রকৃতিকে জয় করার পারঙ্গমতা, কাজের ক্ষমতা। শিক্ষা মানুষকে কাজের মানুষ করে তোলে। মন্ত্রিসভায় সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের খসড়া অনুমোদন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সুনামগঞ্জের মানুষের, বিশেষ করে হাওরাঞ্চলের মানুষের, ভবিষ্যৎ জীবনসংগ্রামে পরাজয়ের মাত্রা ধরে নেওয়া যায় হ্রাস পেয়ে শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে এবং জয়ের মাত্রা শতভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিষয়টা এইভাবে একটু ভেবে দেখতে বলি, কেবল তা হলেই এমএ মান্নান প্রকৃতপ্রস্তাবে সুনামগঞ্জের জন্য কী করতে পেরেছেন তার তাৎপর্য ও গুরুত্ব যৎকিঞ্চিৎ হৃদয়ঙ্গম করা সম্ভব হবে, অন্যথায় নয়। একজন মানুষের জীবনে এমন একটি কাজই যথেষ্ট, আর যতো কাজই তিনি করে যান না কেন, এই কাজের সমান তো আর কোনও কাজ তিনি সম্ভবত করে যেতে পারবেন না, শত চেষ্টা করলেও না। এবং এমন একটি কাজ সম্পন্ন করার যোগ্যতার কোনও পরিমাপ হয় না। এমন কাজকে মাপার কোনও পরিমাপক জগতে নেই। এমন কাজের আবার প্রশংসা কী? এমন বিরাট কাজের প্রসারতাকে কি প্রশংসার সম্পন্নতা দিয়ে ধরা যায়? কেবল বলা যায়, এমএ মান্নানের নাম মানুষের মাঝে মিশে গিয়ে জাগরুক থাকবে চিরকাল, কোনও দিন মুছে যাবে না।
একজনের কাছে অভিমত চেয়েছিলাম। তিনি বলেছেন : এমএ মান্নান না কি বিনয়ী, সময়নিষ্ঠ, সৎ, সজ্জন, স্বচ্ছ, স্পষ্টভাষী, প্রগতিশীল ইত্যাদি ইত্যাদি অনেক কীছু। তাতে কী? এমন লোকের অভাব নেই দেশে। সুনামগঞ্জেও আছেন অনেক জন। এসব গুণ দিয়ে আর যাই হোক মানুষের জীবনোন্নয়নের জন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয় হাসিল করা যায় না। চাই মানুষের জন্য কাজ করার গুণ, যে-কাজ হাজার বছর ধরে মানুষের জীবনকে আরও আরও উন্নত, সহজ, সুখী ও সমৃদ্ধ করে তুলবে নিরন্তর, প্রতি মুহূর্তে।
হাওরবাসীর স্বপ্নদ্রষ্টা এমএ মান্নান। তিনি পুুরুষোত্তম। তিনি তো প্রশংসার বাইরের এক লোক। প্রশংসায় তো তাঁর বিরাটত্বকে ধরা যায় না, ধরার অন্য কোনও উপায়ও নেই। সুতরাং কেবল বলি : হে পুরুষোত্তম, তোমাকে ভালোবাসি।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com