শহীদনূর আহমেদ ::
৬ মাস ধরে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালসহ ১১ উপজেলার স্বাস্থ্যবিভাগে নিয়োগপ্রাপ্ত আউটসোর্সিংয়ের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা। বেতনের জন্য সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও সিভিল সার্জনের কাছে বারবার আবেদন-নিবেদন করলেও কর্তৃপক্ষের আশ্বাসই এখন ‘নাভিশ্বাস’ হয়ে দাঁড়িয়েছে আউটসোর্সিং কর্মীদের কাছে। কবে এই আশ্বাসের সমাপ্তি হবে তা জানেন না কেউই।
এদিকে টানা ৬ মাস বেতন-ভাতা না পাওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন আউটসোর্সিং কর্মীরা। দ্রুততম সময়ের মধ্যে বেতন-ভাতা পেতে সংশ্লিষ্টদের কাজে দাবি জানিয়েছেন তারা। নইলে আন্দোলনে নামারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
জানাযায়, চলতি বছরের ১ মে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালসহ ১১ উপজেলার স্বাস্থ্যবিভাগে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি পর্যায়ে ২৩৪ জন আউটসোর্সিং কর্মী নিয়োগ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। আউটসোর্সিং-এর কাজটি পায় অনেষ্ট সিকিউরিটি সার্ভিস নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নিয়োগের পর আউটসোর্সিং কর্মীদের একটি উৎসব ভাতাসহ দুই মাসের বেতন প্রদান করা হলেও গত জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ মাসের বেতন-ভাতা বকেয়া রয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে।
সিভিল সার্জন ও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানাযায়, আউটসোর্সিং কর্মীদের গত ৫ মাসের বকেয়া সেলারি সিট স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাস করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে।
কিন্তু অন্য জেলায় অফিস সহকারী পদে কয়েকজন কর্মী হাইকোর্টে রিট করায় সারাদেশের ন্যায় সুনামগঞ্জেও আউটসোর্সিং কর্মীদের বেতন ছাড়ে বিলম্ব হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. আশুতোষ দাশ। তবে সকল জটিলতার অবসান ঘটিয়ে দ্রুতই আউটসোর্সিং কর্মীরা বেতন পাবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও সিভিল সার্জন।
এদিকে বেতন ছাড়ে কর্তৃপক্ষের এমন আশ্বাস ‘নাভিশ্বাস’ হয়ে দাঁড়িয়েছে আউটসোর্সিং কর্মীদের। বাসা ভাড়া, যাতায়াত খরচসহ পরিবারের দৈনন্দিন ব্যয় নির্বাহ করতে হিমসিমে পড়তে হচ্ছে আউটসোর্সিং কর্মীদের। অনেকেই ধারদেনা করে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। দীর্ঘদিন বেতন না পাওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন কাটাচ্ছেন আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগ পাওয়া কর্মীরা। বেতনের দাবিতে সম্প্রতি সিভিল সার্জন কার্যালয়ে অবস্থান কর্মসূচি ও লিখিত আবেদন করেছেন তারা।
মিজানুর রহমান, ইউসুফ আলম, আলী আহসান, শোহেলা বেগমসহ একাধিক আউটসোর্সিং কর্মী জানান, দীর্ঘদিন ধরে কোনো বেতন পাচ্ছি না আমরা। ঠিকাদার ও সিভিল সার্জনের সাথে বেতনের জন্য যোগাযোগ করা হলে এ মাসে পাবে, ঐ মাসে পাবে, এই কথা বলছেন তারা। এভাবে আর কত দিন। আমাদের ছেলে-মেয়ে নিয়ে আমরা মানবেতর জীবনযাপন করছি। কি করে পরিবারের ব্যয় নির্বাহ করবো ভেবে পাচ্ছি না। আমাদের অনেকেই বাসা ভাড়া দিতে পারছেন না। ধারদেনা করে চলতে হচ্ছে। দ্রুত বেতন না দিলে আন্দোলনে নামা ছাড়া আমাদের কোনো উপায় থাকবে না।
এ ব্যাপারে অনেস্ট সিকিউরিটি সার্ভিস লিমিটেডের ঠিকাদার নাসির উদ্দিন বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে সেলারি সিট পাস হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ে টাকা ছাড়ারের জন্য জমা দেয়া হয়েছে। কিছু জটিলতার কারণে বিলম্ব হচ্ছে। আশা করছি দ্রুত অর্থ ছাড় হবে।
সিভিল সার্জন ডা. আশুতোষ দাশ বলেন, সারাদেশে আউটসোর্সিং কর্মীদের বেতন আটকে আছে। অফিস সহকারী পদে নিয়োগ নিয়ে হাইকোর্টে রিট হওয়ায় অর্থ ছাড়ের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে তারা বেতন পাবেন।