সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
জামায়াতের মুখপত্র হিসেবে পরিচিত দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার সম্পাদক আবুল আসাদকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের হওয়া এক মামলায় তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। শনিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মইনুল ইসলাম এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া জামায়াত নেতা কাদের মোল্লাকে গত ১২ ডিসেম্বর সংগ্রামের প্রতিবেদনে ‘শহীদ’ বলে উল্লেখ করা হয়।
ওই সংবাদ প্রকাশের পর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আফজাল বাদী হয়ে দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক আবুল আসাদের বিরুদ্ধে রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা (নং-২৪) করেন।
মামলায় আবুল আসাদকে গ্রেফতার দেখিয়ে শনিবার আদালতে হাজির করে পাঁচদিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হাতিরঝিল থানার উপ-পরিদর্শক গোলাম আজম। শুনানি শেষে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
এর আগে কাদের মোল্লাকে ‘শহীদ’ উল্লেখ করে প্রতিবেদন প্রকাশের প্রতিবাদে শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর হাতিরঝিলে দৈনিক সংগ্রামের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’র ব্যানারে কয়েকজন যুবক।
এরপর সন্ধ্যার দিকে সংগ্রাম কার্যালয়ের ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় তারা পত্রিকা পুড়িয়ে প্রতিবাদ জানান এবং সম্পাদককে গ্রেফতারসহ পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধের দাবি জানান।
এ অবস্থায় ওইদিনই সন্ধ্যা সাতটার দিকে সংগ্রামের কার্যালয় থেকে সম্পাদক আবুল আসাদকে হেফাজতে নেয় হাতিরঝিল থানা পুলিশ। সে সময় পুলিশ জানায়, আবুল আসাদকে হেফাজতে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক শনিবার সকালে সাংবাদিকদের বলেন, “ওরা একাত্তর সালে যে ধৃষ্টতা দেখিয়েছে, তা এখনো অব্যাহত আছে। এ ঘৃণ্য কাজের বিরুদ্ধ রাষ্ট্রীয়ভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
মামলার বাদী মোহাম্মদ আফজাল এজাহারে বলেছেন, “বিবাদীগণ পর¯পর যোগসাজশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আঘাত করিয়া উসকানিমূলক তথ্য প্রচার করতঃ না দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বকে ও সংবিধানকে অস্বীকার করিয়া রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ করিয়াছে।”
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করলে জামায়াতের সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লাকে নিয়ে আসা হয় বিচারের কাঠগড়ায়।
তার বিরুদ্ধে আনা ছয়টি অভিযোগের মধ্যে তিনটিতে সংশ্লিষ্টতা এবং দুটিতে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রমাণিত হলেও তাকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
ওই রায় প্রত্যাখ্যান করে রাজধানীর শাহবাগে তাৎক্ষণিকভাবে ছাত্র-জনতার যে বিক্ষোভের সূচনা হয়, যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ সাজার দাবিতে আন্দোলনের রূপ নিয়ে তা ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। এই দাবির মুখে সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনে সংশোধন আনতে বাধ্য হয়। সংশোধিত আইনে কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। খালাস চেয়ে কাদের মোল্লাও আপিল আবেদন জমা দেন।
বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ডের চূড়ান্ত রায় আসে এবং ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়।