স্টাফ রিপোর্টার ::
জেলার শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ির সামনে স্মৃতিফলক নির্মাণে সুনামগঞ্জের ফুলকুঁড়ি আসরের সাবেক সভাপতির করা ডিজাইন ব্যবহার করবে না সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন। তবে মহান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক আর্কিটেক্টের কাছ থেকে স্মৃতিফলকের ডিজাইন এনে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ির সামনে স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হবে।
স্বাধীনতা যুদ্ধে বিরোধিতাকারী জামায়াত-শিবির পরিচালিত ফুলকুঁড়ি আসরের জনৈক সভাপতির ডিজাইন শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ির সামনে স্থাপন হচ্ছে এই খবরে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধা সন্তানসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও সংস্কৃতিকর্মীরা। এদিকে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ির সামনে স্মৃতিফলক স্থাপনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে জেলা প্রশাসককে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছে ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’রা। বুধবার সকালে তারা সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে ফুলকুঁড়ি আসরের সভাপতির করা ডিজাইন প্রত্যাখ্যানের অনুরোধ জানান। এসময় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ তাদের জানিয়েছেন তারা ওই বিতর্কিত আর্কিটেক্টের ডিজাইন শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ির সামনের স্মৃতিফলকে ব্যবহার করবেন না।
জানা গেছে, জামায়াত-শিবির নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত সাম্প্রদায়িক সংগঠন ফুলকুঁড়ি আসরের সাবেক জনৈক সভাপতি সুনামগঞ্জের শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের বাসভবনের সামনে স্মৃতিফলক স্থাপনের ডিজাইন জমা দেয়। এই ডিজাইনটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করে মন্তব্য কামনা করা হয়। ওই স্টেটাসে স্থপতি হিসেবে ফুলকুঁড়ি আসরের সাবেক সভাপতির নাম থাকায় ক্ষোভ ও বিস্ময় প্রকাশ করেন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক কর্মী ও প্রগতিশীল আন্দোলনের সংস্কৃতিকর্মীরা। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সরব হয়ে ওঠে। বিনাপারিশ্রমিকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের স্থপতি ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষকরা পরিচিতি স্থাপনা করে দেওয়ার ঘোষণা দেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক লেখক হাসান মোরশেদ ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক ও স্থপতি হাসিব হক দায়িত্ব পেলে বিনাপারিশ্রমিকে ডিজাইন করে দেওয়ার ঘোষণা দেন। স্থপতি হাসিব হক কয়েকটি ডিজাইনও করে দেন।
এদিকে গত ২৪ নভেম্বর ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’ সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি শিবলু আহমদ চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্টেটাস দিয়ে এই ডিজাইন প্রত্যাখ্যান করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের স্থপতি দিয়ে নকশা করানোর আহ্বান জানান। এই দাবি নিয়ে তারা বুধবার (২৭ নভেম্বর) জেলা প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করে একটি আবেদন প্রদান করেন। আবেদন পেয়ে জেলা প্রশাসক তাদের অবগত করেন, বিতর্কিত ওই আর্কিটেক্টের ডিজাইন চূড়ান্ত করা হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের স্থপতি তথা মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের আদর্শে প্রাণিত স্থপতি দিয়ে ডিজাইন করা হবে। পরে মুক্তিযোদ্ধা সন্তানরা জেলা প্রশাসককে এই অনন্য উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য অভিনন্দন জানিয়ে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।
আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি শিবলু আহমদ চৌধুরী বলেন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া যে ছেলেটি আগে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ির সামনে স্মৃতিফলকের ডিজাইন করে পাঠিয়েছিল সে ফুলকুঁড়ি আসরের সভাপতি ও স্বাধীনতাবিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মী। এমন বিতর্কিত ব্যক্তির নকশায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিচিতি স্থাপনায় যুক্ত করা হবে জানতে পারার পর আমরা প্রতিবাদ করি। অবশেষে বুধবার জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সঙ্গে দেখা করে এই আহ্বান জানালে তিনি আমাদের জানিয়েছেন ওই ডিজাইন তারা গ্রহণ করবেন না। আমরা জেলা প্রশাসক মহোদয়কে অনন্য উদ্যোগের জন্য অভিনন্দন জানিয়েছি।