শহীদনূর আহমেদ ::
হু হু করে বেড়েই চলছে পেঁয়াজের দাম। দিনে দিনে পেঁয়াজ সাধারণ ক্রেতার নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। বাড়ছে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস। বর্তমানে সুনামগঞ্জ জেলা শহর ও উপজেলা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২১০ টাকায়।
ভোক্তাদের অভিযোগ, কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর সিন্ডিকেট আর বাজার মনিটরিং কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় কোনোভাবেই লাগাম টানা যাচ্ছে না পেঁয়াজের দামের।
শুক্রবার শহরের আলফাত স্কয়ার, ওয়েজখালি, ষোলঘর, বড়পাড়া, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার পাগলা বাজার, বীরগাঁও বাজার, পাথারিয়া বাজার, গণিগঞ্জ, দিরাই, তাহিরপুর, জামালগঞ্জের বিভিন্ন বাজারে মাত্রাতিরিক্ত দামে পেঁয়াজ বিক্রি হওয়ার খবর পাওয়া যায়। গ্রামীণ বাজারে পেঁয়াজের সংকট দেখা দিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানাযায়, শহরের বিভিন্ন পাড়ায় দোকানে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৯০, ২০০ থেকে ২১০ টাকায়। তবে আলফাত স্কয়ার এলাকার কয়েকটি দোকানে ১৮০ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি হতে দেখা গেছে। এদিকে পেঁয়াজের দাম বাড়ায় ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
লেখক সুখেন্দু সেন তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, “পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে – বাণিজ্য মন্ত্রী। সৌদি থেকে ৫৩ নারী গৃহকর্মীর লাশ এসেছে, যা নগণ্য – বললেন বিদেশ মন্ত্রী। কুয়াশায় পথ দেখা যায়নি বা যাত্রীরা সবাই একদিকে চলে আসায় লাইন ছেড়ে ট্রেন কাত হয়ে পড়ে গেছে – এমনই বলেছিলেন রেলমন্ত্রী। দায়িত্বশীলদের এমন দায়িত্বহীন বেলাইনের কথাবার্তায় বুঝা যায় মন্ত্রীরা বেশ ফুরফুরে মেজাজে। মন্ত্রী হলে এভাবেই বলতে হয়। কোন দায় বা জবাবদিহিতা নেই। পেয়াজের ঝাঁজালো গুণ। সুযোগ পেলেই গরম দেখায়। ঈদের বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ার প্রবণতা এদেশে সবসময়ই চালু। বাজারে এখন নিত্য ঈদভাব। মন্ত্রীর বাজার নিয়ন্ত্রণের নাটাই হাতছাড়া হয়ে সিন্ডিকেটের হাতে। মাটির নিচের পেঁয়াজ তাই শূন্যে উড়ছে। নাগালের বাইরে। পেঁয়াজের গরমে মেজাজ নষ্ট রাঁধুনীর। আগুন দামে চান্দি গরম ক্রেতার। পেঁয়াজের মহিমা অপার। নিতান্ত নিরীহ মশলা বা সবজি নয়। ঝাঁজালো ঘ্রাণতো আছেই, তেজও আছে তাপও ছড়ায়। জ্ঞানী গুণীরা বলেন- পেঁয়াজ বর্জনই সমাধান। অনেকে কত যত্ন করে রন্ধন প্রণালীও বাতলে দিচ্ছেন। সে চর্চা চলতে থাক। রন্ধন শিল্প সমৃদ্ধ হোক। চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় ভেতো বাঙ্গালিকে ভাতের বদলে আলু খাওয়ার হিতোপোদেশ দিয়েছিলেন অন্য আমলের আরেক অর্থমন্ত্রী। জনগণকে একান্ত বাধ্য ছাত্র মনে করেন মন্ত্রীরা। মাস্টার মশাইদের মত জ্ঞান বিতরণ করেন। একবারও ভাবেন না তাদের কাজ জনগণের সেবা করা, স্ব স্ব মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করা, জনগণকে সবক দেয়া নয়। আমরা ভাতের অভ্যাস ত্যাগ করবো, পেঁয়াজ ত্যাগ করবো। কিন্তু মন্ত্রীরা তাদের পদ কখনই ত্যাগ করতে পারেন না।”
বড়পাড়া এলাকার বাসিন্দা দুলাল মিয়া বলেন, আজ পাড়ার দুই দোকান ঘুরে ২০০ টাকা দিয়ে এক কেজি পেঁয়াজ কিনেছি। বাসায় বলে দিয়েছি যতদিন পেঁয়াজের দাম না কমে ততোদিন পেঁয়াজ না খেতে। এ ছাড়া কিছু করা নেই।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জের বাসিন্দা বেলাল হোসেন বলেন, এভাবে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে অথচ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের লোকদের বাজার নিয়ন্ত্রণে কোনো ভূমিকা দেখছি না। বাজার মনিটরিংয়ে থাকা লোকদের উদাসীনতা ও অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটে সাধারণ মানুষ শেষ। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। মানুষকে এবার আন্দোলনে নামতে হবে।
পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি সম্পর্কে জেলা মার্কেটিং অফিসার মো. আব্দুল খালেক বলেন, আমি ঢাকায় ট্রেনিংয়ে আছি। ঢাকায় প্রতি কেজি পেঁয়াজ ২০০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজের দাম কমবে কিনা এমন প্রশ্ন করলে তিনি কোনো উত্তর দিতে পারেননি।