1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৪৩ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

নতুন রূপ পাচ্ছে ডলুরা শহীদ সমাধি সৌধ

  • আপডেট সময় বুধবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১৯

শামস শামীম ::
মেঘালয়ের নীল গহীন লাগোয়া ডলুরা। উত্তরে নীলনোয়া মেঘালয় পাহাড়। পশ্চিমে মায়া-মুগ্ধতা ছড়ানো নদী চলতি। মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত অনন্য দৃষ্টিনন্দন এলাকা এটি। এখানে ঘুমিয়ে আছেন সম্মুখ সমরে শহীদ ৪৮ জন মুক্তিযোদ্ধা। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দেশ-মাতৃকার মুক্তির লক্ষ্যে পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে লড়ে ইতিহাসের প্রোজ্জ্বল স্মারক হয়ে আছেন জাতিরাষ্ট্রের এই জন্মযোদ্ধারা। বালাট সাব সেক্টরের এই শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধি সৌধটি এবার দৃষ্টিনন্দন স্থাপনায় রূপ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন ও সুনামগঞ্জ মুক্তিসংগ্রাম স্মৃতি ট্রাস্ট। শুরু হয়েছে সংস্কার কাজ। বিজয়ের মাস ডিসেম্বরেই নতুন রূপের এই অনন্য শহীদ সমাধি সৌধটি উদ্বোধন হবে বলে জানানো হয়েছে। বুধবার বিকেলে ডলুরা শহীদ সমাধি সৌধের সংস্কারকাজ পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদসহ বিশিষ্টজন।
মুক্তিযোদ্ধারা জানান, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের ডলুরা বালাট সাব-সেক্টরের অধীন যুদ্ধ চলাকালে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান ছিল। হেড কোয়ার্টার সন্নিকটে হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধারা এই এলাকায় অনেকটা সহজে চলাফেরা করতে পারতেন। এই সাব সেক্টরের অধীনে যেসব যোদ্ধারা বিভিন্ন স্থানে সম্মুখসমরে শহীদ হয়েছিলেন তাঁদের মরদেহ এখানে এনে সমাধি দেন সহযোদ্ধারা। ডলুরা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মধু মিয়াসহ স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের এ কাজে সহযোগিতা করেন মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের মানুষজন। স্বাধীনতার পর থেকেই এখানে শহীদদের ফুলেল শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধা-জনতা। বিভিন্ন সময়ে সরকারিভাবে, মুক্তিসংগ্রাম স্মৃতিট্রাস্ট ও মুক্তিযোদ্ধা এসএ হেলালের উদ্যোগে শহীদ সমাধি ও ক্যাম্পাসের উন্নয়নকাজ বাস্তবায়ন হয়েছে। ধীরে ধীরে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এই স্থানটি পর্যটন এলাকা হিসেবেও পরিচিতি পায়। প্রকৃতির সঙ্গে ইতিহাসের সংযোগ স্থানটিকে আরো অনন্য করে তোলেছে বলে মনে করেন মুক্তিযোদ্ধারা। তাই মুক্তিযোদ্ধা-জনতা এই স্থানটিকে নতুন প্রজন্মের কাছে আকর্ষণীয় করে এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের প্রতি আরো আগ্রহী করে তোলতে দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। অবশেষে সুনামগঞ্জ মুক্তিসংগ্রাম স্মৃতি ট্রাস্ট ও সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন ডলুরা শহীদ সমাধি সৌধ সংস্কারের কাজে হাত দিয়েছে। বুধবার থেকে কাজ শুরু হয়েছে। শুরুর দিনই শহীদ সমাধি মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ। এ সময় মুক্তিযোদ্ধারা সংস্কারের বিষয়ে জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ প্রদান করেন।
জানা গেছে, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক স্থপতি শুভদ্বীপ রায় চৌধুরী শহীদ সমাধির একটি নান্দনিক ডিজাইন করে দিয়েছেন। সমাধিতে প্রবেশের আগে থাকবে একটি আকর্ষণীয় বেদি। যেখানে স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবসে শহীদদের সম্মানে পুষ্পাঞ্জলি নিবেদন করা হবে। ৪৫ শতাংশ ভূমির শহীদ সমাধির প্রবেশমুখে থাকবে আকর্ষণীয় দুটি গেইট। ভেতরে প্যানেল করে প্রতিটি কবরে আলাদা করে এফিটাফ থাকবে। থাকবে ছোট রাস্তা। প্রতিটি এফিটাফে শহীদ যোদ্ধাদের নাম ও ঠিকানা ও কবর নম্বর খোদাই করে লেখা থাকবে। যাতে সহজেই যোদ্ধাদের সমাধি শনাক্ত করা যায়। তাছাড়া বাউন্ডারি দেয়ালটিও নতুন করে নির্মাণ করা হবে। সংস্কার ও পুননির্মাণকাজের ব্যয় বহন করবে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও সুনামগঞ্জ মুক্তিসংগ্রাম স্মৃতি ট্রাস্ট।
সুনামগঞ্জ মুক্তিসংগ্রাম স্মৃতি ট্রাস্টের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সালেহ আহমদ বলেন, ডলুরা শহীদ সমাধি সংস্কার ও পুননির্মাণের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। আমরা ট্রাস্টের পক্ষ থেকে ৫ লক্ষ টাকা প্রদান করেছি। জেলা প্রশাসন মুক্তিযুদ্ধের এই অনন্য স্মৃতিময় স্থানটিকে নতুন রূপে দৃষ্টিনন্দন করার উদ্যোগ নিয়েছেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা বজলুল মজিদ চৌধুরী খসরু বলেন, ডলুরা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক অনন্য স্থান। শহীদ এই সমাধিটি পর্যটন এলাকা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের এই অনন্য স্থানটি দৃষ্টিনন্দন সংস্কারের মাধ্যমে পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তাদের উজ্জীবিত করার সুযোগ রয়েছে। জেলা প্রশাসন ও মুক্তিসংগ্রাম স্মৃতিট্রাস্টের এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, ডলুরাসহ সুনামগঞ্জের চারটি স্বাধীনতা উপত্যকা রয়েছে যেগুলো অনন্য। আমরা ডলুরা শহীদ সমাধি সংস্কারের কাজ শুরু করেছি। পর্যায়ক্রমে অন্য স্বাধীনতা উপত্যকাগুলোতেও স্মৃতিসৌধ করা হবে। যাতে পর্যটকরা এখানে এসে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের স্পর্শ পান।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com