শামস শামীম ::
‘আপনি স্বাধীন দেশের নাগরিক। সারারাত রাস্তায় হাঁটার আপনার স্বাধীনতা আছে। আমরা আপনার ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করবো না। তবে আপনার কাছে যদি অবৈধ যানবাহন বা অবৈধ কিছু থাকে তাহলে পুলিশ আপনাকে শালীনভাবে চেক করতে পারে। জনগণের স্বার্থে পুলিশ এটা করবে। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তবে পুলিশ চেকিংয়ের নামে অন্যায়ভাবে কাউকে হয়রানি করলে সেটাও আমরা দেখব। জনগণকে অন্যায়ভাবে হয়রানি আমি মেনে নেব না।’
সম্প্রতি শহরে বিশেষ পুলিশি টহল জোরদার নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় সুনামগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সৌজন্যে বৈঠকে এসব কথা বলেছেন পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান। রোববার দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে পুলিশ সুপারের সাহসী ও গঠন মূলক বক্তব্যের প্রশংসা করেন সাংবাদিকবৃন্দ। এসময় সাংবাদিকরা স্কুল-কলেজের সামনে মোটর সাইকেলে বখাটেদের সন্দেহজনক চলাফেরা ও শহরে চুরি বন্ধে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। পাশাপাশি মোটরসাইকেল চোর সিন্ডিকেট ও ইয়াবা-মাদক ডিলারদের গ্রেফতার ও বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।
জানা গেছে, সারাদেশে নতুন পরিবহন আইন বাস্তবায়ন করতে সরকারের নির্দেশনায় সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে মাঠে নামিয়েছেন। তাছাড়া শহরে সম্প্রতি এক কলেজ ছাত্রকে ছুরিকাঘাত ও আশঙ্কাজনকহারে চুরি বৃদ্ধির ঘটনায় পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে। অবৈধ মোটরসাইকেল ও অন্যান্য যানবাহনের বিরুদ্ধেও অভিযানে নেমেছে পুলিশ। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে কিছু স্বার্থান্বেষী পুলিশের এই অভিযান নিয়ে প্রশ্ন তুললেও সাধারণ মানুষ স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। নাগরিকরা অবৈধ যানবাহনসহ অপরাধীদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি নিরীহ জনগণ যাতে পুলিশি হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে দৃষ্টি রাখার অনুরোধও করেছেন।
সচেতন নাগরিকরা জানান, মো. মিজানুর রহমান পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব নেবার পরই কিছু প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে পুলিশের কিছু সদস্যের সহায়তায় নৌপথে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি হচ্ছিল বলে অভিযোগ আছে। চলতি বছরের শুরুতে জেলা উন্নয়ন ভাবনা বিষয়ক সভায়ও এই বিষয়টি উত্থাপিত হয়েছিল। প্রধান নদী সুরমাসহ অন্যান্য সীমান্ত নদী থেকেও পুলিশের সহায়তায় একটি চক্র বালু-পাথর ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা উত্তোলন করছিল। মো. মিজানুর রহমান দায়িত্ব নিয়েই কঠোর হাতে নৌপথের চাঁদাবাজদের নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছেন। বালু-পাথর মহাল নৌপথ নিরাপদ রাখতে তিনি সাহসী উদ্যোগ নেওয়ায় রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত ও সুবিধাভোগীরা এখন বিপাকে পড়েছে। জলমহালে মৎস্য আহরণের সময়েও তিনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে এদিকে বিশেষ নজর রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
জানা গেছে, মিজানুর রহমান পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব নেবার পরই জেলা শহরের নিরাপত্তা জোরদারেরও উদ্যোগ নেন। পাড়া-মহল্লাসহ শহরের খাদ্য-ওষুধসহ জরুরি পণ্যের দোকান বাদে অন্যান্য দোকানগুলো বেশি রাত খোলা না রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। সম্প্রতি সড়ক পরিবহন আইন পাস ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সারাদেশে বার্তা পাঠানো হয়েছে এই আইন বাস্তবায়ন করতে। সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের এই আইন বাস্তবায়নের নির্দেশনা দিয়েছেন। এর ফলে জেলা শহরসহ জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে লাইসেন্সবিহীন পরিবহনের বিরুদ্ধে অভিযানে নেমেছে পুলিশ। বিশেষ করে অপরাধে ব্যবহৃত সহজলভ্য বাহন মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে জোরালো অভিযান শুরু হয়েছে। এই অভিযানের ফলে স্কুল-কলেজের সামনে বখাটেদের উৎপাত কমেছে বলে মনে করেন সুধীজন।
সুনামগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে রোববার সৌজন্য বৈঠকে পুলিশ সুপার বলেন, যেসব স্কুল-কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থীরা স্কুল-কলেজের সামনে দিয়ে দ্রুত গতিতে মোটরসাইকেল চালায় তাদের বেশিরভাগের লাইসেন্স নেই। তাদের বেশিরভাগেরই হেয়ারকাটিং খারাপ। এদেরকে সাময়িক আটক করে অভিভাবকদের ডেকে শুধরানোর জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেন তিনি। তিনি বলেন, আমার মা একজন শিক্ষক ছিলেন। স্কুল-কলেজে পড়ার সময় আমি বাইসাইকেল চালিয়েছি। আগে পড়ালেখাটাকেই গুরুত্ব দিয়েছি। এক শ্রেণির অবৈধ টাকা অর্জনকারী অভিভাবকদের উদাসীনতায় এসব শিক্ষার্থীরা উচ্ছন্নে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি এমন অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদের টাকা হলেই এই বয়সী সন্তানকে মোটরসাইকেল কিনে দিতে হবে কেন? তাদেরকে নিয়ন্ত্রিত সুষ্ঠু জীবন-যাপনে উৎসাহিত করুন। তিনি সাধারণ জনতার উদ্দেশ্যে বলেন, সুনামগঞ্জে পুলিশের অ্যাকশন হবে জনগণের স্বার্থে। তিনি চলমান পুলিশি অভিযানে আতঙ্কিত না হয়ে পুলিশকে সহযোগিতার আহ্বান জানান।
মতবিনিময় সভায় সাংবাদিক শহিদনূর আহমেদ তার বক্তব্যে বলেন, অপরাধ দমনে এই অভিযান স্বস্তি এনেছে। ভালো মানুষরা অভিনন্দন জানিয়েছেন। অবৈধ যানবাহন ও বখাটেদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান তিনি।
সাংবাদিক মোসাইদ রাহাত তার বক্তব্যে বলেন, অভিযানের সময় কোন নিরীহ মানুষকে যেন হয়রানি না করা হয়।
সুনামগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি লতিফুর রহমান রাজু বলেন, পুলিশের বিশেষ এই অভিযানকে শহরের সুধীজন অভিনন্দন জানিয়েছেন। চুরিচামারি বৃদ্ধি পাওয়ায় নাগরিকরা উদ্বিগ্ন ছিলেন। এই অভিযানের ফলে চুরি কমেছে। চোরাই মোটর সাইকেল সিন্ডিকেট ও মাদক ডিলারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানান তিনি। লতিফুর রহমান রাজু পুলিশের সকল ভালো কাজে সহযেগিতার আশ্বাস দেন।
মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন পদন্নতিপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু তারেক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) জয়নাল আবেদীন প্রমুখ।