1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ১২:৫৬ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

শিশু তুহিন হত্যা : নাটের গুরু চাচা মুছাব্বির মোল্লা

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১৯

মাসুম হেলাল ::
দিরাইয়ে শিশু তুহিন মিয়াকে নৃশংসভাবে খুনের নেপথ্যে ছিল প্রতিপক্ষকে ফাঁসিয়ে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার। আর এর পেছনের নাটের গুরু ছিলেন তুহিনের চাচা আব্দুল মুছাব্বির মোল্লা – এমনটাই মনে করছেন কেজাউড়া গ্রামের আপামর মানুষ।
প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে তুহিনের স্বজনরাই তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে গাছের সাথে ঝুলিয়ে রেখেছিল – এই তথ্য শোনার পর তারা কিছুটা অবাক হলেও মুছাব্বির মোল্লার অতীত কর্মকাণ্ডের কারণে এমনটা তার পক্ষে করা সম্ভব বলে জানান তার প্রতিবেশীরা। পাশবিকভাবে তুহিন হত্যায় হতবাক কেজাউড়া গ্রামের মানুষ। খুনের ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি তাদের।
সুনামগঞ্জ-দিরাই সড়কের কর্ণগাঁও মোড় থেকে ৭ কিলোমিটর দূরে অবস্থিত ছায়ানিবিড় গ্রাম কেজাউড়া। এক সময়ের শান্তিপ্রিয় এই গ্রামটি অশান্ত হয়ে ওঠে গ্রামে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুটি গোষ্ঠীর অন্তর্দ্বন্দ্বে। অন্তর্দ্বন্দ্বে একপক্ষের নেতৃত্বে সাবেক ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন এবং অপরপক্ষে মাওলানা আব্দুল মুছাব্বির। এই অন্তর্দ্বন্দ্বের সর্বশেষ নির্মম শিকারে পরিণত হয় ৫ বছর বয়সী শিশু তুহিন। মুছাব্বির শিশু তুহিনের চাচা। এর আগে ২০০১ সালে কেজাউড়া মুজিব নামের এক কৃষক ও ২০১৫ সালে খুন হন নিলুফা নামের এক গৃহবধূ। দুটি খুনের ঘটনায়ই বিবদমান দুটি পক্ষের বিরুদ্ধে পরস্পরকে ফাঁসানোর অভিযোগ রয়েছে। মুজিব খুনের ঘটনায় আসামি করা হয়েছিল শিশু তুহিনের বাবা আব্দুল বাছির ও তার প্রতিপক্ষ আনোয়ার হোসেনকে। পুলিশি তদন্তে অভিযোগপত্র থেকে নাম বাদ পড়ে আনোয়ারের। ১৮ বছর ধরে মুজিব হত্যা মামলায় কোর্ট-কাছারি করে আসছেন তুহিনের বাবা বাছির।
এদিকে, ২০১৫ সালে নিলুফার নামের এক গৃহবধূ খুন হলে প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ আসে মুছাব্বির পক্ষের। ওই ঘটনায় আনোয়ার মেম্বার পক্ষের ১৬ জনকে আসামি করা হয়। তখন পুরুষশূন্য ঘরবাড়িতে লুটপাট করেন মুছাব্বির মোল্লার লোকজন। তুহিন খুনের ঘটনার পরদিন মুজিব হত্যা মামলায় যুক্তিতর্ক শুনানিতে যাওয়ার কথা ছিল তুহিনের বাবা আব্দুল বাছিরের।
কেজাউড়া গ্রামের বাসিন্দা আজিজুল হক বলেন, গ্রামের প্রভাবশালী দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি হত্যা মামলা রুজুর পর থেকেই আধিপত্য বিস্তার ও পরস্পরকে ফাঁসানোর প্রতিযোগিতা শুরু হয় কেজাউড়া গ্রামে। যে কোন বিষয় নিয়ে দুটি পক্ষ দু’দিকে অবস্থান নিয়ে পরিস্থিতি জটিল করে রাখত। প্রায়ই দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটত। নেতিবাচক সকল কর্মকা-ের মূলে ছিলেন আব্দুল মুছাব্বির মোল্লা।
গ্রামের অপর বাসিন্দা মাহমুদুর রহমান বলেন, গ্রামের এক প্রবাসীর মধ্যস্থতায় নিলুফার হত্যা মামলা আপস-রফার আলোচনা চলছিল। এই তথ্য জানতে পেরে মুছাব্বির মোল্লা হয়তো মনে করেছেন তার প্রতিপক্ষের লোকজন বড় একটি মামলা থেকে ছাড়া পেয়ে যাচ্ছেন। প্রতিপক্ষকে আবারো মামলার জালে ফাঁসাতে ভাতিজা তুহিনকে হত্যা পরিকল্পনা করতে পারেন মুছাব্বির।
পুলিশ জানায়, গ্রামে আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে প্রতিপক্ষকে মামলা-মোকদ্দমায় জড়িয়ে দুর্বল করার উদ্দেশ্যেই ঠাণ্ডা মাথায় খুন করা হয় ৫ বছর বয়সী শিশু তুহিনকে। রোববার দিনগত রাতে তুহিনকে জবাই করে হত্যা করে তার দুটি কান ও যৌনাঙ্গ কেটে ফেলে ঘাতকরা। পরে তার পেটে সালাতুল ও সুলেমানের নাম খোদাই করা দুটি ছুরি ঢুকিয়ে রাখা হয়।
ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান জানান, তুহিন খুনের নৃশংস ঘটনায় তার বাবা, তিন চাচা ও চাচতো ভাই জড়িত ছিল। প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ঠাণ্ডা মাথায় বাবা-চাচারা মিলে খুন করে ৫ বছর বয়সী শিশু তুহিনকে। ঘুমন্ত শিশুটিকে বাবা আব্দুল বাছির কোলে করে বাড়ির বাইরে নিয়ে যান। বাবার কোলেই ঘুমন্ত অবস্থায় শিশু তুহিনকে ছুরি দিয়ে জবাই করে চাচা নাসির উদ্দিন। এ সময় নাছিরকে সহযোগিতা করেছিল শিশু তুহিনের চাচা মছব্বির, জমসের ও চাচাতো ভাই শাহরিয়ার। পরে চাচা নাসির তুহিনের দুই কান, যৌনাঙ্গ কেটে ফেলে মৃতদেহ একটি কদম গাছের সাথে রশি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখে। সর্বশেষ তার পেটে প্রতিপক্ষের সালাতুল ও সুলেমানের নাম খোদাই করা ছুরি ঢুকিয়ে রাখা হয়।
সালাতুল ও সুলেমান দু’জনই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে বলেছেন, আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি। ছুরিতে দুটির হাতের ছাপ পরীক্ষা করলেই বুঝা যাবে আমাদের নাম উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ছুরির গায়ে লেখা হয়েছে।
এদিকে, ছেলের নৃশংস খুনের পর বাকরুদ্ধ তুহিনের মা মনিরা বেগম এখন বাবার বাড়িতে শয্যাশায়ী। মাত্র ১৫ দিন আগে এক কন্যা সন্তান জন্ম দেন তিনি। অপর দুই শিশুপুত্র মাহিন ও ফাহিম এবং ১৫ দিন বয়সী নবজাতক কন্যা সন্তানকে নিয়ে অন্ধকার ভবিষ্যতের প্রহর গুণছেন তিনি।
তিনি বলেন, ৮ বছরের সংসার জীবনে কোনদিন আমার স্বামীকে হিংস্র মনে হয়নি। এখন যেটা শুনছি সেটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।
এদিকে, সোমবার সকালে তুহিন হত্যার ঘটনায় অজ্ঞাত ১০/১২ জনকে আসামি করে দিরাই থানায় মামলা দায়ের করেন তুহিনের মা মনিরা বেগম। ওই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে পুলিশের হাতে পূর্ব থেকেই আটক বাবা আব্দুল বাছির, চাচা আব্দুল মুছাব্বির, নাসির উদ্দিন, জমসের আলী ও চাচাতো ভাই শাহরিয়ারকে। পুলিশের হাতে আটক তুহিনের এক চাচী ও চাচাতো বোনের এই ঘটনায় সম্পৃক্ততা পায়নি পুলিশ।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সুনামগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় জবাবন্দিতে খুনের ঘটনায় সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে শিশু তুহিনের চাচা নাসির উদ্দিন ও চাচতো ভাই শাহরিয়ার। তুহিনের বাবা আব্দুল বাছির, চাচা মছব্বির আলী ও জমসের আলীকে তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com