1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৩:৫৫ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

স্রোতস্বিনী মাহারামের বুকে এখন ধুধু বালুচর

  • আপডেট সময় রবিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১৯

মাসুম হেলাল ::
তাহিরপুরের সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত মাহারাম নদী বালু পড়ে সম্পূর্ণরূপে ভরাট হয়ে গেছে। এক সময়ের স্রোতস্বিনী এই নদীর বুকে এখন ধুধু বালুচর। বর্ষা মৌসুমেও অবশিষ্ট থাকে না এতোটুকু পানি।
পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলের সাথে বালু এসে ক্রমেই ভরাট হয়ে গেছে নদীটি। খননের কোন উদ্যোগ না নেওয়ায় বালু পড়তে পড়তে এক পর্যায়ে এসে নদীটির অস্তিত্ব রূপান্তরিত হয়েছে মরুভূমিতে।
মাহারাম নদী ভরাট হওয়ার কারণে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে স্থানীয় কৃষি, মৎস্য উৎপাদনসহ হাওরে পরিবেশ-প্রতিবেশের ওপর। নদীতে পানি না থাকায় বোরো আবাদের জন্য পর্যাপ্ত পানি পাচ্ছেন না কৃষকরা। হেমন্তে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় ভূগর্ভস্থ পানিতে বাড়ছে আর্সেনিকের মাত্রা। ব্যাহত হচ্ছে সবুজায়ন।
অপরদিকে, এই নদীকে কেন্দ্র করে আবহমান কাল থেকে গড়ে ওঠা নৌ-যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভেঙে পড়েছে। এতে মানুষের ভোগান্তির পাশাপাশি বিকল্প হিসেবে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়তে গিয়ে অপরিকল্পিত রাস্তাঘাট নির্মাণ হচ্ছে। ফলে হাওরের প্রতিবেশ, প্রতিবেশের ওপর দীর্ঘমেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ধ্বংস হচ্ছে মাছের উৎপাদন ও বংশবিস্তার।
জানা যায়, মাহারাম নদীটি তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা নদীর একটি শাখা নদী। পর্যটন স্পট শিমুল বাগান এলাকার দক্ষিণ থেকে এর উৎপত্তি। প্রায় ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ নদীটি উৎপত্তিস্থল থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে পড়েছে তাহিরপুর উপজেলার সমসার হাওরে।
স্থানীয়রা জানান, ৩০ বছর আগেও মাহারাম নদীর সীমান্ত এলাকার অন্যতম স্রোতস্বিনী নদী হিসেবে পরিচিত ছিল। বর্ষায় নদীটির পানি যাদুকাটা নদী দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পড়ত সমসার হাওরে। ছোটবড় নৌযান চলাচল করতো এই নদী দিয়ে। কম-বেশি পানি থাকত শুকনো মৌসুমেও। পরবর্তীতে বন্যা ও পাহাড়ি ঢলের সাথে বালু এসে ভরাট হতে থাকে স্রোতস্বিনী মাহারাম। খননের কোন উদ্যোগ না নেয়ায় এক পর্যায়ে সম্পূর্ণরূপে ভরাট হয়ে যায় নদীটি। বর্ষায় নদীতে কিছু পানি থাকলেও বর্ষা শেষ হতে না হতেই নদীটি রূপ নেয় বালুময় দীর্ঘ এক মরুভূমি হিসেবে। শরৎকালে এসে এতটুকু পানিও অবশিষ্ট থাকে না নদীটিতে। নদীটি সম্পূর্ণরূপে ভরাট হয়ে যাওয়ায় বর্ষায় আসা বালু গিয়ে পড়ে কৃষিজমিতে। বালু আগ্রাসনের শিকার হয়ে অনেক কৃষক সর্বস্বান্ত হয়ে গেছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা লিটন বলেন, এক সময়ের আশীর্বাদ মাহারাম নদী এখন আমাদের জন্য অভিশাপ হিসেবে দেখা দিয়েছে। নদীটি বালুতে সম্পূর্ণরূপে ভরাট হয়ে যাওয়ায় এর প্রভাব গিয়ে পড়েছে কৃষি ও মৎস্য সম্পদের উপর। বালুর কারণে অনেক কৃষি জমি নষ্ট হয়ে গেছে। মাছ আর পাওয়া যায় না। তিনি বলেন, নদীটি যদি খনন করা না হয় তবে এর ক্ষতিকর প্রভাব স্থানীয় জীববৈচিত্র্যের অপর গিয়ে পড়বে।
জুনাব আলী নামের বারকি শ্রমিক বলেন, ছোটবেলায় দেখেছি মাহারাম নদী সারাবছর পানিতে থৈ থৈ করতো। বর্ষায় বড় বড় নৌযান চলতো। এখন হেমন্তে পায়ে হেঁটে পার হওয়া যায়। ক্রমেই ভরাট হতে হতে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সময় মতো কর্তৃপক্ষ যদি নদীটি খনন করে দিত তবে আজ এই দৃশ্য দেখতে হত না।
অপর একটি পক্ষ নদীটি ভরাট হয়ে যাওয়াকে দেখছেন আর্শীবাদ হিসেবে। তাদের দাবি, মাহারাম নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় মাটিয়ান, টাঙ্গুয়ার হাওরের বোরো ফসলের ঝুঁকি বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে। অতীতে এই নদী দিয়ে আসা অকাল বন্যার পানিতে হাওর দুটির বোরো ফসল তলিয়ে যেত।
স্থানীয় বাসিন্দা রাজ্জাক বলেন, হাওরের বোরো ফসলের সুরক্ষার জন্য নদীটি ভরাট হয়ে ভালোই হয়েছে। এখন আর বোরো ফসল নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করতে হয় না।
বোরো ফসল তো বাঁধ নিয়ে রক্ষা করা সম্ভব এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এত বড় নদী বাঁধ দিয়ে আটানো কঠিন।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পওর-১) এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বক্কর সিদ্দিকের দাবি, মাহারাম নদী খনন করলে এর ক্ষতিকর প্রভাব স্থানীয় পরিবেশের উপর গিয়ে পড়বে। আমরা দক্ষিণ দিকের নদীগুলো খননের উদ্যোগ নিয়েছি।
প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট ভরাট হয়ে যাওয়া একটি নদী খনন করলে তো জীববৈচিত্র্যের জন্য শুভকর হওয়ার কথা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মাহারাম নদী খনন নিয়ে পরিবেশবাদীরা ভিন্নমত পোষণ করছেন। তারা বলছেন নদীটি খনন করলে পরিবেশের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com