দুর্নীতিবাজ কেউ রেহাই পাবে না। বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠের একটি উদ্ধৃত সংবাদপ্রতিবেদন থেকে মন্ত্রীর এই রকম প্রত্যয় ঘোষণার কথা জানা যায়। রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে থাকা এবং আসলেই ক্ষমতাকে ইচ্ছে হলেই ব্যবহার করতে পারেন এমন ধরনের ক্ষমতাধরদের এইরূপ ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার অপেক্ষায় থাকেন সাধারণ মানুষ। তাঁদের এই রকম প্রত্যয়ী ঘোষণায় আর কীছু না হোক কীছুটা হলেও সান্ত¡না লাভ করেন সাধারণ মানুষেরা। আর যখন এই প্রত্যয়ী ঘোষণার বাস্তবায়ন মাঝে মাঝেই ঝলসে উঠে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সার্থক অভিযানের সফলতায়, ধরা পড়ে দুর্নীতিবাজ কিংবা সন্ত্রাসীরা তখন জনমনে সত্যিকার অর্থেই কীছুটা হলেও স্বস্তির স্নিগ্ধতা ছড়ায়, লোকে কীছুটা শান্তি লাভ করে। কিন্তু এই শান্তি আর কতক্ষণ, সেটাও নিমিষেই কর্পূরের মতো মিলিয়ে যায়, যখন পত্রিকায় পাঠ করতে হয় অসংখ্য দুর্নীতির খবর। এবং প্রকারান্তরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ‘দুর্নীতিবাজ কেউ রেহাই পাবে না’ এই প্রত্যয়ী আশ্বাস হতাশার হাহাকারে পর্যবশিত হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দুর্নীতিবাজদের রেহাই না দেওয়ার ঘোষণার সমান্তরালে দেশজুড়ে অসংখ্য অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনা ঘটেই চলেছে অনবরত। গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠেই আছে তার প্রমাণ। ১. ধর্মপাশা উপজেলার বংশীকুণ্ডা উত্তর ইউনিয়নে স্থানীয় মহিষখলা নদীতে মাছ ধরার বিরোধকে কেন্দ্র করে এক পক্ষ বংশীকুণ্ডা উত্তর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয় ও জাতির জনকের ছবি ভাঙচুর করেছে, ২. দোলারবাজার ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের নির্দেশে ৯ জনের বয়স্কভাতা বন্ধ, ৩. সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদে সোচ্চার আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে সিভিল সার্জন কর্তৃক থানায় অভিযোগ দায়েরের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন ইত্যাদি। এই সব প্রমাণ এই কথা প্রমাণ করে যে, পুরোহিতের মন্ত্রপাঠ পাঠা শুনছে না। কিন্তু বিপরীতে এই কথাও বলে যে, পুরোহিত মন্ত্রপাঠে অক্লান্ত এবং সম্প্রতি প্রতিপন্ন হচ্ছে যে সে-মন্ত্র একেবারে বৃথা যাচ্ছে না, মাঝে মাঝেই রাষ্ট্রশক্তি অনিয়ম-দুর্নীতির দুর্গে হামলে পড়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘোষণার সার্থকতা প্রতিপন্ন করছে। অনিয়ম-দুর্নীতির ময়লাস্তূপের নিচে চাপাপড়া সমাজের জন্য আপাতত এটাই বাঁচুয়া। অতীতে তো এই বাঁচুয়াটুকুরও দেখা মিলতো না।
উপরে উল্লেখিত চেয়ারম্যানের নির্দেশে ৯ জনের বয়স্কভাতা বন্ধ করে রাখা কিংবা দুর্নীতির প্রতিবাদে আন্দোলনরত জনতার বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করা দু’টি ছোট্ট নিদর্শন মাত্র। সারাদেশে এমন অগণিত অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে সর্বমহল অবহিত আছেন, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু তারপরও অনেক কথা থেকে যায়। প্রকৃতপক্ষে অর্থাৎ বাস্তব অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে সরকার পরিচালকমণ্ডলী ও সরকারের প্রতিষ্ঠান সমূহের বিভিন্ন পদে অধিষ্ঠিতজনের মধ্যে অনিয়ম-দুর্নীতিকে শূন্যসহনশীলতা দেখানোর বিষয়ে কোথায় যেনো একটি বিরোধ এখনও রয়ে গেছে। এই বাস্তবতাকে নীতিগ্রহণ ও বাস্তবায়নের দ্বন্দ্ব বলে অভিহিত করা যায়। আমরা আশা করবো অচিরেই এই দ্বন্দ্বের নিরসন হবে। আর যদি না হয় তবে অবশ্যই উন্নয়নের রাজনীতি মুখ থুবড়ে পড়বে এবং সোনার বাংলার স্বপ্নসাধ কোনও দিন পূর্ণ হবে না। বাংলাদেশের ভবিতব্য দুর্নীতির অন্ধকারেই যেমন ছিল তেমনি নিহিত থাকবে।