‘পত্রিকা কেবল খারাপ খবর ছাপছে।’ যে-কেউ বলতেই পারেন। প্রতিনিয়ত এমনটি হচ্ছে। গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠে খবর আছে : দোয়ারায় বিধিবহির্ভূতভাবে সার বিক্রির অভিযোগ কিংবা ইউপি চেয়ারম্যান আখতার হোসেন বরখাস্ত। সার বিক্রির কারণ শিরোনামেই আছে, অর্থ উপার্জন এবং ইউপি চেয়ারম্যানের বরখাস্তের কারণটি সংবাদবিবরণীতে প্রকাশিত হয়েছে, ভিজিডির চাল আত্মসাৎ। এই তো গেলো স্থানীয় পর্যায়ের খবর আর জাতীয় পর্যায়ের এক একটি খবর এমন যে, পাঠ করার পর ভয়ঙ্কর আতঙ্ক মগজের ভেতরে ছড়িয়ে পড়ে চিন্তা করার ক্ষমতাকে বিকল করে দেয়। খবরে প্রকাশিত এইসব কর্মকাণ্ড একটিই বার্তা বহন করে নিয়ে আসে দেশের সাধারণ মানুষের জন্যে, আর সেটি হলো : দেশ একটি ভয়ানক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। আর এই ক্রান্তিকালের রূপস্বরূপের একটু আভাস মেলে দেশের আমলাতান্ত্রিকতাকে উপলক্ষ্য করে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান যখন বলেন, ‘বৃটিশ গেছে, পাকিস্তান গেছে; ইয়াহিয়া খানসহ আরও কত খান গেছে, কিন্তু আপনারা এখনো আগের মতোই আছেন।’ অন্যত্র তিনি বলেছেন, ‘প্রকল্পে অনিয়ম হলে তার বিরুদ্ধে শাস্তির বিধান নিশ্চিত করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’ দেশের প্রশাসনিক ও মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে, বিশেষ করে উন্নয়নকর্মে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে না পারার অনিবার্য পরিণতি দেশের বর্তমান সঙ্কটাপন্ন অবস্থার জন্য প্রত্যক্ষভাবে দায়ী। বলা হয়েছে, ‘সেই ইঞ্জিনিয়ারের ভুলের জন্য ঐ প্রকল্পে আমাদের বহু ক্ষতি হয়েছিল। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়নি। এবং সব কীছুই জলে গেছে। […] প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ওই একই লোক নাকি এখানে আবার ইঞ্জিনিয়ার। হাউ ইস ইট পসিবল?’ বিস্মিত এই প্রশ্নের ভেতরে লুকিয়ে আছে দেশের ক্রান্তিকালের ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি উপলব্ধির ক্ষোভ। এই ক্ষোভ প্রধানমন্ত্রীর নয়, এই ক্ষোভ আসলে দেশের সাধারণ মানুষের ক্ষোভ। প্রধানমন্ত্রীর মুখে প্রকাশ মার্জিত ও ভব্যতার মাত্রা নিয়ে প্রকাশ হয়েছে মাত্র।
কথিত ‘পসিবলিটি’র উত্তর আমাদের জানা আছে। উত্তরটি বক্ষ্যমান সম্পদকীয়র উদ্দিষ্ট নয়। আমরা কেবল বলতে চাই- এখন বদলে যাওয়ার সময় এসেছে। দেশকে বদলে দিতে হবে। কিন্তু যাঁরা দেশ বদলে দেওয়ার ক্ষমতাকে নিজেদের মুঠিতে ধারণ করে আছেন কিন্তু মুঠি খোলছেন না, তাঁরা একটু মুঠি খুলুন। প্রধানমন্ত্রীর দেশোন্নয়নের মহৎ ব্রতে শরিক হোন, আর একটা ’৭১ আসার আগে। আরেকটি একাত্তরের মূল লক্ষ্য হবে বিভীষণদের বিনাশ।