মোসাইদ রাহাত ::
ভাটির জনপদ তাহিরপুর। এখানে রয়েছে নয়নাভিরাম টাঙ্গুয়ার হাওর। এই হাওরের অপরূপ সৌন্দর্য দেখার জন্য প্রায় প্রতিদিনই পর্যটকরা ভিড় করেন। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত নৌকা ভাড়া নিয়ে তাদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। একটি সিন্ডিকেট পর্যটকদের জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে নেয়। এ নিয়ে দৈনিক সুনামকণ্ঠে সংবাদ প্রকাশ হলে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। এরই প্রেক্ষিতে টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণে নৌকা ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছে তাহিরপুর উপজেলা প্রশাসন। পাশাপাশি টাঙ্গুয়ার হাওরে মাইক-স্পিকার বাজানো নিষিদ্ধ হচ্ছে।
গত ১০ আগস্ট তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসিফ ইমতিয়াজ নৌ-মালিকদের সাথে বৈঠক করে একটি ভাড়ার তালিকা প্রকাশ করেন। ওই ভাড়ার তালিকা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ হলে সুধীজন এর বিরোধিতা করেন। পরবর্তীতে ওইদিনই আবারো নৌ-মালিক ও সাংবাদিকদের সাথে কথা বলে নতুন ভাড়া নির্ধারণ করে দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। তাছাড়া তিনি টাঙ্গুয়ার হাওরের পরিবেশ রক্ষায় হাওরে মাইক-স্পিকার বাজানো নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেন।
জানাযায়, নৌকার ধরণভেদে সর্বোচ্চ ২০ জন যাত্রী ৮ থেকে ১২ ঘণ্টার জন্য ৩ হাজার টাকা, ২ দিন ও ১ রাতের জন্য ৬ হাজার টাকা, ৩ দিন ২ রাতের জন্য ৭ হাজার টাকা; সর্বোচ্চ ৩০ জন যাত্রীর জন্য নৌকা ৮ থেকে ১২ ঘণ্টার জন্য ৪ হাজার ৫০০ টাকা, ২ দিন ১ রাতের জন্য ৯ হাজার টাকা, ৩ দিন ২ রাতের জন্য ১০ হাজার টাকা; সর্বোচ্চ ৪০ জন যাত্রীর ধারণক্ষমতা স¤পন্ন নৌকায় ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা ৬ হাজার টাকা, ২ দিন ১ রাতের জন্য ১২ হাজার টাকা ও ৩ দিন ২ রাতের জন্য ভাড়া ১৩ হাজার টাকা নির্ধারণ করেছে প্রশাসন। ভাড়া নির্ধারণের পাশাপাশি প্রত্যেক নৌকায় লাইফ জ্যাকেট ফ্রি দেয়ার জন্য নৌ-মালিকদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এদিকে, নতুন ভাড়া নির্ধারণে মাথায় হাত পড়েছে ঢাকার কয়েকটি ট্র্যাভেল এজেন্সির। তাদের দাবি ঢাকার নৌকা মালিকদের সাথে কথা না বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ভাড়া নির্ধারণ করেছেন। এই ভাড়া যদি চলমান থাকে তাহলে তারা ব্যবসা ছেড়ে দিতে বাধ্য হবেন।
দেশী ট্র্যাভেল এজেন্সির মালিক পরাগ আহমেদ বলেন, আমরা ঢাকা থেকে একটি ইভেন্টের মাধ্যমে পর্যটকদের টাঙ্গুয়ার হাওরে নিয়ে আসি। হাওরে আমাদের নিজস্ব নৌকা রয়েছে। একটি নৌকায় ৪ জন লোক কাজ করেন। তাছাড়া আমাদের নৌকায় বিভিন্ন রকমের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। কিন্তু প্রশাসন যে ভাড়া নির্ধারণ করেছে তা যুক্তি সংগত নয়।
তবে নতুন নির্ধারিত নৌকা ভাড়ার তালিকা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ হলে সাধারণ মানুষ প্রশাসনের এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন।
নীলিমা তানজিন বলেন, ঈদের পরে টাঙ্গুয়ার হাওর যাওয়ার কথা ভেবেছিলাম। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত নৌ ভাড়ার কারণে দ্বিধার মধ্যে ছিলাম। প্রশাসন নৌকা ভাড়া নির্ধারণ করে দেয়ায় ভালো হয়েছে। আমরা অবশ্যই টাঙ্গুয়ার হাওর যাবো। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নীলিমার মতো আরো অনেকে তাহিরপুর উপজেলা প্রশাসনের প্রশংসা করেছেন।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসিফ ইমতিয়াজ বলেন, সংবাদ প্রকাশের পর থেকেই আমি নৌকার মালিকদের সঙ্গে কথা বলি। তাদের সুবিধা ও পর্যটকদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে একটি ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। যদি নৌকাগুলো নির্ধারণ করে দেয়া ভাড়া না মানে তাহলে উপজেলা প্রশাসনকে পর্যটকরা জানাতে পারবেন। অভিযোগের সত্যতা পেলে অভিযুক্তদের জরিমানা করা হবে। তিনি আরো বলেন, উচ্চস্বরে গান বাজিয়ে পরিবেশের ক্ষতি করা অপরাধ। টাঙ্গুয়ার হাওরে মাইক-স্পিকার বাজানো নিষিদ্ধ করা হবে। দুই-একদিনের মধ্যেই এই সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হবে।