হোসাইন আহমদ ::
২০১৬ সালের ৭ অক্টোবর বর্তমান পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এমপি দক্ষিণ সুনামগঞ্জে সভা-সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক চর্চার জন্য ঝিলমিল নামক অডিটোরিয়ামের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এই অডিটোরিয়াম নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ৪ কোটি ৮২ লক্ষ ৬৩ হাজার ৫১০ টাকা। তবে আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন ঝিলমিল অডিটোরিয়ামের কাজের মেয়াদ শেষ হলেও এখনো অর্ধেক কাজ বাকি। এনিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রীসহ স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা।
উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল (এলজিইডি) সূত্রে জানা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ঢাকার মহাখালির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কিংডম বিল্ডার্স লিমিটেড টেন্ডারের মাধ্যমে এই প্রকল্পের কাজ পায়। প্রকল্পটি ২০১৬ সালের ১৭ অক্টোবর শুরু হয়ে ২০১৭ সালের ২০ ডিসেম্বর শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত এই প্রকল্পের ৪০ ভাগ কাজও শেষ হয়নি।
সরেজমিনে প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কোন লোক প্রকল্প এলাকায় নেই। কোন নির্মাণ শ্রমিককেও দেখা যায়নি।
স্থানীয়রা জানান, এতোবড় প্রকল্পে মাঝে মধ্যে ২/৩জন শ্রমিক ছাড়া কাউকে দেখা যায় না। অডিটোরিয়ামের নিচের ভিত্তি ও পিলার লিন্টারের কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ দিন যাবৎ ছাদ ঢালাই দেওয়ার জন্য সাটারিং করে রাখা হয়েছে, ছাদের রড বাঁধাই করা হয়েছে। বৃষ্টি ও রোদে রডগুলোতে মরিচা ধরেছে। এছাড়া যত্রতত্রভাবে নির্মাণকাজের জন্য আনা রড মাটিতেই ফেলে রাখা হয়েছে। এই রডগুলোতে মরিচা ধরেছে।
এদিকে, প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এমপি। গত ২ আগস্ট শুক্রবার পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এমপি’র ঐচ্ছিক তহবিল হতে নগদ অর্থ বিতরণ অনুষ্ঠানে কিংডম বিল্ডার্স লিমিটেড নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই সমস্ত ঠিকাদারের জন্য উন্নয়ন কাজ বাধাগ্রস্ত হয়। সম্পূর্ণ সিস্টেমকে পরিবর্তন করা উচিত। এদের কারণে দেশের অনেক উন্নয়নকাজ সময়মতো শেষ করা যায় না। টাকা নিয়ে ঢাকায় বসে থাকবে কিন্তু কোনো কাজ করবে না। এটা মেনে নেওয়া যায় না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, এই কাজে অনেক অনিয়ম হচ্ছে। ৪/৫ জন শ্রমিক দিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এই কাজ বাস্তবায়ন করছে। মরিচা পড়া রডেই দেওয়া হয়েছে পিলার-লিন্টারের ঢালাই। এখন ছাদের রডগুলোও অনেকদিন ধরে পড়ে থাকতে থাকতে মরিচা পড়ে ব্যবহার অনুপযোগী হয়েছে।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী আবুল কালাম বলেন, পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এমপির প্রচেষ্টায় প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে উপজেলা পরিষদ চত্বরে আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন ঝিলমিল অডিটোরিয়াম নির্মাণে ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছিল আমি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে থাকতে। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এই কাজ নিজের ইচ্ছে মতো দীর্ঘদিন যাবৎ ফেলে রেখেছে। আমি উপজেলার চেয়ারম্যান থাকাকালীন অনেকবার ঠিকাদারকে তাগিদ দিয়েছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। এই ঠিকাদারকে বাতিল করা উচিত।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মো. ফারুক আহমদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি প্রকল্পের কাজ ফেলে রেখেছে। ফেলে রাখা রডে মরিচা ধরে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। রড বা নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করলে এটা টেকসই হবে না। আমি মনে করি এই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে প্রকল্প থেকে বাতিল করে এই প্রকল্পে টেন্ডারের মাধ্যমে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন।
কিংডম বিল্ডার্স লিমিটেডের প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার হাসান মাহমুদ জানান, এই প্রকল্পের কাজ বিভিন্ন কারণে শেষ হতে বিলম্ব হচ্ছে। আমি বিস্তারিত বলতে পারব না। তবে রডে বৃষ্টির পানি লাগার কারণে মরিচা পড়েছে। এগুলো পরিষ্কার করা হবে।
সুনামগঞ্জ এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন জানান, মূলত এই কাজ সময় মত শেষ না হওয়ার কারণ হল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি। আমরা এই ঠিকাদারকে অনেক বার শোকজ করেছি। সেই সাথে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে এই প্রকল্প থেকে বাতিল করার সিদ্ধান্তও নিয়েছিলাম। তবে এখানে কিছু ডিজাইনও পরিবর্তন হয়েছে, সেই সাথে মেঘ বৃষ্টির কারণেও কাজটি বিলম্বিত হয়েছে। এখন ঠিকাদারের কাজে অনেক গতি এসেছে। আশাকরি কয়েক মাসের মধ্যেই কাজটি সম্পন্ন হবে।