1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৪৪ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

অবশেষে ভাতা পেলেন পাঁচ বীরাঙ্গনা

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৮ আগস্ট, ২০১৯

স্টাফ রিপোর্টার ::
অবশেষে দিরাই-শাল্লার ৫ জন বীরাঙ্গনা স্বীকৃতি পাবার পর রাষ্ট্র কর্তৃক ভাতা উত্তোলন করেছেন। গত রোববার ৪ জন এবং মঙ্গলবার একজন বীরাঙ্গনা রাষ্ট্রীয় মুক্তিযোদ্ধা ভাতা উত্তোলন করেন। ভাতা উত্তোলনের পর বীরাঙ্গনারা এই প্রতিবেদককে ফোন করে কৃতজ্ঞতা জানান।
জানা গেছে, ১৯৭১ সনে শাল্লা উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের দালাল আব্দুল খালেক উজানগাঁও, পেরুয়াসহ আশপাশের গ্রামে নারীনির্যাতন, অগ্নিসংযোগ, গণহত্যা চালায়। ১৯৭১ সনের ৬ ডিসেম্বর ভোরে নারকীয় অভিযান চালিয়ে দালাল খালেক, শরাফত, সোবানসহ দালাল-রাজাকাররা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষদের নিশানা মুছে দিতে চেয়েছিল। ওইদিন ধরে নিয়ে গিয়েছিল বহু নারীকে। ক্যাম্পে রেখে পালাক্রমে নির্যাতন করেছিল। শহিদও হয়েছিলেন কয়েকজন। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এসব ঘটনা চাপা দিয়ে রাখা হয়েছিল। ২০১৩ সনে গণজাগরণ মঞ্চের কল্যাণে নির্যাতিত পরিবারের লোকজন মুখ খুলতে থাকেন। এই এলাকার মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কাজ শুরু করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক হাসান মোরশেদ ও শামস শামীম। তাদের রচিত ইতিহাসে ওঠে আসে একাত্তরের মর্মন্তুদ আখ্যান। শামস শামীমের ১৯৭১: চোরেরগাঁওয়ের অশ্রুত আখ্যানে দিরাই-শাল্লার ৬ চোরাপল্লীর মুুক্তিযুদ্ধের অশ্রুতগাথা ওঠে আসে প্রথম বারের মতো। এই এলাকার মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক অমরচাঁন দাসও নির্যাতিত এই নারীদের ভাতা ও স্বীকৃতির জন্য সরকারি অফিসে নিয়মিত দৌড়ঝাঁপ করেন।
২০১৬ সনে নির্যাতিত কয়েকজন নারী স্বীকৃতির জন্য আবেদন করেন। বাছাই শেষে ২০১৮ সালের ২১ জানুয়ারি পেরুয়ার বীরাঙ্গনা কুলসুম বিবি, ২০১৮ সনের ১২ নভেম্বর পেরুয়া গ্রামের বীরাঙ্গনা প্রমিলা দাস, উজানগাঁও গ্রামের পিয়ারা বেগম, মুক্তাবান বিবি ও জমিলা খাতুন এবং দিরাইয়ের আলিফজান বিবিকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে গেজেট প্রকাশ করে মন্ত্রণালয়। এরপরে তারা রাষ্ট্রীয় ভাতার জন্য আবেদন করেন। আবেদনগুলো স্থানীয় সমাজসেবা অফিস ও জেলা প্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিলে মন্ত্রণালয় তাদেরকে ভাতা প্রদানের জন্য নির্দেশনা দিয়ে তালিকা প্রেরণ করে। অবশেষে গত ৪ আগস্ট পিয়ারা বেগম, জমিলা খাতুন, মুক্তাবান ও প্রমিলা দাস মুক্তিযোদ্ধা ভাতা উত্তোলন করেন। ৬ আগস্ট আলিফজান বিবিও ভাতা উত্তোলন করেন। তবে এখনো প্রথম স্বীকৃতি পাওয়া কুলসুম বিবি ভাতা পাননি। তার ভাতার জন্য সম্প্রতি তার নামের তালিকা পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে গত রোববারই ভাতা উত্তোলনের পরে বীরাঙ্গনা পিয়ারা বেগমের ছেলে শিমুল হাসান মুক্তি এই প্রতিবেদককে ফোন করে বলেন, ভাই আমার মায় ভাতা পাইছে। মায় কইছে তোমারে জানাইতে। শিমুল তার মায়ের কাছে ফোন দিলে একাত্তরের নির্যাতিতা এই নারী ফোনে কান্না শুরু করেন। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, বাজান আমার বাপভাইসহ ৭জনকে খুন করছিল রেজাকারের দল। আমরার তিন বোনের সম্মান মারছিল। আইজ সরকার আমারে সম্মান দিল। তুমি আমরার লাগি অনেক করছো। তোমার লাগি দোয়া করি বাজান। আমারে আইয়া দেইখ্যা যাইয়ো।
এদিকে সবার আগে বীরাঙ্গনা কুলসুম বিবি স্বীকৃতি পেলেও সর্বশেষ ভাতার তালিকায় নাম না থাকায় তিনি ভাতা উত্তোলন করতে পারেননি। মঙ্গলবার সকালে এই প্রতিবেককে ফোন করে বলেন, ভাইয়ো হ্যারা বাতা পাইছে, আমি পাইনা ক্যারে। খোঁজ নিয়া আমারে জানাইয়োতো।
মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক অমরচাঁদ দাস বলেন, স্বাধীনতার এতদিন পরে এই এলাকার নির্যাতিতরা মুখ খুলতে শুরু করেছেন। যারা স্বীকৃতি পেয়েছেন তারা সবাই স্বজন হারিয়েছেন। নিজেদের সম্মান হারিয়েছেন। আজ তারা স্বীকৃতি পেয়ে রাষ্ট্রীয় ভাতা পাওয়ায় ভালো লাগছে। তাদেরকে নিয়ে আমি বিভিন্ন দফতরে স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টা করেছি।
জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক সুচিত্রা রায় বলেন, ৫জন নারী ভাতা পেয়েছেন। আরেকজনও শীঘ্রই পাবেন। প্রথম ভাতার তালিকায় নাম না থাকায় কুলসুম বিবি বঞ্চিত হয়েছেন। তবে শীঘ্রই তিনিও ভাতা পাবেন।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com