স্টাফ রিপোর্টার ::
জামালগঞ্জ উপজেলার কামারগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষিকা স্মৃতি রাণী তালুকদার চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে অদ্যাবধি কর্মস্থলে লাগাতার অনুপস্থিত রয়েছেন। তবে মাসে মাসে বেতন-ভাতা ঠিকই নিয়মিত উত্তোলন করছেন। শিক্ষা বিভাগের যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে এবং বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটিকে কোন রকম পাত্তা না দিয়ে মাসের পর মাস তিনি বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছেন। এই সহকারি শিক্ষিকার এমন লাগাতার অনুপস্থিতির কারণে বিদ্যালয়ে পাঠদান যেমন বিঘিœত হচ্ছে, তেমনি বিপাকে পড়েছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটি।
গত ১ আগস্ট কামারগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গেলে মাত্র দুই জন শিক্ষককে পাওয়া যায়। তখন শিক্ষার্থীদের ২য় সাময়িক পরীক্ষা চলছিল। প্রধান শিক্ষক মঞ্জুলাল তালুকদার ও সহকারি শিক্ষিকা পলি রানী তালুকদার এসময় উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষকদ্বয় জানান, সদ্য সরকারি এই বিদ্যালয়ে পাঁচ জন শিক্ষক ছিলেন। পরবর্তীতে দুই জন শিক্ষক বদলি জনিত কারণে অন্যত্র চলে যাওয়ায় তারা তিন জন দায়িত্বে থাকেন। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারি থেকে বিনা অনুমতিতে শিক্ষিকা স্মৃতি রাণী তালুকদার অদ্যাবধি বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকায় পাঠদানে বিঘœ ঘটছে। কোন প্রকার অনুমতি ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকায় বিপাকে পড়েছেন প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটি।
প্রধান শিক্ষক মঞ্জুলাল তালুকদার জানান, শিক্ষিকা স্মৃতি রাণী তালুকদার দীর্ঘ ছয় মাস ধরে অনুপস্থিত থাকায় আমি বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছি।
ম্যানেজিং কমিটির সহ-সভাপতি বাবুল সরকার, বিদ্যোৎসাহী সদস্য সাধনা রাণী মজুমদার, সদস্য আলেহা বেগম জানান, চলতি বছরের গত ১২ ফেব্রুয়ারি তারিখে একদিনের নৈমিত্তিক ছুটি নেন স্মৃতি রাণী তালুকদার। এরপর ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে বিদ্যালয়ে আসেননি। পরে ২৩ ফেব্রুয়ারি বিদ্যালয়ে এসে আবারো নৈমিত্তিক ছুটি নিয়ে কয়েকদিন অনুপস্থিত থাকেন। এরপর ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি লাগাতার অনুপস্থিত রয়েছেন।
ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা অভিযোগ জানিয়ে বলেন, শিক্ষিকা স্মৃতি রাণী তালুকদার বিদ্যালয়ের দায়িত্ব পালন না করলেও মাসে মাসে বেতন ভাতা ঠিকই উত্তোলন করছেন। উক্ত শিক্ষিকা বিদ্যালয়ের কারো সাথে যোগাযোগও রাখছেন না।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের শিক্ষিকা স্মৃতি রাণী তালুকদার গত ফেব্রুয়ারি থেকে বিদ্যালয়ে আসছেন না। এতে তাদের শিক্ষালাভ বিঘিœত হচ্ছে। তারা আরো জানান, তাদের শিক্ষিকা বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকাকালেও ঠিক মতো পড়াতেন না। সারাক্ষণ মোবাইল ফোনে কথোপকথনে ব্যস্ত থাকতেন। তাছাড়া বিদ্যালয় সংলগ্ন বাড়িগুলোতে আড্ডা দিয়ে সময় পার করতেন।
প্রধান শিক্ষক মঞ্জুলাল তালুকদার ও ম্যানেজিং কমিটির লোকজন আরো জানান, পাঠদানে গুরুত্ব না দিয়ে সারাক্ষণ মোবাইল ফোনে কথোপকথন ও পাড়া বেড়ানো নিয়ে আপত্তি জানালে শিক্ষিকা স্মৃতি রাণী তালুকদার তাদেরকে বাইরের লোক দিয়ে ‘বেইজ্জত করানোর হুমকি’ দিতেন। যে কারণে কেউই এই শিক্ষিকার কর্মকা- নিয়ে কথা বলতেন না। কিন্তু শিক্ষিকার এরকম স্বেচ্ছাচারিতায় শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির লোকজন বিপাকে পড়েছেন ও বিব্রতকর অবস্থায় রয়েছেন। তারা জানান, এই শিক্ষিকা বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট কাউকে তোয়াক্কা করেন না।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে শিক্ষিকা স্মৃতি রাণী তালুকদারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তিনি আগে অসুস্থ ছিলেন তবে বর্তমানে সুস্থ আছেন এবং নিয়মিত বিদ্যালয়ে যাচ্ছেন। তবে গত ১ আগস্ট বিদ্যালয়ে গিয়ে দৈনিক হাজিরা খাতায় উপস্থিতির কোন প্রমাণ না পাওয়া এবং ম্যানেজিং কমিটি, শিক্ষার্থী ও গ্রামের অন্যান্য লোকদের কাছে তার দীর্ঘকালীন অনুপস্থিতির অভিযোগ স¤পর্কে জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দেননি।
এ ব্যাপারে জামালগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. শরিফ উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি গত ৬ মে এই উপজেলায় নতুন যোগদান করেছি। এরপর জুন মাসে অফিসিয়াল ব্যস্ততা ছিল। উক্ত শিক্ষিকার দীর্ঘকালীন অনুপস্থিতির বিষয়টি আমার নজরে আসায় তাৎক্ষণিক আমার সহকারি কর্মকর্তাকে তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে বলেছি। রিপোর্ট পাবার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।