1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১১:০৬ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

‘জাতীয়’ শব্দের যথেচ্ছ ব্যবহার কেন? : মোহাম্মদ আব্দুল হক

  • আপডেট সময় বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০১৯

যে ভুলটি হয়ে যায় অসচেতনভাবে আমাদের দ্বারা, তা হলো ‘জাতীয়’ শব্দটির যথেচ্ছ ব্যবহার। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৃথিবীর অনেক দেশসহ বাংলাদেশের অনেককিছুই স্বীকৃতি পায় জাতিসংঘের মাধ্যমে। তখন তা ঘোষিত হয় বিভিন্ন মাধ্যমে। উদাহরণ হিসেবে এখানে বলা যায় আমাদের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের কথা যা প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি সারাবিশ্বে পালিত হয়। এটি মূলত বাংলা ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যে ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানে ঘটে যাওয়া ভাষা আন্দোলন, যে আন্দোলনের মাধ্যমে শহীদ, সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ আরো বহুজনের প্রাণের বিনিময়ে বাঙালির মাতৃভাষা বাংলা রাষ্ট্রীয় মর্যাদা পায়। এমনিভাবে দেশীয় পর্যায়ে অনেককিছু আছে যা আমাদের জাতীয় সংসদে উত্থাপিত হয় এবং নানা বিষয়ে বিশ্লেষণের মাধ্যমে তা ‘জাতীয়’ হিসেবে স্বীকৃত হয়। কোনোকিছু জাতীয় স্বীকৃতি পায় সমাজ, দেশীয় সংস্কৃতি এবং বিশেষ করে মানুষের মাঝে কতোটা প্রভাব আছে তার গুরুত্ব বিবেচনা করে। তবে এ কাজটি যেকোনো নাগরিকের ঘোষণায় বা কোনো সংস্থা কর্তৃক প্রকাশ পেলেই তা প্রকৃত অর্থে জাতীয় বলে স্বীকৃত হয় না। কিন্তু এমন অনেক ভুল আমরা সহজেই করে চলেছি প্রতিনিয়ত অসচেতনভাবে। এসব ভুল না করাই উত্তম। হ্যাঁ, আমাদের দেশের জাতীয় স্বীকৃতিপ্রাপ্ত অনেক কিছু আছে, যা আমাদেরকে সচেতনভাবে মনে রাখতে হবে। তাহলে আর যে কেউ যে কোনো বস্তু, সংগঠন বা প্লাটফর্মের নামের আগে ‘জাতীয়’ শব্দটি ব্যবহারের চেষ্টা করবে না, আবার কেউ কেউ তেমনটি করলে না ভেবেই সকল মানুষ একসাথে সেটাই মেনে নিবে না। তাহলে আসুন আমরা জাতীয় স্বীকৃতিপ্রাপ্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে জানি ও পাশাপাশি সহজে একটি ভুল ব্যবহার স¤পর্কে জানতে চেষ্টা করি।
আমাদের জাতীয় প্রতীক আছে। এই প্রতীকের দুই পার্শ্বে ধানের শীষ বেষ্টিত, পানিতে ভাসমান জাতীয় ফুল শাপলা, শীর্ষদেশে পর¯পর সংযুক্ত তিনটি পাট গাছের পাতা এবং তার উভয় পার্শ্বে দুটি করে তারকা। এগুলো চিনে রাখতে হয়, নিজেকে জানার জন্যেই। লাল-সবুজের পতাকা নামে আমাদের কাছে খুব বেশি পরিচিত বাংলাদেশের একটি জাতীয় পতাকা সরকারিভাবে স্বীকৃত আছে। এমনিতে পতাকাটি আয়তাকার এবং পতাকার সবুজ জমিনে লাল বৃত্ত। ১৯৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় একটি পতাকা ব্যবহৃত হয়েছিল, যার সবুজ জমিনে লাল বৃত্তের ভিতর তৎকালীন বাংলাদেশের হলুদ মানচিত্র। ওই পতাকার উপর ভিত্তি করেই পরবর্তীতে নকশা ঠিক করে ১৯৭২ সালের ১৭ জানুয়ারি বর্তমান জাতীয় পতাকাটি সরকারিভাবে গৃহীত হয়। তাহলে দেখা যাচ্ছে, কোনোকিছু জাতীয় স্বীকৃতি পেতে হয় রাষ্ট্রীয়ভাবে। সেদিক থেকে যেকোনো প্রতিষ্ঠান, বস্তু, দল বা প্লাটফর্ম-এর সাথে জাতীয় শব্দ সংযোগ করে মুখেমুখে প্রচার করাও সমীচীন হবে না।
আমাদের জাতীয় সংগীত যেমন ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’। তদ্রুপ আমাদের জাতীয় ফুল ‘শাপলা’ স্বীকৃত। আমরা জানি বাংলাদেশের জাতীয় পাখি দোয়েল, জাতীয় মাছ ইলিশ, জাতীয় বৃক্ষ আম গাছ, জাতীয় বন সুন্দর বন, আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এমনকি বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ হলো বায়তুল মোকাররম মসজিদ। জাতীয় ফল হচ্ছে কাঁঠাল। এসব কিছুই জাতীয়ভাবে রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে জাতীয় স্বীকৃতি পাওয়া। কিন্তু আমাদের দেশে অনেক কিছু আছে যা ব্যক্তি পর্যায়ে মুখেমুখে ‘জাতীয়’ নাম নিয়ে উচ্চারিত হয় এবং তা অনেকের মাঝে চলতে থাকে। যেমন ধরুন, ঢাকা থেকে কয়েকজন মিলে একটি সংগঠন গড়ে তুললেন, নাম ‘জাতীয় ক সংঘ’। এমনও দেখা যায় কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা আর্থিক কোনো প্রতিষ্ঠানের নামের আগে জাতীয় শব্দটি জুড়ে দিয়ে বহুল প্রচার চলছে সারাদেশে। আমার কথা হলো, যেহেতু কোনোকিছু রাষ্ট্রীয়ভাবে জাতীয় ঘোষিত হলে তা জাতীয় ঐতিহ্যের অংশ হয় তাই জাতীয় শব্দটি অধিক গুরুত্বপূর্ণ। নিশ্চয়ই এমন একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্রের স্বাধীনতার এতো বছর পরেও উদাসীন থাকা ঠিক নয়। পাশাপাশি জন সচেতনতা জরুরি। আমি খুব ভালোভাবেই লক্ষ করে দেখেছি, যেকোনো বিষয়ের সাথে ভুল ভাবে জাতীয় শব্দ প্রয়োগের ক্ষেত্রে আমাদের লেখাপড়া জানা মানুষই অগ্রণী ভূমিকা রাখছেন। আমাদের অতিসাধারণ একটি ভুল হলো, রাজধানী থেকে কোনো পত্রিকা এলে বাংলাদেশের সকল জায়গার মানুষ একে ‘জাতীয় পত্রিকা’ বলে ফেলি। কিন্তু যদি প্রশ্ন সামনে নিয়ে আসি আমাদের জাতীয় পত্রিকা কি? উত্তর হবে, অন্যান্য অনেক জাতীয় স্বীকৃত বিষয়ের মতো আমাদের এখনো জাতীয় কোনো পত্রিকা নেই। অথচ ঢাকা থেকে প্রকাশিত পত্রিকাকে আমরা সহজে, না ভেবেই বলি ‘জাতীয় পত্রিকা’। বাস্তবতা হলো, সুনামগঞ্জ থেকে দৈনিক সুনামকণ্ঠ, সিলেট থেকে যেমন দৈনিক সিলেটের ডাক, দৈনিক জালালাবাদ ইত্যাদি তেমনি ঢাকা থেকে প্রথম আলো, যুগান্তর ইত্যাদি পত্রিকা প্রকাশিত হয়। সেদিক থেকে বাংলাদেশে জাতীয় পত্রিকা বলে কিছু ঘোষণা নেই। এ ব্যাপারে এখন থেকেই সচেতন হতে হবে। এই লেখার মূল বিষয়ে বুঝার জন্যে পরিসর বাড়ানোর আর প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না।
পরিশেষে বলছি, আমাদেরকে শব্দ প্রয়োগের ক্ষেত্রে একটু সচেতন হতে হবে। রাজধানী ঢাকা কিংবা বন্দর নগরী চট্টগ্রাম থেকে যে কোনো কিছুর সাথে ‘জাতীয়’ শব্দ ব্যবহার করলেই আমরা সেটা মেনে নেবো না। অনেক সময় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামের আগে জাতীয় শব্দের ব্যবহারে সাধারণ মানুষ অতি আস্থা রেখে বিভ্রান্ত হয়, প্রতারিত হয়। এ বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
[মোহাম্মদ আব্দুল হক : কলামিস্ট, কবি ও প্রাবন্ধিক]

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com