1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০২:১৫ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

মশা নিয়ে কথা : সুখেন্দু সেন

  • আপডেট সময় সোমবার, ২২ জুলাই, ২০১৯

বঙ্গদেশে মশা’ই কার্যত স্বাধীন। বংশবৃদ্ধিতে, কর্মকাণ্ডে, অবাধ যাতায়াতে বাধাহীন, নিয়ন্ত্রণহীন। ঘরে, ছাদে, বাগানে, পথেঘাটে, দিনে-রাতে, বর্ষা-গ্রীষ্মে, শীতবসন্তে সর্বস্থানে, সর্বকালে সমানভাবে বিরাজমান। মশক চরিত্রটি আবার খাঁটি অসাম্প্রদায়িক। জাতপাত, ধর্ম, বর্ণ, পেশা, ধনী, দরিদ্র নির্বিশেষে সকলেই এর আক্রমণের শিকার। পুলিশও মশার কামড়ে কাবু হয়, মানুষের স্বাস্থ্যরক্ষার দায়িত্ব যার উপর সেই সিভিল সার্জনেরও এডিস মশার কারণে প্রাণ যায়। মশাদের এমন সার্বভৌম দাপট নিয়ন্ত্রণ করার কোন কর্তৃপক্ষ আছে বলে মনে হয় না।
আমাদের প্রকৃতি, পরিবেশ, প্রতিবেশে এই ক্ষুদ্র পতঙ্গটি কোন উপকারে না লাগলেও ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, জিকাভাইরাস, ইয়ালো ফিভার, এনসিফিলটিস, ফিয়ারিলোটিস প্রভৃতি জীবনঘাতি এবং যন্ত্রণাদায়ক ব্যাধির ধারক এবং বাহক। এছাড়াও স্বাভাবিকভাবে যখন তখন, যত্রতত্র এদের তীক্ষè হুলাঘাত অস্বস্তিকর, বিরক্তিকর। কোন কোন ক্ষেত্রে জনজীবন বিপর্যস্ত করে তোলার কারণ। এই পররক্তভোজি মশককুলের সঙ্গেই আমাদের নিরুপায় নিত্য বসবাস।
মশক প্রভাবিত সমাজে রক্তপিপাসু দ্বি-পদ মশকেরাও শোষণ প্রক্রিয়ায় মশাদের মতই নিয়ন্ত্রণবিহীন। মনুষ্য কুলের এডিস, অ্যানোফেলিসরাও কার্যত স্বাধীন। সমাজের, রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রেই এদের অবাধ বিচরণ এবং অবস্থান। মশককুলে স্ত্রী জাতীয়রাই নাকি অধিক ভয়ংকরী। অধিকাংশ প্রাণঘাতি মারণাস্ত্র তাদেরই দখলে। সে ক্ষেত্রে পুরুষ মশা অনেকাংশে নিরীহ প্রকৃতির। আমাদের বঙ্গনারী চরিত্রে এদের প্রভাব কতটুকু কার্যকর তা অভিজ্ঞজনেরা বুঝবেন, এ আলোচনা সে প্রসঙ্গে নয়; মূলত মশক নিয়ন্ত্রণের।
বিশ্বের প্রায় সকল দেশেই মশার প্রাদুর্ভাব। চিনা সেনাবাহিনী নাকি মশাকে শত্রু গণ্য করে এর বিরুদ্ধে যুদ্ধঘোষণা করেছে। মিসাইল প্রযুক্তি ব্যবহার করে মশা ধ্বংসে রাডার উদ্ভাবন করেছে। “মশা মারতে কামান দাগা” এ কেবল প্রবচনই নয় কার্যক্ষেত্রে প্রয়োগ। বছর খানেক আগে একদল বৃটিশ গবেষক মশার জিনগত পরিবর্তন ঘটিয়ে নুতন মশার আবিষ্কার করেছেন বলে দাবি করেছিলেন। পরিবর্তিত জিনের মশা ছড়িয়ে দিয়ে কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার মত এডিস মশা ধ্বংস করার পরিকল্পনা নিয়েছেন তারা। আর আমরা কেবল বহুজাতিক রক্তচোষা প্রতিষ্ঠানের বাজারজাত কয়েল, স্প্রে, ইলেকট্রনিক নেটের উপর নির্ভর হয়ে বসে আছি। মুদিখানা, মনোহারি দোকানগুলোতে থরে থরে সাজানো হরেক নামের হরেক মানের, হরেক গুণের কয়েল। ব্ল্যাক ফাইবার, পাওয়ার বোস্টার, মর্টিন কিং, মর্টিন পাওয়ার, লেমন, গুডনাইট, বাওমা, নিনজা’র একসময় খুব ছড়াছড়ি ছিল। এখন আবার নিম, তুলসী প্রভৃতি ভেষজ নামীয় দেশীয় কয়েলও বাজারে চালু হয়েছে। খেটে খাওয়া মানুষের নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্যতালিকাতেও মশার কয়েল অপরিহার্য। ডিজিটাল যুগের মশারাও একধাপ এগিয়ে পাল্লা দিয়ে প্রতিরোধ শক্তি অর্জন করে নিয়েছে। কয়েলগুলি মশা তাড়ানোতে এখন আর তেমন কার্যকর নয়। আধুনিক মশারা মাক্স ব্যবহার করে কিনা কে জানে। নামী দামি ব্র্যান্ডের স্প্রেগুলিও কাক্সিক্ষত ফল দানে ব্যর্থ। এমনকি ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের আমদানিকৃত মশকনিধন ওষুধও নাকি মশারা তুচ্ছজ্ঞান করছে।
একসময় জনস্বাস্থ্য দফতর, পৌরসভা মশক নিয়ন্ত্রণ ও মশক নিধনে কিছু কিছু উদ্যোগ নিতো, ঔষধ ছিটাতো, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভিযান চালাতো। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, স্কুল-কলেজের ছাত্ররাও মশার উৎপত্তি স্থল ডোবা, খাল, পুকুরের কচুরিপানা পরিষ্কারে স্বপ্রণোদিত অংশ নিতো। এখন ডোবা, নালা তেমন নেই। কচুরিপানাও দেখা যায় না। তবে মশার বংশ বিস্তার আছে। শহরের ড্রেনগুলো মশা উৎপাদনের খামার হয়ে রয়েছে। দিনে দিনে মশা আরো প্রাণঘাতি হয়ে উঠেছে ঠিকই কিন্তু মশক নিয়ন্ত্রণের বা নিধনের নেই কোন কার্যকরী উদ্যোগ। মশারা স্বাধীনভাবেই বংশ বিস্তার করছে, অবাধে বেড়ে উঠছে, নির্বিবাদে কার্য স¤পাদন করে যাচ্ছে। এই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পতঙ্গটি নিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্তদের বড়বড় মস্তিষ্ক ঘামানোর কোন অবসরই নেই। একসময় মশারি ছিল সুরক্ষা। আজকাল মশারিতে ফ্যানের বাতাস ঢুকতে না পারলেও মশারা ঠিকই গলে যায়। তা মেনে নিয়েও নিদ্রাকালীন সময়কালে মশারিতলকে নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে। কিন্তু বাকি সময়? হস্ত নির্ভর আত্মরক্ষা। তাও হস্ত সঞ্চালন সব সময় অব্যর্থ নয়। কখনও কখনও কষাঘাতে দু’একটি নি®েপষিত হলে কিছুটা আত্মতৃপ্তি লাভ ঘটে বটে কিন্তু মশা মেরে বাহাদুরী ফলানোর কোন কারণ নেই। স্বল্পায়ু মশা আখেরি খাবার খেতে এসে আকণ্ঠ রক্তপানে তার পেটসর্বস্ব লম্বাকৃতির ক্ষুদ্র দেহটিকে ফুটবলাকৃতি করে নিয়েছিল। এমন দেহ নিয়ে উড়ে গিয়ে বাড়ি ফিরা সম্ভব ছিল না। সে চেষ্টা করতে গেলে আছড়ে পড়ে পেট ফেটে এমনিতেই মারা যেতো। হস্তচালনাতো নিমিত্ত মাত্র। অপঘাতে এমন দু’একটি মৃত্যু মশককুলের ক্ষয়বৃদ্ধির কোন হেরফের হয় না। এর আগেই বংশবিস্তার ঘটিয়ে তাদের সন্তান-সন্ততিদের মানুষ করে তুলেছে।
রক্তচোষার কায়দা-কানুন তারাও রপ্ত করে নিয়েছে।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com