1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৫০ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

শিক্ষক পেটানো ও ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করাই তার নেশা

  • আপডেট সময় বুধবার, ৩ জুলাই, ২০১৯

স্টাফ রিপোর্টার ::
শিক্ষক পেটানো ও ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করাই নেশা তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাটের আবু তাহেরের বখাটে পুত্র তোফাজ্জল হোসেনের। বিভিন্ন সময়ে সে অন্তত ৬ জন শিক্ষককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছে। বখাটেপনায় বাধা দেওয়ায় দুই ছাত্রীর পিতা ও পরিবারের লোকজনকে লাঞ্ছিত করেছে। তার ভয়ে এলাকাও ছেড়ে গেছেন একজন ছাত্রী। আরেকজনের পড়ালেখা বন্ধ রয়েছে। পিতৃসম একজন ব্যবসায়ীকে বাজার থেকে তুলে নিয়ে বাড়িতে গাছের সঙ্গে বেঁধে পিটিয়েছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা তার বখাটেপনার প্রতিবাদ করায় তাকেও প্রকাশ্যে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছে সে। এসব ঘটনায় লাঞ্ছিতরা বিচার চাইলেও প্রভাবশালী পিতা ও তার প্রভাবশালী আত্মীয়রা বিচার করেনি। যার ফলে দিনে দিনে আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে তোফাজ্জল। সর্বশেষ গত ৩০ জুন তোফাজ্জলের ভাগ্নে পাভেলকে নকলে বাধা দেওয়ায় স্কুলে ঢুকে শিক্ষক মাজেদুল ইসলামকে বেধড়ক মারধর করেছে। এ ঘটনায় পরীক্ষা বর্জন করে বখাটের বিচারের দাবিতে আন্দোলন করছেন স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বখাটেপনাই তোফাজ্জলের কাজ। প্রভাবশালী পরিবারের সদস্য হিসেবে এসব করে পার পেয়ে দিনে দিনে সে আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে। নির্যাতিত মানুষজন বিচার না পাওয়ায় এবং তার পরিবারের ভয়েও আইনী আশ্রয় নিতে ভয় পান বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর। দীর্ঘদিন ধরে তোফাজ্জল বাদাঘাট সরকারি কলেজ ও পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ে অবাধে প্রবেশ করে ক্যাম্পাসেই বখাটেপনা করে। তাছাড়া স্কুল-কলেজের ছাত্রীদের রাস্তাঘাটেও উত্ত্যক্ত করে সে।
জানা গেছে, বাদাঘাট বাজারের একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ীর স্কুলপড়–য়া মেয়েকে প্রকাশ্যে উত্ত্যক্ত করে তোফাজ্জল। এর প্রতিবাদ করায় মেয়েটির পিতাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে সে। বাদাঘাট বাজারে প্রকাশ্যে এমন ঘটনা ঘটালেও বিচার করেননি বখাটের পিতা আবু তাহের ও গোষ্ঠীর প্রভাবশালী আত্মীয়রা।
বাদাঘাট পাবলিক স্কুলে ক্লাস চলাকালীন কমনরুমের বাইরে বখাটেপনা করায় শিক্ষক শক্তিরঞ্জন দাস প্রতিবাদ করলে তাকে প্রকাশ্যে মারধর করে তোফাজ্জল। এ ঘটনায় ওই শিক্ষক বখাটের পিতা ও তার আত্মীয়দের কাছে বিচারপ্রার্থী হলে বিচার করেনি তারা। তোফাজ্জলের পিতা স্কুল পরিচালনা কমিটির সদস্য থাকায় শিক্ষককে হুমকি-ধমকি দেন তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কামরাবন্দ গ্রামের জনৈক ব্যক্তির অষ্টম শ্রেণি পড়–য়া ছাত্রীকে রাস্তাঘাটে উত্ত্যক্ত করেছে তোফাজ্জল। ওই ছাত্রীর বাড়িতে গিয়ে দলবল নিয়ে বেপরোয়া আচরণ করে হুমকি ধমকি দিয়ে এসেছে। পরিবারের লোকজন বিচারপ্রার্থী হলেও তোফাজ্জলের পিতা-মাতা বিচার করেনি। তার ভয়ে পরিবারের লোকজন কিছুদিন ছাত্রীকে স্কুলে আসতে দেননি।
বাদাঘাট বাজারের আরেক ব্যবসায়ীর মেয়েকেও প্রকাশ্যে উত্ত্যক্ত করে বখাটে তোফাজ্জল। মেয়েটির বাড়িতে গিয়েও সে হুমকি ধমকি দিয়ে এসেছে একাধিকবার। তার ভয়ে অনেক দিন স্কুলে যায়নি মেয়েটি। এখনো তার ভয়ে তটস্থ থাকেন ছাত্রী ও তার পরিবার।
বাদাঘাট বাজারের ডাক্তার ও মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম বখাটে তোফাজ্জুলের বখাটেপনার প্রতিবাদ করায় পিতৃসম এই মুক্তিযোদ্ধাকে প্রকাশ্যে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে সে। ওই মুক্তিযোদ্ধা তোফাজ্জলের পিতার কাছে বিচারপ্রার্থী হলেও কোনো বিচার করা হয়নি। উল্টো আরো তাকে শাসিয়ে দেয়া হয়। বখাটের বোন জামাই দুলাল মিয়া এ ঘটনায় উল্টো মুক্তিযোদ্ধাকে হুমকি ধমকিও দেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
গত ৩০ জুন বাদাঘাট পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ে ঢুকে শিক্ষক মাজেদুল ইসলামকে বেধড়ক মারধর করে বখাটে তোফাজ্জল। শিক্ষক বখাটে তোফাজ্জলের ভাগ্নে পাভেলকে নকলে বাধা দিয়ে তাকে পরীক্ষা হল থেকে বের করে দিয়েছিলেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তোফাজ্জল স্কুলে ঢুকে ওই শিক্ষককে মারধর করে। এ ঘটনায় স্কুলের দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা বর্জন করে বখাটে তোফাজ্জলের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবিতে প্রতিবাদী কর্মসূচি পালন করছে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এদিকে, এ ঘটনায় মামলা হলে পালিয়ে গেছে তোফাজ্জল ও তার পিতা আবু তাহের। আবু তাহের বর্তমানে স্কুল পরিচালনা কমিটির সদস্য।
জানাগেছে, বাদাঘাট পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে অন্তত ৫ বার শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছে বখাটে তোফাজ্জল। আত্মসম্মানের ভয়ে তিনি চুপ করে থাকলেও তার পিতার কাছে বিচারপ্রার্থী হয়েছিলেন। বাদাঘাট সরকারি কলেজের প্রিন্সিপালকেও লাঞ্ছিত করেছে বখাটে তোফাজ্জল। একই কলেজের শিক্ষক আবু হানিফাকেও প্রকাশ্যে মারধর করেছে সে। কলেজের মেয়েদের উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করায় তাদেরকে লাঞ্ছিত করেছিল। বাদাঘাট পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আফজালুল হক শিপলুকেও প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত করেছিল বখাটে তোফাজ্জুল। তিনি বিচারপ্রার্থী হলেও বিচার পাননি।
বিভিন্ন সময়ে বেপরোয়া তোফাজ্জল পৈলনপুর গ্রামের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রহমত আলী ওরফে রমহু মিয়াকে বাদাঘাট বাজারের বাদামপট্টি থেকে প্রকাশ্যে ফিল্মি স্টাইলে ধরে নিয়ে বাড়ির উঠোনের গাছের সঙ্গে বেঁধে বেদম প্রহার করেছে। এ ঘটনায় মামলা হলে পালিয়ে যায় এই বখাটে। প্রাক্তন ইউপি সদস্য সুন্দরপাহাড়ি গ্রামের শামসুদ্দিন মিয়া, তার ভাই ও দোকান কর্মচারীকে বখাটে তোফাজ্জল ও তার বাবা আবু তাহের মিয়াসহ সাঙ্গপাঙ্গরা মিলে দোকানে গিয়ে হামলা করে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছিল। এ ঘটনায়ও বিচার হয়নি।
ভুক্তভোগীরা জানান, তোফাজ্জলের পরিবার এলাকার সবচেয়ে প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ ভয়ে প্রতিবাদ করার সাহস পায়না। মুখ বুঝে সবকিছু সহ্য করে নিয়েছেন তারা।
বাদাঘাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন বলেন, তাহিরপুরের স্বীকৃত বখাটে তোফাজ্জল। সে তার পারিবারিক প্রভাবের কারণে ছাত্র না হওয়া সত্ত্বেও স্কুল কলেজে ঢুকে ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করে। শিক্ষকরা প্রতিবাদ করায় অনেককেই একাধিকবার লাঞ্ছিত করেছে সে। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এমনকি বাড়িতে গিয়েও নিরীহ পরিবারের মেয়েদের উত্ত্যক্ত করে সে। পরিবারের লোকজন কখনো তার বিচার করেনি। অনেক মেয়ে তার কারণে পড়ালেখা ছেড়ে দিয়েছেন। সে নিরীহ ব্যবসায়ীদের নানা সময়ে নির্যাতন করেছে। দোকানে হামলা করেছে।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুণাসিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, ছেলেটা বেপরোয়া। তার বিরুদ্ধে শিক্ষক পেটানো, ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করাসহ মানুষকে নির্যাতন করার অভিযোগ আছে। সর্বশেষ একজন শিক্ষককে স্কুলে ঢুকে প্রকাশ্যে পিটিয়েছে। আমরা তার শাস্তির জন্য আইন -শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছি।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com