1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:২৯ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

বিআরটিসি বাস সার্ভিস চালু রাখতে হবে : বিশ্বজিত রায়

  • আপডেট সময় রবিবার, ১৬ জুন, ২০১৯

গত ৩ জুন সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে বিআরটিসি বাস সার্ভিসের উদ্বোধন করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। যাত্রীসাধারণের দুর্ভোগ অস্বস্তির কথা চিন্তা করে মাননীয় মন্ত্রী এমএ মান্নান যে কাজটি করেছেন সেটা জনবান্ধব, জনহিতকর, মহতি উদ্যোগ। এর জন্য মন্ত্রী মহোদয় আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ এবং আপনার বরাবরে হৃদ কল্লোলিত কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। আপনি জনভোগান্তির অধৈর্য্য ভাষাগুলো বুঝতে পেরেছেন। এই সড়কে যাত্রীদের প্রতি চালক-হেল্পারদের নিত্য অসদাচরণ অতি বেলেল্লাপনার খবর আপনার মনকে স্পর্শ করেছে বিধায় আপনি সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে বিআরটিসি বাস সার্ভিস উদ্বোধন করে যাত্রীদের পরম কাক্সিক্ষত অভাবটুকু পূরণ করার চেষ্টা করেছেন। এজন্য সুনামগঞ্জের সর্বস্তরের মানুষেরা নির্দ্বিধায় মন্ত্রী মান্নানকে সাধুবাদ সালাম জানাচ্ছে। যার প্রমাণ পাওয়া যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে।
সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে চলাচলরত যাত্রীদের হয়রানি দূর করতে বিআরটিসি বাস চালু অত্যন্ত যুগোপযোগী সঠিক সিদ্ধান্ত। এর বিরুদ্ধে আগামী ২৪ জুন থেকে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ নামের একটি সংগঠন। এদের অসমর্থনযোগ্য ধর্মঘট ও নৈরাজ্যকর প্রতিবাদ রুখতে সোচ্চার হচ্ছেন সুনামগঞ্জের সচেতন মানুষ। সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন আভাসই পাওয়া গেছে। এমনকি বিআরটিসি বাস উদ্বোধনকালে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের নৈরাজ্য থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি সরকারকে দুর্বল ভেবে শক্তি প্রদর্শনে বাধ্য না করারও কথা জানিয়ে ভোগান্তি থেকে জনগণকে মুক্তি দেয়ার তাগিদ দিয়েছেন। এ তাগিদ যেন লোক দেখানো না হয়। কারণ এর আগে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের নৈরাজ্য দেখেছে মানুষ। ওদের দ্বারা সৃষ্ট অমোচনীয় কালির দাগ এখনও শুকায়নি। সেটা দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছিল। এখন সুনামগঞ্জ-সিলেটকে আক্রান্ত করার মহড়া দিচ্ছে এখানকার পরিবহন মালিক শ্রমিকেরা। শুধু তা নয়, আনুষ্ঠানিক বৈঠক করে তারা সরকারি সিদ্ধান্তের বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদের কাছেও কৈফিয়ত চেয়েছে। [সূত্র : সুনামকণ্ঠ, ১৩.০৬.১৯] এদের এই দুঃসাহস রাষ্ট্র তথা সুনামগঞ্জের মানুষকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন নয় কি?
আজ সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে বিআরটিসি বাসের প্রয়োজন পড়ল কেন? সুনামগঞ্জের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সচেতন মানুষের মাঝেই বা ক্ষোভের সঞ্চার ঘটলো কেন? আসলে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে চলাচলরত পরিবহন ব্যবস্থার প্রতি মানুষের ক্ষোভ একদিনের নয়। এটা দীর্ঘদিনের সঞ্চিত সমস্যা। পরিবহন মালিকদের মুনাফালোভী মনোভাব, বাসচালক-হেল্পারদের চরম দুর্ব্যবহার এবং নিয়ম-নীতির তোয়াক্কাহীন গাড়ি চালনা যাত্রীসাধারণকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। গাড়িতে যাত্রী বনাম হেল্পার-চালকদের বচসা বাকবিত-া যেন জনে জনে নিত্যদিনের ঘটনা। বিশেষ করে হেল্পারশ্রেণি ভদ্র-মার্জিত যোগ্যতাসম্পন্ন যাত্রীকেও পরোয়া করছে না। আর সাধারণ মানুষতো তাদের কাছে এক্কেবারে গ্রাহ্যহীন অনর্থক। অন্যদিকে বেচারা বাসচালক হেল্পারের অন্যায্য বাকবাকুম বাহাদুরীতে সমর্থন দিয়ে জড়িয়ে পড়ছেন যাত্রী হেনস্থার হায়াহীন কর্মে। যা সহে সহেই সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে চলতে হচ্ছিল মানুষকে।
সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের যাত্রী-যানবাহন সম্পর্কিত ত্যক্ততর অভিজ্ঞতা যার আছে সেই কেবল অনুধাবন করতে পারবেন এখানকার যান যন্ত্রণা কতটা বিরক্তিকর। প্রথমে আপনি গেলেন বাসস্ট্যান্ডে, সেখানে প্রবেশের পূর্বেই লোকাল বাস হেল্পারদের জোর ডাকাডাকি অতঃপর ‘না বিরতিতে যাবো’ বললে তাদের কটূক্তিপূর্ণ বাক্য ব্যবহার। যা শোনে না শোনে সোজা টিকেট কাউন্টারে চলে যাওয়ার পর টিকেট মাস্টারদের গাগতরে অহংসর্বস্বতা ভাব ডিঙিয়ে হাতে তুলে নিলেন বাসটিকেট। সামনে দাঁড়ানো লক্কর-ঝক্কর ভাঙাচুরা গাড়িটাই আপনার টিকেট নির্ধারিত গাড়ি। মনে হয় রাজধানী শহরের অকেজো অব্যবহৃত গাড়িগুলো নতুন প্রলেপে নামানো হয়েছে সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে। উঠলেন সেই গাড়িতে। উঠে প্রথমে যাতে ধাক্কা খেতে হয় সেটা হলো সিট নাম্বার। টিকেটে লেখা সিট নাম্বার গাড়ির ভেতরের কোথাও লেখা না থাকায় যাত্রীদের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এরপর হেল্পার ডেকে অনেক বলেকয়ে বসলেন সিটে। বসেই দুই যাত্রীদেহের চাপাচাপি অবস্থা। মানে একত্রিত সিট দুইটার এমন অবস্থা যেখানে দু’জনের আরাম-আয়েশে বসাটা অত্যন্ত কষ্টকর। তারপরও অনেক সহ্য করে এ রুটে যাতায়াত করছেন মানুষ।
সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে চলাচলরত সুনামগঞ্জের এমন কোনো মানুষ বাকি নেই যাদের বিড়ম্বিত ভাগ্য অভিজ্ঞতায় ঠাঁই হয়নি চালক-হেল্পারদের চরম দুর্ব্যবহার। এ সড়কে গাড়ি যাতায়াতের টিকেট মূল্য যখন নব্বই টাকা ছিল তখন কাউন্টারের টিকেটবাবুরা একশ’টাকার নোট দিলে টিকেটের পেছনে দশ টাকা ফেরতের কলম কুচা দিয়ে দেওয়ার পরবর্তী হিসাব-নিকাশে যাত্রীরা প্রায় সময়ই হেল্পারের চোখ রাঙানি ও কুকথার শিকার হতেন। অনেক সময় যাত্রী-হেল্পারের মাঝে মারমুখী অবস্থার সৃষ্টি হতো। এছাড়া বিরতিহীন টিকেটের গাড়িটি রাস্তায় উঠার পর রূপ নিতো লোকাল মুড়ির টিনে। পথে পথে যাত্রী উঠানামা এবং গাড়ির ভেতরগত ঘিঞ্জি পরিবেশ মানুষকে ক্ষেপিয়ে তুলতো। বর্তমানে এ সমস্যার কিছুটা লাঘব হয়েছে। তারপরও হেল্পার-চালকদের দুর্ব্যবহার থামেনি। এসব কারণে যাত্রীসাধারণ দীর্ঘদিন ধরে অন্তর্জ্বালায় ভোগছিলেন। সেই দীর্ঘ দহন মোচন হতে চলেছে।
সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে বিআরটিসি বাস চলাচল উদ্বোধনের মাধ্যমে পরিবহন মালিক ও চালক-হেল্পারদের একতরফা আচরণ থামানোর একটা পথ তৈরি হয়েছে। কিন্তু যাত্রীসাধারণের অন্তর্জ্বালা দূর হলেও পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের গায়ে জ্বালা ধরেছে। তারা আগামী ২৪ জুন থেকে ৭২ ঘণ্টা পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন। তাদের এই বাহাদুরী রুখে দিতে প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠছে সুনামগঞ্জ। এ সড়কে উন্নত বাস সার্ভিস চালু, পরিবহন ধর্মঘটের নামে সাধারণ মানুষকে হয়রানি বন্ধ করা, বিআরটিসি বাসের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন দাবিতে শহরের নানা শ্রেণি পেশার মানুষের অংশগ্রহণে মানববন্ধন, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং পরিবহন মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ বরাবরে স্মারকলিপি প্রদানের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সুনামগঞ্জ যাত্রী কল্যাণ পরিষদ। এছাড়া সুনামগঞ্জ ও সিলেট সড়কে বাস মালিকদের অনৈতিক, অযৌক্তিক বাস ধর্মঘট প্রত্যাহার করা না হলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার কথাও জানিয়ে দিয়েছে সংগঠনটি। [সূত্র : নিউজসুনামগঞ্জ ডট কম, ১৫.০৬.১৯] অন্যদিকে সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপার মো. বরকতুল্লাহ খান বলেছেন, ‘পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের ধর্মঘটে প্রাইভেট পরিবহন ও বিআরটিসি বাস চলাচলে বাধা দিলে জনগণের সহযোগিতায় পুলিশ এই নৈরাজ্য প্রতিরোধ করবে। প্রয়োজনে জনগণের সুবিধার জন্য সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে আরো বিআরটিসি বাস নিয়ে আসা হবে।’ [সূত্র : সুনামকণ্ঠ, ১৫.০৬.১৯]
সাম্প্রতিক সময়ে দেশব্যাপী পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘটের নামে চরম নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির শিকার হয়েছে মানুষ। অমোচনীয় কালি লেপন করা হয়েছিল মানুষের মুখে। আবারও সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে ধর্মঘটের নামে নৈরাজ্যের ঘোষণা দিয়েছে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের একটি সংগঠন। এদের অন্যায্য তৎপরতা থামাতে সচেতন সুনামগঞ্জবাসীসহ রাষ্ট্রযন্ত্রকেও তৎপর হতে হবে। এরা কোনো মতেই যেন সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে কোনো ধরনের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে না পারে। এ জন্য প্রয়োজন রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট সংস্থার দায়িত্বশীল তৎপরতা। সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের এই পরিবহন সেক্টরটি সাধারণ মানুষকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। এদেরকে আর বাড়তে দেওয়া যাবে না। দ্রুত গতিতে ব্যবস্থা নিয়ে সুনামগঞ্জের যাত্রীসাধারণকে মুক্তি দিতে হবে।
[বিশ্বজিত রায় : সাংবাদিক ও কলামিস্ট]

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com