1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৫০ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

ধান কিনতে তৎপর দালাল চক্র

  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৩ জুন, ২০১৯

শামস শামীম ::
সরকারিভাবে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধির খবরে হাওরাঞ্চলে দালাল ও ফড়িয়া সিন্ডিকেট কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহের তৎপরতা শুরু করেছে। বেশি দামে গুদামে ধান দিতে কৃষকের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে গ্রামে গ্রামে গিয়ে ‘পাইকার’ সেজে তারা কম দামে ধান কিনছে। উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী কৃষকদের দুরাবস্থার কথা চিন্তা করে আরো আড়াই লক্ষ মেট্রিক টন বোরো ধান কেনার নির্দেশনা দিয়েছেন। এই ঘোষণার পরই দালালদের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি পেয়েছে।
সরকার চলতি মওসুমে মাত্র ৬ হাজার ৫০৮ মেট্রিক টন ধান সুনামগঞ্জের কৃষকদের কাছ থেকে ন্যায্য দামে কেনার জন্য বরাদ্দ দিয়েছে। ইতোমধ্যে বরাদ্দের ধান সংগ্রহ কার্যক্রম চলছে। জেলায় এবার ২ লক্ষ ২৪ হাজার ৪৪০ হেক্টর জমিতে উৎপাদিত ধানের পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৯ লাখ মে.টন। সরকারি বরাদ্দ অনুযায়ী মাত্র সাড়ে তিন লাখ চাষী পরিবার প্রতি মাত্র ১৮ কেজি ধান বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে হাওরাঞ্চলের বিভিন্ন জনপদে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলন, সুনামগঞ্জ কৃষক সংহতি, কৃষি ও কৃষক রক্ষা সংগ্রাম পরিষদ, ক্ষেত মজুর সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠন উৎপাদন অনুপাতে কৃষকদের কাছ থেকে ধানসংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানোর দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করেছে। এছাড়াও সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদও উৎপাদন অনুপাতে ধানের বরাদ্দ বাড়ানোর দাবিতে মন্ত্রণালয়ে ডিও লেটার প্রেরণ করেন। সুনামগঞ্জে ঈদের আগে বিভাগীয় কমিশনার ধান সংগ্রহ কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও সুধীজন ধান সংগ্রহের পরিমাণ বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছিলেন।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ জেলায় পূর্বের বরাদ্দকৃত ৬ হাজার ৫০৮ মেট্রিক টনসহ প্রায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন বরাদ্দ আসতে পারে। এতে অনেক কৃষকই ২৬ টাকা কেজি দরে সরকারি গুদামে ধান দেওয়ার সুযোগ পেতে পারেন। মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে প্রস্তুত থাকতেও সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে কৃষক পর্যায় থেকে ধানের বরাদ্দ বাড়ানোর সরকারি ঘোষণায় দালাল ফড়িয়ারা গ্রাম পর্যায়ে গিয়ে দালাল শ্রেণির মৌসুমী কৃষকদের সহযোগিতায় কম দানে ধান কেনা শুরু করে দিয়েছে। ফসল উৎপাদন পরবর্তী বিয়ে-শাদি, পারিবারিক আচারাদিসহ প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটানোর জন্য কৃষক বাধ্য হয়েই কম দামে ধান বিক্রি করছেন। বিভিন্ন স্থানে মিল মালিকের প্রতিনিধিরাও দালাল ধরে কৃষকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পাইকার সেজে ৬০০-৭০০ টাকায় ধান কিনে আনছে। কৃষক নেতারা জানান, ধানের পরিমাণ বাড়ালেও সুবিধা পাবেন না প্রকৃত কৃষকরা। কারণ তাদের উদ্বৃত্ত ধান ইতোমধ্যে শেষ হয়ে যাচ্ছে। যা আছে সারা বছরে খোরাকি। তাছাড়া কিছু কৃষকের হাতে যে ধান রয়েছে তাও এখন ৬০০-৭০০ টাকা দরে কিনে আনছে পাইকাররা।
তাহিরপুর উপজেলার বালিজুরি গ্রামের কৃষক এনামুল হক বলেন, আমার ৩৩ বিঘা জমি প্রান্তিক কৃষকরা আবাদ করেছিলেন। চিটার ক্ষতি বাদে যে অল্প ধান উদ্বৃত্ত রেখেছিলেন তাও প্রয়োজনে কম মূল্যে বিক্রি করে দিচ্ছেন। এখন তাদের হাতে উদ্বৃত্ত ধান নাই। তাছাড়া এই কৃষকরাও সরকারি গুদামে ধান দিতে পারেননি।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার আঙ্গারুলি গ্রামের বর্গাচাষী যুগল বিশ্বাস বলেন, দরকারের সময় কম দামে ধান বিক্রি করছি। এখন বাড়ি বাড়ি আইসা কিছু পাইকাররা ধান কিনতে চাচ্ছে। আমরার হাত খালি। টাকার দরকার। তাই ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি।
তাহিরপুর উপজেলার মেঞ্জেরগাঁও গ্রামের কৃষক আব্দুল হাই বলেন, চিটার ক্ষতি পুষিয়ে মাত্র ৪০ মণের মতো ধান তোলতে পেরেছিলাম। এখন আমাদের এলাকায় বাড়ি বাড়ি এসে ধান কিনতে চাচ্ছে পাইকাররা। তিনি বলেন, ধান চাষ করে কৃষকের লাভ নাই।
কৃষক নেতা কমরেড অমর চাঁন দাস বলেন, সরকার কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহের পরিমাণ বাড়ানোর ঘোষণার পরই হাওরের গ্রামে গ্রামে পাইকাররা ধান কিনতে বেরিয়ে পড়ছে। এরা মূলত এক শ্রেণির সুবিধাবাদী দালাল কৃষক এবং মিল মালিকদের প্রতিনিধি। সরকারি ঘোষণার পর গুদামে ধান দিতেই তারা কৃষকের ভাঁড়ার শূন্য করতে চাচ্ছে।
হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় বলেন, আমাদের হাওরে এবার উৎপাদন অনুপাতে ধানের বরাদ্দ ছিল একেবারেই কম। আমরা বরাদ্দ বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলন করেছি। সরকার বরাদ্দ বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। এখন শুনতে পাচ্ছি দালাল ফড়িয়ারা গ্রামে গ্রামে গিয়ে কৃষকদের প্রলোভিত করে কম দামে ধান কিনে নিয়ে আসছে। তারা মূলত গুদামে বেশি দামে ধান দিতেই এটা করছে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, আমরা কৃষকদের দাবির প্রেক্ষিতে ধানের বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য একাধিকবার লেখালেখি করেছি। অবশেষে সরকারি ঘোষণায় কৃষকদের সঙ্গে আমরাও খুশি। দালাল ও ফড়িয়াদের দমন করে প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকেই লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ধান কেনা শেষ করব আমরা।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com