থানায় অভিযোগ করতে গেলে অভিযোগ করতে যাওয়া লোককে অপমানিত হয়ে ফিরতে হয়। এমন অদ্ভুত কা-কারখানা পৃথিবীর কোন কোন দেশে ঘটে তার যথাযথ পরিসংখ্যান আমাদের জানা নেই। তবে আমরা পত্রিকার সংবাদ থেকে জানতে পারছি যে, বাংলাদেশে এমন ঘটনা ঘটে থাকে। গতকালের দৈনিক সুনামকণ্ঠের একটি সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ‘অভিযোগ ওঠে, সহপাঠীর সহায়তায় অপহরণের পর বর্ষাকে ধর্ষণ করে প্রতিবেশী বখাটে মুকুল হোসেন। এ নিয়ে থানায় অভিযোগ করতে গিয়ে অপমানিত হন বর্ষার বাবা। থানায় আইনি সহায়তা না পাওয়ার পর থেকে বর্ষাকে নিয়ে বিভিন্ন লাঞ্ছনা-গঞ্জনা শুরু হয়। সমাজের মানুষের নেতিবাচক মন্তব্য আর একপাক্ষিকভাবে ভুক্তভোগী ছাত্রীকে দায়ী করায় বিষিয়ে ওঠে বর্ষার মনও; যা সইতে না পেরে গত ১৬ মে চিরকুট লেখে নিজ ঘরে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন।’
দেশের ভেতর প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ঘটনা ঘটেই চলেছে এবং এটাই স্বাভাবিক। এরমধ্যে হরহামেশা এমন সব ঘটনা ঘটে যে-গুলোর সঙ্গে আইনি কারণে থানার সম্পৃক্ততা বা তৎপরতা প্রদর্শন একান্ত অপরিহার্য এবং কোনও কোনও ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে থানার নির্লিপ্ততা প্রদর্শিত হলে সে-বিষয়ে প্রশ্নের সম্মুখিন হয়ে থানা কর্মকর্তাকে সংশ্লিষ্ট ঘটনায় অভিযোগ না-পাওয়ার কারণ উল্লেখ করতে দেখা যায়। অর্থাৎ লোকজনকে প্রাথমিক পর্যায়ে থানায় অভিযোগ করতে হয়।
কিন্তু বাস্তবতা অন্য কথা বলে। অভিযোগ নিয়ে গেলে অভিযোগ নথিভুক্ত না করার একটি সংস্কৃতির চর্চা আছে আমাদের থানা প্রশাসনে। এটা একটি সর্ববাদীসম্মত সমাচার। থানা প্রশাসন কর্তৃক অভিযোগ কেবল প্রত্যাখ্যাত হয় না, বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে অভিযোগকারীকে কোনও পাত্তা না দিয়ে প্রকারান্তরে অপদস্ত কিংবা হয়রানি করা হয় এবং কার্যত কিংবা কার্যক্ষেত্রে প্রশাসনকে সুশাসনের প্রতিবন্ধক রূপে প্রতিপন্ন করা হয়। মানুষের স্বাভাবিক কাণ্ডজ্ঞান অন্তত এই বলে যে, এইরূপ অপসংস্কৃতির চর্চা সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, এ সবের চর্চা বন্ধ করা উচিত। তাছাড়া এবংবিধ কর্মকাণ্ড থানার মহৎ ভাবমূর্তিকে কদর্য করে তোলে এবং থানা মানুষের কাছে পুলিশের জনবান্ধবতার প্রতিমূর্তি প্রকাশিত না হয়ে পুলিশ ভয়ের উৎস হয়ে ওঠে। আমাদের প্রশ্ন হলো, এমতাবস্থায় কী করণীয়। প্রশাসন তার উত্তর দেবেন কি? আইনি কিংবা প্রশাসনিক যে-সহায়তার পাওয়ার কথা ছিল, ধর্ষিতা বর্ষা ও তার অভিভাবকরা সে-সহায়তাটি পেলেন না কেন? সহায়তা না পেয়ে বর্ষা আত্মহত্যা করেছে। আসলে এই আত্মহত্যার প্ররোচক কে? এর উত্তর ও প্রতিকার কি প্রশাসনের কাছে বর্র্ষার অভিভাবকরা চাইতে পারেন না?