পত্রিকান্তরে প্রকাশ, বাংলাদেশের বর্তমান রাষ্ট্রব্যবস্থায় শিক্ষা খাত নিয়ে কোনও ‘মাস্টার প্ল্যান’ এখনও পর্যন্ত পরিলক্ষিত নয়, অর্থাৎ নেই। বলা হচ্ছে, ‘শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন- শিক্ষা খাত নিয়ে কোনো মহাপরিকল্পনা নেই সরকারের। সরকার বা মন্ত্রী পরিবর্তন হলে পরিবর্তন হয় পাঠ্যবই। এছাড়াও কারণে-অকারণে বছর বছর পাঠ্যবইয়ের কনটেন্টে আসে পরিবর্তন। দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা না থাকায় ঘনঘন পাল্টাচ্ছে পরীক্ষা পদ্ধতি। একটি পদ্ধতি ঠিকমতো কার্যকর না হতেই আবার আসছে নতুন পদ্ধতি। শিক্ষক শিক্ষার্থীরা ঠিকভাবে এসব পদ্ধতি রপ্ত করার আগেই আবার আসছে নতুন সিদ্ধান্ত।’ পত্রিকার এই ভাষ্য থেকে একটি বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা জন্মে যে, বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা একটি অপরিকল্পিত ব্যবস্থাপনার উপর নির্ভর করে এগিয়ে চলার পরিবর্তে এক ধরনের পিছিয়ে পড়ার ব্যবস্থাপনাকে ধারণ করে আছে। কোনও দুুর্মুখ যদি এই ‘অপরিকল্পিত পরিকল্পনা’টিকে পরিকল্পিত বলতে কসুর না করেন, তখন তাঁর এই ভাষ্যের অর্থ দাঁড়াবে অপরিকল্পিত পরিকল্পনাটিই সমাজরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রকদের পরিকল্পিত ও একান্ত কাক্সিক্ষত। এমন দুর্মুখ ভাষ্যকারকে আমরা দোষারোপ করার কোনও যৌক্তিক তাৎপর্য বিদ্যমান আছে বলে মনে করি না। আমাদের মনে হয়, বর্তমান মুনাফাভিত্তিক মুক্তবাজার নির্ভর আর্থসামাজিক ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থেই শিক্ষাব্যবস্থাকে পত্রিকার ভাষ্যানুসারে ‘শিশু কিশোররা গিনিপিগে পরিণত হয়’ এমন একটি পরিকল্পিত পদ্ধতিতে পরিচালনা করা হচ্ছে। কারণ শিক্ষা ব্যবস্থাকে বিজ্ঞানভিত্তিক ও সমাজবিদ্যানুসারে বাস্তবানুগ কারিগরিবিদ্যানির্ভর করে তুললে বর্তমান আর্থব্যবস্থা অচিরেই অনিবার্যভাবে ভেঙে পড়ার অবস্থায় পর্যবশিত হবে। কারণ বর্তমান আর্থব্যবস্থার মূল চাবিকাঠি হলো কোনও না কোনওভাবে জনগণকে শোষণ করা, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। জনগণ কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত হলে আর্থনীতিকভাবে তারা স্বনির্ভর হয়ে উঠবে এবং শিক্ষিত হওয়ার কারণে শোষিত হওয়াকে প্রতিরোধ করার শক্তিতে শক্তিধর হয়ে উঠবে। জনগণ একটি স্বনির্ভর অবস্থায় গিয়ে উপনীত হোক বর্তমান সমাজপতিদের কাছে সেটা কিছুতেই কাম্য নয়। তাই তারা কুদরতে খোদা শিক্ষাকমিশনের কার্যক্রম চালু করতে কখনোই সম্মত হননি, সেটাকে বাঁয়ে ঠেলে বার বার এমন শিক্ষাব্যবস্থা চালু রাখার পক্ষে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন যে, যে-শিক্ষাব্যবস্থায় প্রকারান্তরে ‘শিশু কিশোররা গিনিপিগে পরিণত হয়’ এবং কিছুতেই প্রকৃত বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে না পরে। সমাজপতিরা বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থাকে ভয় করেন। তাই যেখানে শিক্ষাব্যবস্থাকে পাল্টিয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থায় রূপান্তরিত করা উচিত সেখানে সেটা না করে বরং সেটা থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার জন্যে বার বার যা করা হচ্ছে পত্রিকার প্রতিবেদনে তাকে বর্ণনা করা হচ্ছে ‘ঘন ঘন পাল্টাচ্ছে পরীক্ষা পদ্ধতি’ বলে। এ বিষয়ে আর অধিক কীছু বলা আপাতত সমীচীন বোধ করছি না। কেবল বলি, পরীক্ষা পদ্ধতি পাল্টানো কোনওভাবেই শিক্ষা পদ্ধতি পাল্টানোর নামান্তর হতে পারে না। আমাদের চাই শিক্ষা পদ্ধতিকেই পাল্টানো হোক। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে, শিক্ষাব্যবস্থাও এগিয়ে যাবে। যারা এটিকে ঠেকিয়ে রাখার ব্যর্থ প্রচেষ্টায় নিরত আছেন দয়া করে তারা এবার নিরস্ত হোন।