সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
আদালতের আদেশ সত্ত্বেও ৫২টি মানহীন পণ্য বাজার থেকে সরিয়ে না নেওয়ায় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে তলব করেছেন হাইকোর্ট। আগামী ১৬ জুন তাকে হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করেছেন আদালত। এক আবেদনের শুনানি নিয়ে বৃহ¯পতিবার বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শিহাব উদ্দিন খান। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ফরিদুল ইসলাম ও বিএসটিআই এর পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার এম আর হাসান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেছুর রহমান।
শুনানির সময়ে আদালত নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, পণ্য জব্দ ও প্রত্যাহার করতে আদেশ দেওয়া হয়েছিল। আপনারা একটি মসলার প্যাকেটও জব্দ করতে পারেননি। ভদ্রতার একটি সীমা আছে। ভদ্রতাকে দুর্বলতা মনে করবেন না। আপনারা চিঠি দিয়েছেন, অনুরোধ করেছেন, কিন্তু পণ্য জব্দ বা প্রত্যাহারের ব্যবস্থা নেননি। ইস্কাটনের অফিসের পাশে ১৭ জন (মোট জনবল) ম্যাজিস্ট্রেট-পুলিশ মিলে একটি পণ্যও জব্দ করতে পারলেন না? আপনাদের অফিস রাখার দরকার কী? ভয় পাচ্ছেন? বড় বড় ব্যবসায়ী (পণ্য উৎপাদনকারী) কী করে ফেলেন বা কী করবেন। এমনটি হলে চাকরি করার দরকার কী?
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের আইনজীবীর উদ্দেশে আদালত আরও বলেন, ঘরে গিয়ে রান্নাবান্নার কাজ শুরু করে দেন। নতুবা ব্যাংকে গিয়ে কেরানির চাকরি করতে বলেন। বসে বসে টাকা গুনবেন, টাকার হিসাব রাখবেন।
বৃহস্পতিবার ধার্য তারিখে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষে আইনজীবী ফরিদুল ইসলাম ও ভোক্তা অধিকারের পক্ষে আইনজীবী কামরুজ্জামান কচি পৃথক প্রতিবেদন দাখিল করেন। আদালত নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের দাখিল করা প্রতিবেদনে সন্তুষ্ট হতে পারেননি।
আদালত এও বলেছেন, হাইকোর্টকে কি হাইকোর্ট দেখাচ্ছেন? আমরা এগুলো বুঝি। বিভিন্ন অজুহাত দিয়ে সরে সরে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। সোজা না বলে বাঁকাভাবে বলছেন। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের আইনজীবী জানান, তিনি রাতে নির্দেশনা বাস্তবায়ন বিষয়ক প্রতিবেদন পেয়েছেন। এই আইনজীবীকে আদালত বলেন, ‘আরেকটা অজুহাত দিলেন।’ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কার্যক্রম সংক্রান্ত প্রতিবেদনে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে আদালত বলেছেন, ‘আমরা আশা করব বছর জুড়ে প্রতিষ্ঠানটি এমন কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে।’
এর আগে গত ১২ মে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্স অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) পরীক্ষায় প্রমাণিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৫২টি ভেজাল ও নি¤œমানের পণ্য বাজার থেকে দ্রুত প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এবং জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরকে এ নির্দেশ পালন করে ১০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেন আদালত। পাশাপাশি পণ্যগুলোর বিষয়ে যথাযথ আইন অনুসারে তা নি®পত্তি করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এছাড়াও সংশ্লিষ্ট ভেজাল পণ্যের মানোন্নয়ন না হওয়া পর্যন্ত তা উৎপাদন ও বাজারজাত বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু আদালতের সেই আদেশ প্রতিপালন না করায় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে তলব করলেন হাইকোর্ট।
প্রসঙ্গত, গত ৩ মে ও ৪ মে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, বিএসটিআই সম্প্রতি ২৭ ধরনের ৪০৬টি খাদ্য পণ্যের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে। এর মধ্যে ৩১৩টি পণ্যের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে, যেখানে ৫২টি প্রতিষ্ঠানের পণ্য নি¤œমানের ও ভেজাল রয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের এ রিপোর্ট প্রকাশ করে বিএসটিআই।
সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর ভেজাল খাদ্যপণ্য হলো- সিটি ওয়েলের সরিষার তেল, গ্রিন ব্লিচিং এর সরিষার তেল, শমনমের সরিষার তেল, বাংলাদেশ এডিবল ওয়েলের সরিষার তেল, কাশেম ফুডের চিপস, আরা ফুডের ড্রিংকিং ওয়াটার, আল সাফির ড্রিংকিং ওয়াটার, মিজান ড্রিংকিং ওয়াটার, মর্ন ডিউয়ের ড্রিংকিং ওয়াটার, ডানকান ন্যাচারাল মিনারেল ওয়াটার, আরার ডিউ ড্রিংকিং ওয়াটার, দিঘী ড্রিংকিং ওয়াটার, প্রাণের লাচ্ছা সেমাই, ডুডলি নুডলস, শান্ত ফুডের সফট ড্রিংক পাউডার, জাহাঙ্গীর ফুড সফট ড্রিংক পাউডার, ড্যানিশের হলুদের গুঁড়া, প্রাণের হলুদ গুঁড়া, ফ্রেশের হলুদ গুঁড়া, এসিআইর ধনিয়ার গুঁড়া, প্রাণের কারি পাউডার, ড্যানিশের কারি পাউডার, বনলতার ঘি, পিওর হাটহাজারী মরিচ গুঁড়া, মিষ্টিমেলা লাচ্ছা সেমাই, মধুবনের লাচ্ছা সেমাই, মিঠাইর লাচ্ছা সেমাই, ওয়েল ফুডের লাচ্ছা সেমাই, এসিআইর আয়োডিন যুক্ত লবণ, মোল্লা সল্টের আয়োডিন যুক্ত লবণ, কিং- এর ময়দা, রূপসার দই, মক্কার চানাচুর, মেহেদীর বিস্কুট, বাঘাবাড়ীর ¯েপশাল ঘি, নিশিতা ফুডস এর সুজি, মঞ্জিলের হলুদ গুঁড়া, মধুমতির আয়োডিন যুক্ত লবণ, সান ফুডের হলুদ গুঁড়া, গ্রিন লেনের মধু, কিরণের লাচ্ছা সেমাই, ডলফিনের মরিচের গুঁড়া, ডলফিনের হলুদের গুঁড়া, সূর্যের মরিচের গুঁড়া, জেদ্দার লাচ্ছা সেমাই, অমৃতের লাচ্ছা সেমাই, দাদা সুপারের আয়োডিন যুক্ত লবণ, মদিনার আয়োডিন যুক্ত লবণ এবং নূরের আয়োডিন যুক্ত লবণ।