1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০২:২৬ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

বোরো ফলন : কৃষি বিভাগের প্রতিবেদনে চিটায় ক্ষতির তথ্য নেই!

  • আপডেট সময় বুধবার, ২২ মে, ২০১৯


শামস শামীম ::

চলতি বোরো মওসুমে বিআর-২৮ ধানে প্রায় ২৫ ভাগ ফসলের ক্ষতি হয়েছে বলে মনে করেন কৃষক সংগঠনের নেতারা। বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর নিয়ে বিস্তৃত আঙ্গারুলি হাওরে প্রায় ৭০ ভাগ জমি চিটায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যান্য হাওরেও অধিকাংশ কৃষক এ কারণে জমিতে কাস্তে লাগাতে পারেননি। ধান পাকার শুরুতে যারা আগাম বিআর-২৮ ধান লাগিয়েছিল, তাদের ক্ষেত চিটায় আক্রান্ত হওয়ার কথা স্বীকার করেছিল কৃষি বিভাগ। এখন মওসুম শেষে কৃষি বিভাগ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে পাঠানো প্রতিবেদনে চিটার ক্ষয়-ক্ষতির চিত্র গোপন করে সরকারি দফতরে প্রতিবেদন পাঠিয়েছে। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কৃষক নেতারা। তারা জানান, চিটায় ক্ষতির চিত্র গোপন করায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হবেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মতে চলতি বোরো মওসুমে জেলায় প্রায় ২ লাখ ২৪ হাজার ৪৪০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। বিআর-২৮ ধান চাষ হয়েছে ৮৩ হাজার ৭৭০ হেক্টর। আগাম ফলে কৃষি বিভাগের এমন প্রচারণায় হাওরের কৃষকরা এই জাতের ধান চাষ করে থাকেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, গত বছর নদ-নদী খননের ফলে হাওরের পানি আগাম নেমে যাওয়ায় কৃষকরা মওসুম শুরুর অন্তত ১০দিন আগে বিআর-২৮ ধান লাগিয়েছিলেন। এ কারণেই চিটায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কৃষক, এমন কথা ধান পাকার আগে সাংবাদিকদের জানিয়েছিল কৃষি বিভাগ। এবছর বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়াই প্রায় পুরো ফসল গোলায় তোলতে পেরেছেন কৃষক। তবে দিরাই, শাল্লা ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায় শিলাবৃষ্টিতে বেশ কিছু জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই তিন উপজেলায় প্রায় ৫০০ হেক্টর জমির ধান শিলায় ক্ষতির কথা বলা হলেও বেসরকারি হিসেবে এর পরিমাণ প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর। এদিকে সুনামগঞ্জ সদর, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, জামালগঞ্জ উপজেলাসহ অন্যান্য উপজেলায়ও বিআর-২৮ ধানে চিটায় কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কৃষক।
জানা গেছে, মওসুম শেষে গত ১৯ মে সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ হাওরের বোরো উৎপাদনের প্রতিবেদন পাঠিয়েছে ঢাকায়। এই প্রতিবেদনে চিটা ও শিলায় ক্ষয়-ক্ষতির চিত্র লুকানো হয়েছে। সুনামগঞ্জ কৃষক সংহতির মাঠ প্রতিবেদনে চিটায় প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। বিশেষ করে তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নিয়ে বিস্তৃত আঙ্গারুলি হাওরেই ৭০ ভাগ জমির ধান চিটায় নষ্ট হয়েছে বলে সূত্র জানায়। ওই হাওরে চিটায় ক্ষতিগ্রস্ত অধিকাংশ কৃষকই ধান কাটতে পারেননি।
কৃষকরা জানান, আঙ্গারুলি হাওরের কৃষকরা গত তিন বছর ধরে ফসল পাচ্ছেন না। প্রাকৃতিক দুর্যোগ তাদের পিছু ছাড়ছেনা। ২০১৭ সনে আগাম বন্যায় ফসলডুবিতে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ২০১৮ সালে ব্লাস্টের কারণে হাওরের সম্পূর্ণ ফসল নষ্ট হয়েছে। ২০১৯ সনে চিটায় ৭০ ভাগেরও বেশি জমির ধান নষ্ট হয়েছে। ফলে জমির মালিকেরা জমি নিজে চাষ না করে বর্গা দিয়ে দিচ্ছেন। বর্গাচাষীরাও টানা ক্ষতির কারণে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। সরকারি হিসেবে আঙ্গারুলি হাওরে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার হেক্টর জমিতে ধান উৎপাদন হয়ে থাকে।
তাহিরপুর উপজেলার বালিজুরি গ্রামের স্কুল শিক্ষক এনামুল হক বলেন, আমার ৩৩ বিঘা জমি প্রান্তিক কৃষকরা আবাদ করেছিলেন। সব মিলিয়ে তাদের প্রায় ২ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। আমাকে কোন কৃষক ধান দিতে পারেনি। কারণ তারা নিজেরাই চিটার কারণে ধান কাটতে পারেনি। এই কৃষকরা এবার নিঃস্ব হয়েছেন। সরকারি কোন ক্ষতিপূরণ তালিকায় তাদের নাম আসেনি। এনামুল বলেন, আঙ্গারুলি হাওরের প্রায় ৭০ ভাগ জমি চিটায় নষ্ট হয়েছে। এই তথ্যও যদি সরকারি প্রতিবেদনে না আসে তাহলে কোথায় দাঁড়াবে কৃষক।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার আঙ্গারুলি হাওরের আঙ্গারুলি গ্রামের বর্গাচাষী যুগল বিশ্বাস বলেন, আমি ১২ বিঘা জমি বর্গাচাষ করেছিলাম। আমার খরচ হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার টাকা। চিটার কারণে ১০ হাজার টাকার ধানও তোলতে পারিনি। আমি নিজেও নিঃস্ব। মালিককেও কিছু দিতে পারিনি। মালিককে ক্ষেতে এনে ধান দেখানোর পর তিনিও চিটায় ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষেত দেখে আফসোস করেছেন।
একই হাওরের তাহিরপুর উপজেলার মেঞ্জেরগাঁও গ্রামের কৃষক আব্দুল হাই একজন বর্গাচাষী। তিনি ১২ বিঘা জমিতে বর্গাচাষ করেছিলেন। লাগিয়েছিলেন বিআর-২৮ ধান। তার প্রায় ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। চিটার কারণে তার ক্ষেতের ৭০ ভাগের বেশি ধান নষ্ট হয়েছে। তিনি মাত্র ৩৬ মণ ধান তোলতে পেরেছেন। তার মতো অবস্থা এই হাওরের সকল কৃষকের বলে জানান তিনি। তিনি ধান পাকার আগে লালচে হওয়া দেখে কৃষি বিভাগের কাছে আসলেও কোন সহযোগিতা পাননি বলে জানান।
সুনামগঞ্জ কৃষক সংহতির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট রুহুল তুহিন বলেন, পেশাগত কারণে অনেক কৃষকের সঙ্গে প্রতিদিনই দেখা হয়। ফসলের খবর জানতে চাইলেই তাদের চোখ মুখ অন্ধকার দেখেছি। তারা জানিয়েছেন বিআর-২৮ ধান তাদের সর্বনাশ করেছে। ২৫-৩০ ভাগ ধান চিটায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আঙ্গারুলি হাওরে চিটার কারণে ধানই কাটতে পারেননি কৃষক। আমাদের পরিসংখ্যানে জেলায় প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান চিটায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের সিনিয়র সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান বলেন, যারা বিআর-২৮ ধান লাগিয়েছেন তাদের সবাই কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এর আগেরবারও বিআর-২৮ ধানে ব্লাস্টের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কৃষক। এই বীজে সমস্যা আছে কি না গবেষণা প্রয়োজন। তিনি বলেন, অনেক কৃষকতো চিটার পরিমাণ বেশি থাকায় ক্ষেতে কাস্তেই লাগাতে পারেননি। ক্ষতির এই প্রতিবেদন কার স্বার্থে কৃষি বিভাগ লুকিয়েছে। এদের জবাবদিহিতা প্রয়োজন।
এদিকে মওসুমের শুরুতে চিটায় জমি আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করেছিল কৃষি বিভাগ। বিভিন্ন পত্রিকা ও টিভিতে সংশ্লিষ্টরা বক্তব্য দিয়ে ঘটনা স্বীকার করেছিলেন। আগাম চাষ ও মওসুমে কোল্ড ইনজুরি এবং কম তাপমাত্রার কারণে বিআর-২৮ ধানে চিটা দেখা দিয়েছিল বলে জানানো হয়েছিল। ধান পাকার আগে কৃষি বিভাগ চিটায় ক্ষতির বিষয়টি স্বীকার করলেও ধান কাটা শেষে চিটায় ক্ষতির বিষয়টি প্রতিবেদনে রহস্যজনক কারণে উল্লেখ করেনি তারা।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. বশির আহমেদ সরকার বলেন, গত ১৯ মে আমরা সর্বশেষ বোরো ধানের রিপোর্ট পাঠিয়েছি। এতে চিটায় ক্ষতির কোন তথ্য নেই বলে তিনি স্বীকার করেন। তবে চিটায় কিছু এলাকায় কিছু কৃষকের ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তিনি।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com