বিশেষ প্রতিনিধি ::
সুরমা নদীতে বালু ও পাথরবাহী নৌকায় চাঁদা উত্তোলন নিয়ে দুই পক্ষের বন্দুকযুদ্ধে একজন নিহত এবং ওসিসহ চার পুলিশ গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হলেও ঘটনার ছয়দিন পরও অবৈধ অস্ত্র ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা দায়ের হয়নি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন ওইদিন রাতে জেলা আওয়ামী লীগ নেতা শামীম চৌধুরীর পক্ষে বরখাস্তকৃত ইউপি চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিন সাহেলের নেতৃত্বে এক পক্ষ এবং কালাম চৌধুরীর পক্ষের আওয়ামী লীগ নেতা শাহীন চৌধুরীর নেতৃত্বে আরেক পক্ষ বন্দুকযুদ্ধে লিপ্ত হয়। প্রায় আধা ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে উভয়পক্ষের গুলাগুলিতে তটস্থ ছিল এলাকা। এক অজানা আতঙ্ক ছিল ছাতক পৌরবাসীর মধ্যে। সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে ওসিসহ ৮জন আহত হয়। এর মধ্যেই ওসিসহ চারজনই ছিলেন গুলিবিদ্ধ। সংঘর্ষে অন্তত ৩০ জন গুলিবিদ্ধসহ অর্ধশত আহত হয়। গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান পৌর শ্রমিক লীগ নেতা সাহাবুদ্দিন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছিলেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এর কয়েক বছর আগে ছাতক শহরে আওয়ামী লীগ-বিএনপি’র মধ্যেও বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেছিল। আওয়ামী লীগের ওই পক্ষ প্রকাশ্যে মাথায় হেলমেট পরে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিয়েছিল শহরে।
পুলিশ জানায়, সংঘর্ষের ঘটনায় তিনটি পৃথক মামলা হয়েছে। পুলিশ এসল্ট মামলা, হত্যা মামলা ও বিস্ফোরক আইনে মামলা। তবে অবৈধ অস্ত্র ব্যবহৃত হলেও এখনো এ বিষয়ে কোনো মামলা হয়নি। অস্ত্র উদ্ধার হলেই মামলা হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বরখাস্তকৃত ইউপি চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিন সাহেল পুলিশের পরোয়ানাভুক্ত একজন আসামি। ঘটনার দিন বিকেলে সে নদীতে চাঁদাবাজি নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে প্রতিপক্ষকে হুমকি ধমকি দেয়। রাতে তার নেতৃত্বেই শামীম চৌধুরীর অনুসারীরা একাধিক বন্দুকসহ মাঠে নামে। খবর পেয়ে কালাম চৌধুরীর অনুসারী শাহীন চৌধুরী ও কাউন্সিলর তাপসের লোকজনও অস্ত্র নিয়ে মাঠে নামে। সংঘর্ষের সময় উভয়পক্ষের কাছে একাধিক বন্দুক ছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে থানার ওসি মোস্তফা কামালসহ ৪জন গুলিবিদ্ধ হন। আহত হন আরো ৪ পুলিশ। এছাড়াও গুলিবিদ্ধ হয়ে অন্তত ৩০ জন আহত হন। সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান শ্রমিক লীগ কর্মী সাহাবুদ্দিন।
৬দিন আগে প্রকাশ্য বন্দুকযুদ্ধে হতাহতের ঘটনা ঘটলেও এখনো কোন অস্ত্র উদ্ধার সম্ভব হয়নি। এ ঘটনায় কোন মামলাও হয়নি। তবে বিস্ফোরক আইনে একটি মামলা হয়েছে।
এদিকে দুই পক্ষের অস্ত্রের ঝনঝনানিতে তটস্থ পৌরবাসী এখনো আতঙ্কে আছেন। দুই পক্ষই ছাতকের সবচেয়ে প্রভাবশালী থাকায় কেউ তাদের ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পাননা। দুই পক্ষের লোকদের কাছে সাধারণ নিরীহ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা প্রায়ই হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হন এমন অভিযোগ আছে। এবারও তারা ভয়ে আছেন। বিশেষ করে প্রত্যক্ষদর্শীরা মুখ খুললে তাদের বিপদ হবে এমন হুমকিও দেওয়া হয়েছে। এলাকাবাসীদের মতে দুই পক্ষের কাছেই বিপুল অবৈধ অস্ত্রের মজুদ আছে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক বলেন, বন্দুকযুদ্ধের সময় আমরা খুব ভয়ে ছিলাম। প্রায় আধা ঘণ্টা দুই পক্ষের মধ্যে গুলাগুলি চলেছে। পুলিশ এসেও গুলিতে আক্রান্ত হয়েছে। সবার চোখের সামনে অস্ত্রের ঝনঝনানি দেখা গেলেও এখনো অস্ত্র উদ্ধার না হওয়াটা আমাদের জন্য বিপদের।
ছাতক থানার ওসি (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম বন্দুকযুদ্ধের ঘটনার কথা এবং ওসিসহ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হওয়ার কথা স্বীকার করলেও এখনো অবৈধ অস্ত্র ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে কোন মামলা হয়নি বলে জানান। তিনি বলেন, অস্ত্র উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। অস্ত্র উদ্ধার হলেই মামলা হবে।