২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে সুনামগঞ্জের হাওরে ১৩ লক্ষ ১২ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়েছে। এই অর্থ বছরে কৃষকদের উৎপাদিত ধান থেকে মাত্র ৬ হাজার ৫০৮ মেট্রিক টন ধান নিবে সরকার। যা উৎপাদনের তুলনায় অতি নগণ্য। কৃষক পরিবার প্রতি মাত্র সাড়ে ১৮ কেজি ধান, যার আর্থিক মূল্য মাত্র ৪৮৩ টাকা সরকারকে দিতে পারবে কৃষক। এটা কৃষকদের প্রতি প্রহসন ছাড়া আর কিছুই নয়। অবিলম্বে কৃষকদের কাছ থেকে সংগৃহিত ধানের পরিমাণ বাড়িয়ে হয়রানিমুক্ত ও সিন্ডিকেটমুক্ত পরিবেশে ন্যায্যমূল্যে ধান সংগ্রহ করতে হবে। তাছাড়া কৃষকদের প্রতি বৈষম্য কমিয়ে কৃষকদের শ্রমঘামে ফলানো বোরো ধানের ন্যায্যমূল্য প্রদানের নিশ্চয়তা দিতে হবে।
আমরা জানি, কঠোর পরিশ্রম করে কৃষক ফসল ফলায়, কিন্তু তারা উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য দাম পায় না। ধান থেকে শুরু করে শাকসবজিসহ প্রতিটি ফসলেরই ন্যায্য দাম থেকে কৃষক বঞ্চিত হয়। কৃষক যাতে তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য দাম পায় তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। আর এর জন্য কৃষিজাত পণ্য বাজারজাতকরণের একটি স্থায়ী ব্যবস্থা ও কার্যক্রম চালু করা উচিত।
এক পরিসংখ্যান থেকে জানাযায়, বর্তমানে দেশে দুই কোটি ৬০ লাখ টন চাহিদার বিপরীতে আউশ, আমন ও বোরো ধান মিলিয়ে ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়িয়েছে প্রায় তিন কোটি ৫০ লাখ টন। কৃষকের অক্লান্ত পরিশ্রম আর অনুকূল আবহাওয়ার কারণে এবার দেশে আউশ, আমন ও বোরো ধানের বা¤পার ফলন হয়েছে। এই বা¤পার ফলনই যেন কৃষকের জন্য কাল হয়ে দেখা দিয়েছে। প্রতি মণ ধানের উৎপাদন খরচ এবং বর্তমানে বিক্রয় মূল্যে আকাশ-পাতাল ব্যবধান। সরকারের পক্ষ থেকে সংগ্রহ মূল্য এক হাজার ৪০ টাকা ধার্য করা হলেও কৃষক এই মূল্য পাচ্ছে না। মেহনতের ফসল বিক্রি করতে গিয়ে কৃষক নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। অনেক কৃষক ধার পরিশোধ করতে কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। এক শ্রেণির অসাধু, অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ী ও দালালচক্র কৃষকের এই অসহায় অবস্থার সুযোগ নিচ্ছে। কৃষি ও কৃষকের এই দুরবস্থা দেশ ও জাতির জন্য কোনো শুভ লক্ষণ নয়। ধান উৎপাদনে কৃষক উৎসাহ হারিয়ে ফেললে শুধু দেশের অর্থনীতিই দুর্বল হয়ে পড়বে না, দেশ এক চরম খাদ্যসংকটে পড়তে পারে। এ ক্ষেত্রে সরকারকেই কৃষকের পাশে দাঁড়াতে হবে। সরকার নির্ধারিত মূল্যে যাতে প্রকৃত কৃষক ধান, চাল বিক্রি করতে পারে, সে ব্যবস্থা সরকারকেই করতে হবে। দালাল ও ফড়িয়াদের হাত থেকে কৃষি ও কৃষককে বাঁচাতে সরকারকে কঠোর হতে হবে।