গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সাংবাদিক জয়ন্ত সেনকে মৃত ভেবে সন্ত্রাসীরা নির্জন রাস্তায় ফেলে রেখে গেছে। এলাকাবাসী তাঁকে উদ্ধার করে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেন। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং তিনি শঙ্কামুক্ত নন। মোদ্দাকথা সৎ সাংবাদিকতার ‘পুরস্কার’ স্বরূপ তিনি এখন মৃত্যুর সাঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। তাঁর ‘অপরাধ’ তিনি নাবালিকাকে ধর্ষণপ্রচেষ্টা ও গ্রামের স্কুলের জায়গা দখল করে বসতঘর বানানোর প্রতিবাদ করে সংবাদ করেছিলেন। এই মর্মান্তিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সুনামগঞ্জে সাংবাদিকসমাজ মানববন্ধন করেছেন। এই মানববন্ধন থেকে অচিরেই অপরাধীদের ধরে বিচারের সম্মুখীন করার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
হামলার ৩/৪ ঘণ্টা আগে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে জয়ন্ত নিরাপত্তা চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে নিরাপত্তা না দিয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাঁর অফিসার মারফত জয়ন্তকে বিরক্ত না করার জন্য দুষ্কৃতকারীদেরকে জানিয়ে দিয়েছিলেন বলে সংবাদমাধ্যমের কাছে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। সত্যি আমাদের প্রশাসনে উপজেলা পর্যায়ে দায়িত্বপ্রাপ্তদের দায়িত্ব পালনে কর্তব্যনিষ্ঠার নমুনা এমন পর্যায়ে গিয়ে পর্যবশিত হয়েছে যে, তাঁরা এখন কর্তব্য করার নামে দুষ্কৃতকারীদেরকে দুষ্কর্ম না করার জন্যে নিবেদন করে অবগতিকরণ পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন। অন্তত শাল্লা থানায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সন্ত্রাসকে শূন্যসহনশীলতা প্রদর্শন এবং সেই সঙ্গে তথাকথিত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বাস্তবতা এটাই। যে-বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছিল জেলার মানুষ, মাত্র গতক’দিন আগে, সন্ত্রাসীদের হাতে হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের নেতা আজাদ মিয়ার মৃত্যু প্রত্যক্ষ করে। জয়ন্তও আজাদের মতোই হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের একজন নেতা।
আমরা মনে করি, আমাদের পুলিশ প্রশাসন ইচ্ছে করলে অতি অল্প সময়ের মধ্যে দেশ থেকে দুর্নীতি ও সন্ত্রাস নির্মূল করতে পারেন। কিন্তু আমাদের দেশের আর্থসামাজিক ব্যবস্থা ও রাজনীতি এমন নয় যে, আজই দুর্নীতি ও সন্ত্রাসকে নির্মূল করা সম্ভব হবে। যে-যতই নির্মূল করার কথা বলুন না কেন, নির্মূল করা সম্ভব নয়। কারণ নির্মূল করার জন্য যা করা দরকার সেটা করা আপাতত মুক্তবাজার অর্থনীতিকে চালু রেখে সম্ভব নয়। যাঁরা সন্ত্রাস নির্মূলের কথা বলেন, তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই এবং সেই সঙ্গে আমরা আপাতত প্রশাসনের কাছে এইটুকু প্রতিকার কেবল চাই যে, সাধারণ মানুষের উপর থেকে সন্ত্রাসের চাপটাকে এই মাত্রায় কমিয়ে দেওয়া হোক যে, জয়ন্তরা যেনো সৎ সাংবাদিকতার ‘অপরাধে’ এভাবে পথেঘাটে আক্রান্ত হয়ে মরে না যায় বা মৃত্যুমুখে পতিত না হয়। আপাতত এই জগৎসংসারকে এইটুকু বদান্যতা অন্তত করুন।
পরিশেষে বলে যাই, সময় সমাগত। জন্মমৃত্যু নিয়তির অনিবার্য নির্বন্ধ। সব শুরুর একটি শেষ আছে। এই সন্ত্রাস ও অপশাসনেরও একটা শেষ আছে। ব্রিটিশের ও পাকিস্তানের অপশাসন কিন্তু টেকেনি, একদিন নির্মূল হয়ে গেছে। শাল্লায় শাসন ও সন্ত্রাসের এই দোস্তি বেশি দিন টিকবে না। জেলা প্রশাসনের কাছে আমাদের অনেক প্রত্যাশা, এর একটা সঙ্গত নিরসন চাই। সে-প্রত্যাশার বাস্তবায়নের প্রতীক্ষায় রইলাম।