পত্রিকান্তরে প্রকাশ, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার প্রাথমিক পরীক্ষায় চতুর্থ শ্রেণির গণিত বিষয়ের পরীক্ষা গত শনিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু এই পরীক্ষায় প্রশ্নপত্রে ব্যাপক ও কীছুতেই উপেক্ষা করা যায় না এমন ভুল থাকার জন্য পরীক্ষার্থী ও পরীক্ষার্থীর অভিভাবকগণের মধ্যে ক্ষোভের বিস্তার ঘটেছে। বিদগ্ধ মহল মনে করছেন, ভুল প্রশ্নপত্র ছাত্রদের হাতে তোলে দিয়ে সে-ভুল প্রশ্নের দ্বারা পরীক্ষা গ্রহণ করে আসলে ছাত্রদের মেধার কোনও মূল্যায়ন হতে পরে না। এইরূপ পরীক্ষা গ্রহণের দ্বারা ছাত্রদের মেধাবিচারের প্রতিষ্ঠিত পদ্ধতিকেই প্রহসনে পর্যবশিত করা হয়েছে। এছাড়া ভুল প্রশ্ন দিয়ে পরীক্ষাগ্রহণ কোনওভাবেই পরীক্ষা বলে স্বীকৃত হতে পারে না, বরং এটাকে পরীক্ষা না বলে পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে নির্মম প্রহসন বলে অভিহিত করা যায়। এইভাবে প্রহসন করার অধিকার কারও নেই।
প্রশ্নপত্রে বানান কিংবা বিরাম চিহ্নের ভুল কোনও অজুহাতেই বরদাস্ত করা যায় না। যে-প্রশ্নপত্র দিয়ে ছাত্রদের শিক্ষার ভুল-শুদ্ধ নিরূপণ করে তাঁর জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত যোগ্যতার সনদপত্র প্রদান করা হবে তাতেই যদি ভুল থাকে সেটাকে কোন যুক্তিতে পরীক্ষা বলা হবে সেটা কীছুতেই আমাদের বোধগম্য নয়।
সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্তকর্তা প্রশ্নপত্রে ভুল হয়ে যাওয়াকে পাত্তাই দিতে চান না। পত্রিকায় ছাপানো তাঁর ভাষ্যটি হলো, “মুদ্রণজনিত কারণে এই ত্রুটি হয়েছে। এটি হওয়াও দুঃখজনক।” একই বাক্যে যেমন ‘জনিত’ ও ‘কারণ’ শব্দ দু’টির একত্র ব্যবহার আদতেই লোকে অনায়াসে ব্যবহার করে চলেছেন তেমনি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে ভুলকে এমন অনায়াসে ব্যবহারের কারও কোনও অধিকার নেই। মনে রাখতে হবে এটি কোমলমতি শিশুদের মনমানসিকতা ও চরিত্র গঠনের প্রশ্ন। এখানে কোনওরূপ উপেক্ষা, গাফিলতি, দায়িত্বে অবহেলা ক্ষমাহীন অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে বাধ্য। তাছাড়া মুদ্রণপ্রমাদের উপর দায় চাপিয়ে শিক্ষাকর্মকর্তা হিসেবে প্রশ্নপত্র শুদ্ধভাবে ছাপানোর দায় এড়িয়ে যেতে পারা যায় না। প্রশ্নপত্র প্রণয়নে ভুল হতেই পারে, কিন্তু সে ভুল সংশোধনের দায়িত্ব তো কারও না কারও উপর বর্তাবে। যেসব প্রশ্নপত্র শুদ্ধভাবে ছাপা হচ্ছে সেখানে তো স্বাভাবিক মুদ্রণপ্রমাদকে ঠেকানোর দায়িত্ব কেউ না কেউ বহন করছেন এবং যথাযথভাবে পালন করছেন। তা না হলে দেশের সব পরীক্ষার সব প্রশ্নপত্রই তো ভুলে ভরা থাকতো। সেটা তো সব ক্ষেত্রে থাকছে না। তবে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার প্রাথমিক পরীক্ষার চতুর্থ শ্রেণির গণিত বিষয়ের প্রশ্নপত্রে ভুল থাকবে কেন? এর একটাই উত্তর প্রশ্ন ছাপানোর দায়িত্বে যিনি ছিলেন সেটা তাঁর দায়িত্বে অবহেলা, উপেক্ষা ভিন্ন অন্য কীছু নয়। ‘মুদ্রণজনিত কারণে এই ত্রুটি হয়েছে’ বলে দায়িত্ব এড়ানোর কোনও অবকাশ নেই এবং বিষয়টি দুঃখ প্রকাশ করে দায় এড়ানোর মতো হালকা কোনও বিষয়ও নয় বরং কর্তব্য কাজে চরম অবহেলা করে দায় এড়ানোর বাড়তি অপতৎপরতা। কর্তব্য কাজে এমন অবহেলা কিংবা ইচ্ছাকৃত গাফিলতিকে কিছুতেই ছাড় দেওয়া সমীচীন নয় বরং এসব গাফিলতির জন্য সংশ্লিষ্টজনকে বিচারের সম্মুখীন করা উচিত।
একটি বিষয় না বলে পারছি না, বানান ভুল কিংবা বানানের মুদ্রণপ্রমাদকে ‘প্রমাদ’ বলে এড়িয়ে যাওয়া গেলেও একই প্রশ্নের একাধিক বার ছাপা হওয়ার বিষয়টিকে এড়ানো যায় না। ‘একই প্রশ্নের একাধিক বার ছাপা হওয়ার বিষয়টি’ স্বাভাবিকভাবেই প্রমাণ করে যে, মুদ্রিত প্রশ্নপত্রটিকে একবারের জন্যও আগাগোড়া পাঠ করা হয়নি। পাঠ করলেই একটি প্রশ্নের দুইবার ছাপা হওয়ার বিষয়টি ধরা পড়তো। ‘একই প্রশ্নের একাধিক বার ছাপা হওয়ার বিষয়টি’ প্রমাণ করে যে প্রশ্নপত্র ছাপানোর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা চূড়ান্ত গাফিলতির নিদর্শন উপস্থিত করেছেন।