1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:১১ অপরাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

শিক্ষকের মর্যাদা : মোঃ শাহাদত হোসেন

  • আপডেট সময় রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১৯

পৃথিবীর সব দেশে, সব অঞ্চলে, সব যুগে শিক্ষক সমাজে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করেছেন। সমাজ বা রাষ্ট্রের অন্য যে কোন পেশাজীবীর চেয়ে অধিক সম্মান ও মর্যাদা পেয়ে আসছেন। বাংলাদেশ বা বঙ্গীয় অঞ্চলও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে সাম্প্রতিককালে এ অবস্থার অনাকাক্সিক্ষত পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। শিক্ষকরা যেমন নানা কারণে তাদের মর্যাদা হারিয়েছেন, তেমনি অন্য অনেক পেশাজীবীরাও শিক্ষকদেরকে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টায় লিপ্ত আছেন।
এর অনেক কারণ আছে। তবে প্রধান কারণ অবশ্যই অর্থনৈতিক।
বাংলাদেশে বর্তমান সমাজে শিক্ষকরা তেমন মর্যাদাবান নন বা নেতৃস্থানীয়ও নন। প্রশ্ন উঠতে পারে, আগে কি তারা মর্যাদাবান বা নেতৃস্থানীয় ছিলেন? এর উত্তরে অবশ্যই হ্যাঁ বলা যায়। স্বাধীনতা-পূর্ব এবং স্বাধীনতা-উত্তর যুগেও এদেশে শিক্ষকরা বিশেষ মর্যাদার অধিকারী ছিলেন। স্কুল-কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের মর্যাদাতো ছিলই, একজন গৃহশিক্ষক বা টিউটরকেও মানুষ অনেক সম্মান দিতো। মানুষের মধ্যে একটা ধারণা ছিল, ইনি অন্যদের তুলনায় শ্রেষ্ঠ মানুষ। তাই ইনি অন্যকে শিক্ষা দিতে পারছেন বা দিচ্ছেন।
কিন্তু ইন্টারনেট সভ্যতার ঊষালগ্নেই এ ধারণা বদলে যেতে থাকে। এর প্রধান দুটি কারণ হলো: অপেক্ষাকৃত কম মেধাবী ও কম সৃজনশীলদের শিক্ষকতার পেশায় নিয়োজিত হওয়া এবং সর্বোপরি যে-ই শিক্ষক হোন না কেন, তার অর্থিক অনটন অব্যাহত থাকা। বিশেষ করে, আমাদের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশে যেখানে মর্যাদা, সম্মান ও ক্ষমতার মূল উৎস হলো টাকা এবং যেখানে বৈধ-অবৈধ যে কোন উপায়ে টাকা উপার্জনকে ঘৃণা করা হয়না, সেখানে শিক্ষক যে অবহেলার শিকার হবেন তা তো খুবই স্বাভাবিক।
সামাজিক বঞ্চনার সাথে যখন রাষ্ট্রীয় বঞ্চনা এক হয়, তখন সে দেশে, সে সমাজে শিক্ষকদের যে কি দুরবস্থা হয়, তাতো সহজেই অনুমেয়।
বিশেষ করে, কোন দেশ বা অঞ্চলে দুর্নীতি ও লুটপাট যখন স্বাভাবিক বিষয় হয়ে যায়, তখন প্রচলিত রীতিনীতিও অর্থহীন হয়ে পড়ে। এরকম সমাজে ‘জ্ঞানই শক্তি’র চেয়ে ‘মানি ইজ দ্যা সেকেন্ড গড’ বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করে। আর সকল মানুষ, সে যে পেশারই হোক না কেন, সারাক্ষণ শুধু টাকা উপার্জনের কৌশল নিয়েই ব্যস্ত থাকে। আর শিক্ষকদের যেহেতু যে কোন উপায়েই টাকা উপার্জনের সুযোগ থাকে না, তারা অর্থ উপার্জনের দৌড়ে পিছিয়ে পড়ে। এই পিছিয়ে পড়ার কারণে, তার পেশা যত মহানই হোক না কেন, সমাজে তার মর্যাদা ও প্রতিপত্তি কমতে থাকে।
এটা কিন্তু বাংলাদেশের চিত্র। উন্নত, এমনকি অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও শিক্ষকদেরকে আরেকজনের সমান টাকা উপার্জনের জন্যে দৌড়াতে হয় না। কেননা, সমাজ ও রাষ্ট্র তার সামাজিক মর্যাদা বিবেচনা করে আর্থিক স্বচ্ছলতার গ্যারান্টি দেয়। ফলে একজন শিক্ষক অন্য পেশাজীবীর চেয়ে সম্মানই বেশি পান না, বেতন-ভাতাদিও বেশি পান। আর তাই তিনি কোন অন্যায় উপার্জনের দৌড়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রয়োজন বোধ করেন না। উন্নত দেশগুলো, এমনকি আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর চিত্রও তাই। ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশ। এখানকার শিক্ষকরা না পান সামাজিক মর্যাদা, না পান রাষ্ট্রীয় সম্মান (পর্যাপ্ত বেতন)।
দেশের রাজনীতিবিদ, আমলা ও সাধারণ মানুষ হরহামেশাই বলে থাকেন ‘শিক্ষাই জাতির মেরুদ-।’ এ মেরুদ- সবল রাখার দায়িত্ব শিক্ষকের। কিন্তু শিক্ষকের মেরুদ- সোজা না থাকলে জাতির মেরুদ- সোজা ও সবল হবে কি? হবে না। তাই শিক্ষকের মেরুদ- সোজা রাখার জন্যে তাকে সম্মান ও পর্যাপ্ত টাকা-পয়সা দেবার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
সবচেয়ে বড় কথা, আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। অনেকেই ভাবেন, রাষ্ট্রে শিক্ষকের আবার গুরুত্ব কি? রাষ্ট্রে গুরুত্বপূর্ণ হলো রাজনীতিবিদ, প্রশাসক, আমলা, ডাক্তার, পুলিশ ইত্যাদি শ্রেণি-পেশার মানুষ। কিন্তু আমাদের সকলের মনে রাখা দরকার, আমরা রাজনীতিবিদই হই, আমলাই হই আর পুলিশই হই না কেন, আমাদের প্রত্যেককে শিক্ষকের কাছে পড়াশোনা করতে হয়েছে। জীবনে যিনি যত ভালো শিক্ষক পেয়েছেন, তিনি তত বড় রাজনীতিবিদ, তত বড় ডাক্তার, তত বড় ইঞ্জিনিয়ার বা আমলা হতে পেরেছেন। এবং আমরা ক্ষমতার যে চূড়াতেই আরোহণ করিনা কেন, প্রত্যেকে তাদের সন্তানকে শিক্ষকের কাছেই পাঠাই।
আর সে কারণে, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো, অন্যান্য রাষ্ট্রের মতো আমাদের দেশেও শিক্ষকের মর্যাদা ও সম্মান পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। তাদের জন্যে পর্যাপ্ত বেতন-ভাতাদির পাশাপাশি কাক্সিক্ষত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। করতে হবে দেশের ভবিষ্যতের স্বার্থে, নিজের সন্তানের স্বার্থে।
পঞ্চম শ্রেণিতে পড়–য়া আমার নিজের সন্তানের বাংলা বইটি দেখছিলাম। হঠাৎ চোখ পড়লো কাজী কাদের নওয়াজ রচিত ‘শিক্ষাগুরুর মর্যাদা’ কবিতাটির প্রতি। আমরাও ছোটবেলায় এ কবিতাটি পড়েছি। এখনো যে এ কবিতাটি পড়ানো হয়, তা জেনে ভালো লাগলো। পৃষ্ঠা উল্টিয়ে কবিতাটির মূলভাব দেখলাম। সেখানে লেখা আছে, “যে ছাত্র তাঁর শিক্ষককে যথাযথ মর্যাদা দিতে জানে না, শিক্ষকের সেবা করতে জানে না, সে কখনো পরিবার, সমাজ ও দেশের উপযোগী মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে না।”
[লেখক মো. শাহাদত হোসেন, সহকারী অধ্যাপক, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ, গুরুদয়াল সরকারি কলেজ, কিশোরগঞ্জ।]

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com