1. [email protected] : admin2017 :
  2. [email protected] : Sunam Kantha : Sunam Kantha
  3. [email protected] : wp-needuser : wp-needuser
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:০৭ পূর্বাহ্ন
ঘোষণা ::
সুনামগঞ্জ জেলার জনপ্রিয় সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা সুনামকন্ঠে আপনাকে স্বাগতম। আমাদের পাশে থাকার জন্য সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন। আমাদের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন - 01711-368602

কৃষকনেতা আজাদ স্মরণে : একটি হত্যাকাণ্ড, অমীমাংসিত জীবনের খসড়া : রায়হান আফরোজ

  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০১৯

যে লোকটি খুন হলো অথবা যাকে হত্যা করা হয়েছে, নিঃসন্দেহে তার একটি পরিবার আছে। বাবা মা ভাই বোন স্বজনরা আছে। বিয়ে হয়ে থাকলে স্ত্রী আছে। আরেকটু এগোলে সন্তান-সন্ততি।
সদ্য মায়া সমাপ্ত করে পরপার লোকটির ভবিষ্যৎ কোন কিছুই হয়তো আমাদের আর জানা হবে না কোনদিন। যে গেছে সে তো গেছেই। আর যারা বেঁচে আছে! জীবন ঘূর্ণায়মান আমাদের চোখের সামনেই।
শোকের দাফন সম্পন্ন হলে সামাজিক মানুষগুলো ধীরে ধীরে যে যার পথে মুখ ফেরায়। কিছু স্বজন তখনো সান্ত¦নার বুলি আঁটে শোকার্ত বোনটির পাশে। বাবার চোখ অশ্রুশূন্য। বুকফাটা প্রতিশোধের ¯পৃহায় টালমাটাল ভাইটির সর্বগ্রাসী রূপ মায়ের পাথর চোখে অজানা আতঙ্ক ছড়ায়। বাবা সামলে নিতে বলেন। আধো অন্ধকারে ঝাপসা হয়ে ওঠা সন্তানদের বুকে জড়ানো স্ত্রীর মলিন মুখ ডুবে থাকে ভবিষ্যতের এক চরম অনিশ্চয়তায়।
অনিশ্চয়তা পরিবারের আর সবার চোখেও- থানায় মামলা দায়ের হয়েছে! সঠিক তদন্ত হবে কি না! খুনীরা ধরা পড়বে কি না ! ধরা পড়লেও তাদের সঠিক বিচার হবে কি না! টাকা পয়সা খরচাপাতি ইত্যাদি। বিষয়গুলো আরো যৌক্তিক হয়ে ওঠে, যদি মামলার তদন্তে গাফিলতি চোখে পড়ে। কিছু পয়সা ঢালার পরামর্শ আসে স্বজনদের মুখ থেকে। কিন্তু কোথায় কত টাকা দিতে হবে! কোত্থেকে আসবে এসব টাকা! স্বজন হারিয়ে পরিবারটি এমনিতেই যে পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেটুকুই তো বাকি জীবনে পুষিয়ে ওঠা সম্ভব হবে না। কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরিবার কিংবা সমাজের গুরুত্বপূর্ণ মানুষটিই হত্যার স্বীকার হন। আর এসব খুনের নেপথ্যে থাকে কোন না কোন প্রভাবশালী মহলের ইন্দন। যাদের সাথে সব সময় পেরে ওঠা নিহতের পরিবারের পক্ষে প্রায় অসম্ভব।
সাধারণত হত্যাকা-গুলো পরিকল্পিতভাবে সংগঠিত হয়। যার জন্য খুন পরবর্তী প্রস্তুতিটাও হত্যাকারীরা আগেই স¤পন্ন করে রাখে। এদিকে নিহতের পরিবারটি থাকে সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত। হঠাৎ ঘটে যাওয়া হত্যাকা-টি বানের জলে কচুরিপানার মত এলোমেলো করে ফেলে পরিবারটিকে।
সামাজিক দায় থেকেও বা কতটুকু মুক্তি মিলে এদের! কে খুন করল? কেন করল? কোথায়? কিভাবে? কখন? কার জন্য? এসব প্রশ্নের উত্তর যে কতজনের কাছে কতবার দিতে হয় তার ইয়াত্তা নেই। যারা প্রশ্ন করেনা তারা হয়ত অপরিচিত অন্য কাউকে দেখিয়ে বলে- ঐ দ্যাখ ওর ভাইকে মেরে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। অথবা খুন হওয়া লোকটি ঐ মহিলার স্বামী।
এক্ষেত্রে বাচ্চাদের বিব্রত হবার বিষয়টি সত্যি অমানবিক। নিহতের স্কুলপড়–য়া ছেলে কিংবা মেয়েটিকে দেখিয়ে বাচ্চারা যখন এসব কথা বলে তখন তাদের ছলছল চোখের দিকে তাকালে পাষাণের বুকও যেন জলে ভিজে ওঠে। অনেকদিন পর্যন্ত হয়তো তাদের স্কুলে যাওয়াই বন্ধ রাখতে হয়।
খুন হওয়াও যেন তখন একটা বিশাল অপরাধ হয়ে দাঁড়ায় নিষ্ঠুর এই সমাজের চোখে। নিহত মানুষটি যদি নারী হয় তাহলে তো আর কথাই নেই- তার আলোচনা সমালোচনায় হত্যাকা-টি এতোই মুখরোচক হয়ে ওঠে যে অনেক সময় দামী গল্পকেও হার মানায়।
যাক অনেক প্রতিকূল সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও জীবন তবু ছুটে চলে। পুবাকাশে অসীম সাহসী সূর্য্য তার সত্যের রঙ ছড়ায়। হত্যার আসল রহস্য বের হয়ে আসে। এক এক করে অপরাধীরা ধরা পড়ে। আইনের কাঠগড়ায় একদিন তাদের বিচারও হয়। আর সেই বিচারে তাদের প্রাপ্য শাস্তিও তারা পায়। কিন্তু তারপরও কথা থেকে যায়Ñ আজাদ মিয়ারা আর ফিরে আসে না তাঁর পরিবারের কাছে; তাঁর আদরের সন্তানদের কাছে। স্বজনদের চোখে যে অশ্রু তা হয়তো শুকায় কিন্তু বুকের ভেতরে দহনটা রয়ে যায় অনন্তকাল; পরতে পরতে বুক কেঁপে ওঠে নিদারুণ আর্তনাদে…।

শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

© All rights reserved © 2016-2021
Theme Developed By ThemesBazar.Com