চলে গেলেন সাবেক সংসদ সদস্য, আইনজীবী, সাবেক পি.পি., বীর মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক মো. আব্দুল মজিদ। গত ২০ এপ্রিল শনিবার সকাল ৮টা ২৫ মিনিটে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুতে একটি বর্ণাঢ্য অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটল।
প্রয়াত অ্যাড. মো. আব্দুল মজিদ ১৯৮৯ সনের ২৯ মে সুনামগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতিতে যোগদান করেন। সমিতিতে যোগদান করার পর অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি একজন সফল আইনজীবী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। তিনি আইন পেশাকে জনসেবা করার একটি মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। এই সফল আইনজীবী সুনামগঞ্জ জজ কোর্টের পি.পি. হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সুনামগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্যদের সাথে তাঁর হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। প্রয়াত আব্দুল মজিদ ২০১৬ সনে সুনামগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেন।
প্রয়াত অ্যাড. মো. আব্দুল মজিদ একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তিনি ১৯৭১ সনে ৩নং সেক্টরের অধীনে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধে তিনি বিভিন্ন অপারেশনে অংশগ্রহণ করে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রেখেছেন।
মো. আব্দুল মজিদের জীবনের অন্যতম দিক হলো- একজন শিক্ষক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা। তিনি জেলার প্রত্যন্ত এলাকা দোয়ারাবাজারে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য একটি উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। সেই উচ্চ বিদ্যালয়ে তিনি ১৯৭৪ সন হতে ১৯৭৯ সন পর্যন্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দোয়ারাবাজার মহাবিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। আইনজীবী হিসেবে ব্যাপক সফল হলেও অনেকেই প্রয়াত মো. আব্দুল মজিদকে “স্যার” বলে সম্বোধন করতেন। দোয়ারাবাজারে শিক্ষার প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করায় তিনি দোয়ারাবাজারবাসীর নিকট আজীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে অ্যাড. মো. আব্দুল মজিদ সফল ছিলেন। ১৯৯১ সনে নির্বাচনী এলাকা (ছাতক-দোয়ারাবাজার) হতে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সংসদ সদস্য থাকাকালে দোয়ারাবাজার ও ছাতকবাসীর উন্নয়নে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন তিনি। তাঁর প্রচেষ্টায় দোয়ারাবাজার উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। তিনি মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত জাতীয় পার্টির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
প্রয়াত অ্যাডভোকেট মো. আব্দুল মজিদ ছিলেন ব্যক্তি হিসেবে সফল। তিনি যে জায়গায় হাত দিয়েছেন সেই জায়গায় সফলতা অর্জন করেছেন। এমন বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী মানুষই বিদগ্ধ মহলে ক্ষণজন্মা হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকেন। আমি তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
[অ্যাড. আনোয়ার হোসেন, সদস্য, কার্যকরী কমিটি, সুনামগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতি]